সুনামগঞ্জের দিরাইয়ে নির্মম ও পাশবিকভাবে পাঁচ বছরের শিশু তুহিন হত্যার ঘটনায় বাবা-চাচাসহ পরিবারের সাত সদসস্যকে আটক করা হয়েছে।
আজ সোমবার দুপুরে প্রাথমিকভাবে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তাদের আটক করেছে পুলিশ।
আটককৃতরা হলেন- তুহিনের বাবা আব্দুল বাছির, চার চাচা মাওলানা আব্দুল মোছাব্বির, জমসেদ মিয়া, নাছির, জাকিরুল, চাচি খাইরুন বেগম এবং চাচাতো বোন তানিয়া।
এর আগে সোমবার সকালে ভারপ্রাপ্ত জেলা পুলিশ সুপার মিজানুর রহমান, সিআইডির আরআইওয়ান আনোয়ার হোসেন মৃধা এবং ডিবি পুলিশের ওসি কাজী মুক্তাদির হোসেন মুক্তা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন।
পুলিশ সুপার মিজানুর রহমান জানান, ঘটনার অনেক ক্লু পাওয়া গেছে। তবে তদন্তের স্বার্থে এখন কিছুই বলা যাচ্ছে না।
নিহত তুহিনের বাবা আব্দুল বাছির বলেন, ১৫ দিন আগে আমার স্ত্রী একটি কন্যাসন্তান প্রসব করেন। এ কারণে তুহিন ও ছোট ছেলেটি পাশের ঘরে ঘুমায়। রোববার রাতের খাবার খেয়ে বাচ্চা দু’টি ঘুমিয়ে পড়ে। রাত দেড়টার দিকে প্রস্রাব করার জন্য বাইরে বের হই। তখন বাচ্চাদের গায়ে কাঁথা টেনে দিয়ে পাশের ঘরে গিয়ে আবার ঘুমিয়ে পড়ি। রাত সাড়ে তিনটার দিকে আমার ভাতিজির ঘুম ভাঙে। সামনের দরজা খোলা দেখতে পেয়ে সে আমাকে ডেকে তোলে।
তিনি আরও বলেন, ভাতিজির ডাকে উঠে তুহিনকে দেখতে না পেয়ে পরিবারের সবাই মিলে খুঁজতে শুরু করি। এক পর্যায়ে বাড়ির অদূরে মসজিদের পাশে একটি গাছের সাথে তুহিনকে ঝুলন্ত অবস্থায় দেখতে পাই। সে সময় আমার ছেলের গলা কাটা ছিল। তার অতটুকু শরীরে দু’টি বিশাল আকারের ছুরি ঢোকানো। এছাড়া কান এবং লিঙ্গটি কাটা অবস্থায় ছিল।
ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখা যায়- মসজিদ সংলগ্ন রাস্তা রক্তে লাল হয়ে আছে। এর পাশেই ঝোপের মধ্যে একটি গাছে তুহিনের লাশ ঝুলছে। জমাটবাঁধা রক্তের পাশে তুহিনের একটি কাটা কান পড়ে রয়েছে। লিঙ্গ ও অপর কানটি কেটে নিয়ে গেছে ঘাতকরা। শিশুটির পেটে যে দু’টি ছুরি বিঁধে রয়েছে তাতে গ্রামের সুলেমান ও সালাতুলের নাম লেখা রয়েছে।
এই দুই ব্যক্তির সাথে নিহত তুহিনের পরিবারের দীর্ঘদিনের বিরোধ রয়েছে বলে জানিয়েছেন গ্রামবাসী।
এ ব্যাপারে আব্দুল বাছির বলেন, একসময় গ্রামে কয়েকজনের সাথে দ্বন্দ্ব ছিল। কিন্তু এখন কারো সাথে আমাদের কোনো বিরোধ নেই।
কাউকে সন্দেহ করেন কি না সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, আমি যা দেখিনি, তা কীভাবে বলব? এ কথা বলার পর কান্নায় ভেঙে পড়েন বাছির।
এদিকে তুহিনের মৃত্যু সংবাদ জানার পর থেকে তার মা শোকে পাথর হয়ে গেছেন। কারো সঙ্গে কোনো কথাই বলছেন না। বারবার মূর্ছা যাচ্ছেন তিনি।
- অর্থনীতিতে এক ভারতীয়সহ নোবেল পেলেন ৩ জন
- আবরারের হত্যাকারীদের সর্বোচ্চ শাস্তি নিশ্চিতের আশ্বাস প্রধানমন্ত্রীর
এলাকাবাসী জানান, আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে সাবেক ইউপি সদস্য আনোয়ার হোসেনের সঙ্গে তুহিনের পরিবারের বিরোধ ছিল। ১