পরপর ঘটে যাওয়া বেশ কিছু ঘটনা দেশের শান্তিপ্রিয় মানুষকে কিছুটা হলেও অস্বস্তিতে ফেলে দিয়েছে। অনেকেই বিগত কিছুদিনে দেশে ঘটে যাওয়া কিছু ঘটনায় শুধু বিচলিত বোধই করছেন না, এর পেছনে নানা ধরনের ষড়যন্ত্রের আলামতও খোঁজার চেষ্টা করছেন। কর্মকাণ্ডের শুরুটা হয়েছিল দুর্নীতিবিরোধী অভিযান দিয়ে। ধরা পড়ল বেশ কয়েকজন বড় মাপের কালো টাকার মালিক। এদের বড় পেশা টেন্ডারবাজি, জুয়া, মাদকের ব্যবসা, বিদেশে অর্থপাচার। এদের অনেকেই আওয়ামী যুবলীগের রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত বলে শুরুতে জানা গেছে, দু-একজন আওয়ামী লীগের সঙ্গেও সম্পৃক্ত ছিল। পরে খোঁজ নিয়ে জানা গেল, এদের রাজনৈতিক জন্মটা আওয়ামী লীগের সঙ্গে কখনো হয়নি। কেউ ছিল জামায়াত-বিএনপির ক্যাডার, দু-একজন রাস্তার পাশে মাইক লাগিয়ে সকাল-সন্ধ্যা বঙ্গবন্ধুকে গালাগাল করত, কেউ ফুটপাতের হকার, কেউ বা খালেদা জিয়ার নিরাপত্তাকর্মী, দু-একজন অফিসের পিয়নও ছিল। বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনাকে হত্যাচেষ্টার সঙ্গে জড়িতও ছিল দু-একজন। যেই না আওয়ামী লীগ পরপর তিনবার সরকার গঠন করার বিরল কৃতিত্ব অর্জন করল, এসব রাজনৈতিক পরগাছা রাতারাতি বানের জলে ভেসে আসা খড়কুটোর মতো আওয়ামী লীগে এসে নোঙর করল। তাদের দাপটে পোড় খাওয়া আওয়ামী লীগাররা শুধু কোণঠাসা হয়ে গেল তা-ই নয়, অনেকেই তাদের ধাক্কায় দল থেকেই ছিটকে পড়তে বাধ্য হলো। প্রশ্ন হচ্ছে, বঙ্গবন্ধুর হাতে গড়া দলে ভিড়তে তাদের এই সুযোগটা করে দিলেন কারা? অবশ্যই যাঁরা আওয়ামী লীগের সঙ্গে জড়িত, অথবা বঙ্গবন্ধুকন্যার খুবই আস্থাভাজন তাঁরা। আর এটা বিনা দ্বিধায় বলা যায়, এদের আওয়ামী লীগ বা এর অঙ্গসংগঠনে প্রবেশ স্বাভাবিক ও স্বচ্ছ নিয়মে হয়নি। এসব রাজনৈতিক টোকাইকে দলে প্রবেশটা বেশ চড়া মূল্য দিয়েই হয়েছে। ঠিক এমন একটা পরিস্থিতি তৈরি হয়েছিল স্বাধীনতা-পরবর্তীকালে বঙ্গবন্ধুর শাসনামলে। দুর্নীতি দমন অভিযান যখন শুরু হলো, তখন প্রথমে যে কজন যুবলীগ সদস্যকে আটক করা হলো, তার মধ্যে একজন ছিল যুবলীগ নেতা খালেদ মাহমুদ ভূঁইয়া। আটকের পরপরই যুবলীগের সভাপতি ওমর ফারুক চৌধুরী যে প্রতিক্রিয়াটা ব্যক্ত করলেন তা ছিল খুবই অশোভন, দৃষ্টিকটু এবং অনেকটাই দলের প্রধান শেখ হাসিনাকে চ্যালেঞ্জ করার মতো।
বঙ্গবন্ধুর একজন ঘনিষ্ঠ কর্মকর্তার সঙ্গে আমার পরিচয় ছিল, যিনি পেশায় একজন আমলা ছিলেন। তিনি শুধু একজন সিএসপি অফিসারই ছিলেন না, ছিলেন অসম্ভব উঁচু মেধাসম্পন্ন অফিসার। দেশে ফিরে বঙ্গবন্ধু সরকার গঠনের প্রথম দিন থেকে বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করা পর্যন্ত তিনি বঙ্গবন্ধুর আস্থাভাজন ব্যক্তিগত স্টাফদের একজন ছিলেন। তাঁর কাছ থেকে বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে কাজ করার অনেক অভিজ্ঞতা শোনার সুযোগ আমার হয়েছে, যা অনেকের পক্ষে হয়তো জানা সম্ভব নয়। বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করার পরপরই তিনি দীর্ঘদিনের জন্য দেশত্যাগী হয়েছিলেন। তিনি একদিন আমাকে বলেছিলেন, দেশ ছাড়ার ছয় মাসের মধ্যে তিনি বঙ্গবন্ধুকে দুইবার স্বপ্নে দেখেন। প্রথমবার তিনি দেখেন বঙ্গবন্ধু বেশ চিন্তিত হয়ে বসে আছেন। কয়েক দিন পর তিনি আবার বঙ্গবন্ধুকে দেখেন এবং প্রশ্ন করেন, ‘বঙ্গবন্ধু, এমনটা কেন হলো?’ স্বপ্নে বঙ্গবন্ধু তাঁকে নাম ধরে বলেন, ‘আমি আমার কাছের মানুষগুলোকে চিনতে পারিনি। বুঝতে পারিনি, যাকে বা যাদের আমি খুবই বিশ্বাস করেছি তারা তলে তলে আমার পিঠে ছুরি মারার জন্য প্রস্তুত হচ্ছে।’ ওই ব্যক্তি যখন আমাকে ওই কথাগুলো বলছিলেন, তখন তাঁর চোখ ছলছল করছিল। তখন আমার গজল গায়ক অনুপ জালোটার একটা গজলের কথা মনে পড়ে গেল, যেখানে তিনি গেয়েছেন—‘খঞ্জর সে কারো বাত না, না তালোয়ারকো পুছো, মায় কতল হুয়া কেইছে মেরে ইয়ারসে পুছো।’ (ছোরার সঙ্গে কথা বোলো না, তরবারির কাছে জানতে চেয়ো না, আমি কিভাবে নিহত হলাম, তা আমার বন্ধুর কাছে জানতে চাও)।
প্রধানমন্ত্রী দুর্নীতিবিরোধী অভিযান শুরু করার আগে-পরে বেশ কিছু ঘটনার সূত্রপাত হয়েছে, যা যেকোনো চিন্তাশীল মানুষের কাছে দুর্ভাবনার বিষয় হতে পারে। প্রথমে শুরু হলো কয়েকটি সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে নানা ইস্যুতে উপাচার্যবিরোধী আন্দোলন। আন্দোলনের কারণ নিয়ে তর্ক-বিতর্ক হতে পারে, কেউ কেউ যৌক্তিকতা নিয়েও প্রশ্ন তুলতে পারেন। কিন্তু হঠাৎ করে একাধিক বিশ্ববিদ্যালয়ে এ ধরনের আন্দোলনের সূত্রপাত কেন হলো? আন্দোলনের তোড়ে একজন উপাচার্য এরই মধ্যে পদত্যাগ করেছেন। আগেও বলেছি, শিক্ষার্থীদের সঙ্গে সেই উপাচার্যের আচরণ মোটেও শিক্ষকসুলভ ছিল না। এখনো একাধিক বিশ্ববিদ্যালয়ে এ ধরনের আন্দোলন চলছে। কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়ে পূর্ণকালীন উপাচার্য নেই অনেক দিন ধরে। এর ফলে এসব বিশ্ববিদ্যালয়ে স্বাভাবিক কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে। এর ফায়দা নিচ্ছে অন্য কেউ।
প্রধানমন্ত্রী যখন ভারত সফরে, তখন হঠাৎ করে ঢাকার মোহাম্মদপুরে বাংলাদেশের ইতিহাসে প্রথমবারের মতো বিদ্যুৎ সমস্যা সমাধানের দাবিতে রাস্তায় নেমে এলো জেনেভা ক্যাম্পে আটকে পড়া পাকিস্তানিরা। তারা রাস্তায় আগুন জ্বালায়, পুলিশের সঙ্গে দাঙ্গা-হাঙ্গামা করে। এই পাকিস্তানিদের বাংলাদেশের নাগরিকত্ব দেওয়ার জন্য কয়েক বছর আগে বেশ তৎপর ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন শিক্ষক এবং তাঁর একটা প্রতিষ্ঠান। দেশের উচ্চ আদালতের মাধ্যমে তিনি এই আটকে পড়া পাকিস্তানিদের জন্য বাংলাদেশের নাগরিকত্ব আদায় করেছেন। অথচ এই পাকিস্তানিরা একাত্তরে মোহাম্মদপুরকে বানিয়েছিল এক বিরাট বধ্যভূমি। হঠাৎ করে পাকিস্তানিদের এমন দুর্বিনীত আচরণ কাম্য তো নয়ই; তারা এমন আচরণ করার সাহস পেল কোথায় সেই প্রশ্ন তো করা যেতেই পারে। ঢাকায় ক্যাসিনোর নামে জুয়ার আসর বসানোর দায়ে গ্রেপ্তার করা হলো ক্যাসিনোসম্রাট হিসেবে পরিচিত সম্রাটকে। তারপর বুকে ব্যথার অজুহাতে তাঁকে নেওয়া হলো জাতীয় হৃদেরাগ ইনস্টিটিউটে। তাঁর নিয়োগকৃত আইনজীবীরা দাবি করলেন, তাঁকে উন্নত চিকিৎসার জন্য দেশের বাইরে পাঠানো হোক। কিন্তু সাধারণ মানুষ বিশ্বাস করে না, বিদেশে পাঠানোর মতো তাঁর শারীরিক অবস্থার কোনো অবনতি হয়েছে। তবে এসব তথাকথিত যুবলীগ নেতা, ক্যাসিনো ব্যবসা বলি আর মাদক ব্যবসা বলি, রাতারাতি তো এসব কুকর্মে লিপ্ত হয়নি। এসব তো চলছিল বহু বছর ধরে। আর কোনো বড় গডফাদারের প্রশ্রয় না থাকলে এসব কালো ব্যবসা চালানো অসম্ভব। এসব গডফাদারের মুখোশ উন্মোচন হোক, জনগণ তা চায় এবং তারা এটাও বিশ্বাস করে, এটা শেখ হাসিনা করতে না পারলে অন্য কারো পক্ষে করা সম্ভব নয়।
শেখ হাসিনা পূর্বনির্ধারিত সফরসূচি অনুযায়ী চার দিনের সফরে নয়াদিল্লি গেলেন। তিনি সেখানে বিশ্ব অর্থনৈতিক ফোরামে বাংলাদেশের ইতিবাচক অনেক অর্জন তুলে ধরে একটি চমৎকার বক্তৃতা দিলেন; কিন্তু তাঁর সেই বক্তৃতা দেশের মিডিয়ায় তেমন একটা প্রচার পায়নি। আমি ব্যক্তিগত উদ্যোগে তাঁর সেই বক্তৃতা একটা ইংরেজি জাতীয় দৈনিকে প্রকাশের ব্যবস্থা করি। কাজটি প্রধানমন্ত্রীর প্রেস উইংয়ের ছিল। সেই সফরে ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের সাতটি সমঝোতা চুক্তি সই হয়েছে। সমঝোতা চুক্তি আর চুক্তির মধ্যে একটি বিরাট তফাত রয়েছে। যখন দুটি দেশের মধ্যে কোনো চুক্তি হয়, তা থেকে এক পক্ষের বের হয়ে আসাটা একটু কঠিন। বের হতে হলে উভয় পক্ষেরই সম্মতি প্রয়োজন হয়। আর সমঝোতা স্মারক হচ্ছে (মেমোরেন্ডাম অব আন্ডারস্ট্যান্ডিং) যেকোনো বিষয়ে একটি সমঝোতা, যা থেকে এক পক্ষ ইচ্ছা করলে যেকোনো সময় বের হয়ে আসতে পারে। এটাকে বলা হয় ‘নন-বাইন্ডিং’ সমঝোতা। যেমন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও হায়দরাবাদ বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে একটি সমঝোতা চুক্তি স্বাক্ষরিত হলো। এটি একটি একাডেমিক সমঝোতা। এমন চুক্তিতে দুই বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে গবেষণা বা একাডেমিক বিষয়ে পরস্পরকে সহায়তা করার জন্য সমঝোতা হয়েছে। এই সমঝোতা অনুযায়ী আগামী দিনে কিছু হবে কি না তা জানা যাবে আরো পরে। বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর মধ্যে এমন চুক্তি হরহামেশাই হয়ে থাকে। এবারেরটা শুধু দুই দেশের প্রধানমন্ত্রীর উপস্থিতিতে হয়েছে—এই যা।
সাতটি সমঝোতা চুক্তির মধ্যে তিনটি একটু গুরুত্বপূর্ণ। প্রথমটি হচ্ছে বাংলাদেশ থেকে ভারতে তরলীকৃত গ্যাস রপ্তানি। তরলীকৃত গ্যাস বা এলপিজি হচ্ছে সাধারণ গ্যাসের তরল রূপান্তর আর তা তৈরি হয় গ্যাসকে তরল ফর্মে রূপান্তর করে। এসব গ্যাস সিলিন্ডার বা পাইপে বহন করা হয়। বাংলাদেশ বিদেশ থেকে তা আমদানি করে সেটি ত্রিপুরায় রপ্তানি করবে। বর্তমানে এমন গ্যাস একাধিক বেসরকারি প্রতিষ্ঠান সিলিন্ডারে ভর্তি করে দেশের বাজারে বিক্রি করছে। চুক্তি বা সমঝোতা—এই মর্মে বাংলাদেশ বিদেশ থেকে গ্যাস আমদানি করে তা তরলীকরণ করে ত্রিপুরায় রপ্তানি করবে। সেই সুবিধা বাংলাদেশের আছে, ত্রিপুরার নেই। এই রপ্তানি সরকারি-বেসরকারি উভয় পর্যায়ে হতে পারে। এই চুক্তি বা সমঝোতা বাংলাদেশ যেকোনো সময় বাতিল করে দিতে পারে। কিন্তু যেদিন চুক্তি সই হলো, সেদিন বিবিসিসহ দেশের অনেক মিডিয়া প্রচার করল, বাংলাদেশের গ্যাসের ঘাটতি থাকলেও এখন বাংলাদেশ ভারতে গ্যাস রপ্তানি করবে। এমন একটি দায়িত্বজ্ঞানহীন সংবাদ প্রকাশ করার পরপরই বিএনপির আবাসিক সম্পাদক বলে খ্যাত রুহুল কবীর রিজভী দলের পুরানা পল্টন কার্যালয়ে সাংবাদিকদের ডেকে জানিয়ে দিলেন, শেখ হাসিনা দেশের স্বার্থ ভারতের কাছে বিকিয়ে দিয়েছেন। কিছু ‘সুশীল’ ব্যক্তি একই বক্তব্য নিয়ে রাতের টিভিতে হাজির হয়ে গেলেন। দ্বিতীয় বিষয়টি ছিল ফেনী নদী থেকে ত্রিপুরার দুর্গম সাব্রুম শহরে ১.৮২ কিউসেক (কিউবিক ফুট প্রতি সেকেন্ডে) পানি সরবরাহ করা। ফেনী নদীর উৎপত্তি ভারতে। ফেনী নদী থেকে অনেক আগে থেকেই ভারত পাম্প দিয়ে পানি উত্তোলন করছে। তারা ইচ্ছা করলে উজানে একটা ছোটখাটো বাঁধ দিয়ে তাদের সমস্যার সমাধান করতে পারে। এই চুক্তির ফলে পুরো বিষয়টা একটা আইনি কাঠামোর মধ্যে এলো। বাংলাদেশের নদী বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ভারত যে পরিমাণ পানি উত্তোলন করবে বলেছে তা ঠিক থাকলে বাংলাদেশের কোনো অসুবিধা নেই। সর্বশেষ বিষয়টা ছিল চট্টগ্রাম ও মোংলা বন্দর ভারতের উত্তর-পূর্ব রাজ্যগুলো ব্যবহার করলে তার গ্রহণযোগ্য প্রক্রিয়া (স্ট্যান্ডার্ড অপারেটিং প্রসিডিউর) কী হবে, সে বিষয়ে একটি কার্যপদ্ধতি প্রস্তুত করা। বাংলাদেশ অনেক আগেই এই দুটি বন্দরের মাধ্যমে ভারত ও নেপালকে ট্রানজিট দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। ভারতের সঙ্গে তা ব্যবহারের পদ্ধতি ঠিক করা নেই। সেটি এখন করা হবে। বিশ্বের যেকোনো সমুদ্রবন্দরের যদি ট্রানজিট দেওয়ার সুবিধা থাকে তা তারা ব্যবহার করে থাকে। নেদারল্যান্ডসের রটারডাম বন্দর দিয়ে সমগ্র ইউরোপের ৬০ শতাংশ আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য হয়। ওমানের বন্দর ব্যবহার করে আফগানিস্তান ও ইরান। ভারতের সঙ্গে সমঝোতা চুক্তি বা চুক্তি যা-ই হোক না কেন, তা মিডিয়াকে পরিষ্কারভাবে সময়মতো জানানো হয়নি। এর ফলে দেশে এবং দেশের বাইরে এসব বিষয়ে অনেক ভুল তথ্য প্রচারিত হয়েছে। অবশ্য বিবিসি তাদের ভুলের জন্য ক্ষমা চেয়েছে। কিন্তু ততক্ষণে অপপ্রচারজনিত ক্ষতি যা হওয়ার তা হয়ে গেছে। এখানে আমাদের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের আরো একটু সচেতন হওয়ার প্রয়োজন ছিল।
সব শেষে বুয়েটের ছাত্র আবরার ফাহাদকে ছাত্রলীগ নামধারী কিছু দুর্বৃত্ত কর্তৃক পিটিয়ে হত্যা করার ঘটনা। আবরারের ‘অপরাধ’ সে ভারতের সঙ্গে সম্পাদিত সমঝোতা স্মারক নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে কিছু উক্তি করেছিল, যা ঘাতকদের পছন্দ হয়নি। এমন উক্তি যোগাযোগ মাধ্যমে হরদম দেওয়া হয়। তাই বলে যিনি দেন তাঁকে কি মেরে ফেলতে হবে? যারা এই নৃশংস হত্যাকাণ্ডটা ঘটিয়েছে তারা অজুহাত দিয়েছে, আবরার ছাত্রশিবির করত। অজুহাত যা-ই হোক তা কিন্তু কাউকে হত্যা করার লাইসেন্স দেয় না। নিহত ছাত্রটিকে প্রায় চার ঘণ্টার বেশি টর্চার করেছে, পিটিয়ে মেরেছে। তাঁর চিৎকার অনেকে শুনেছে। বুয়েটের প্রত্যেক ছাত্রের কাছে মোবাইল ফোন আছে। তাদের একজনও কি তাদের প্রভোস্ট, হাউস টিউটর, পুলিশ বা অন্য কোনো শিক্ষককে আবরারের টর্চারের কথা জানাতে পারল না? এটি তো বিশ্বাসযোগ্য মনে হওয়ার কোনো কারণ নেই। রাত আড়াইটার সময় দাঙ্গা পুলিশ এসেছিল; কিন্তু সময় থাকতে তারা কোনো ব্যবস্থা নেয়নি আবরারকে বাঁচানোর জন্য। সব কিছুই তো অস্বাভাবিক ঠেকছে সবার কাছে। নাকি পর্দার পেছনে অন্য কোনো খেলা চলছে। দুর্নীতিবিরোধী অভিযান র্যাবের তত্ত্বাবধানে চলছে—এমন একটা বিশ্বাস সাধারণ মানুষের মধ্যে ছিল। মানুষ পুলিশের চেয়ে র্যাবকে বিশ্বাস বেশি করে। একজন ব্যাটারিচালিত রিকশাচালকের কাছে জানতে চাইলাম, তার রিকশা বেআইনি হওয়া সত্ত্বেও ঢাকার রাস্তায় তা কিভাবে চলে। তার চটজলদি উত্তর—থানায় মাসে এক হাজার টাকা দিলে সব জায়েজ! এই পরিস্থিতিতে মানুষ যখন র্যাবের ওপর তাদের বিশ্বাস স্থাপন করেছে, তখন র্যাবের শীর্ষস্থানীয় একজন কর্মকর্তা সাংবাদিকদের জানিয়ে দিলেন, এই অভিযানে র্যাব মূল ফোর্স নয়। এটি বলে তিনি কী বোঝাতে চাইলেন তা-ও বোঝা গেল না।
বুধবার প্রধানমন্ত্রী তাঁর সংবাদ সম্মেলনে পরিষ্কার ভাষায় বলেছেন, ‘কে কোন দল করে বুঝি না, ছাত্রলীগ বুঝি না। আবরার হত্যার বিচার হবে।’ কিন্তু কথা হচ্ছে, সব কিছু প্রধানমন্ত্রীকে কেন ঘোষণা দিয়ে করতে হবে? তাঁর এত সভা-পারিষদ আছে কী করতে?
লেখক : বিশ্লেষক ও গবেষক
- আরও পড়ুন >> ১৫ই আগস্ট—ব্যক্তি নয় রাষ্ট্রকেই হত্যার চেষ্টা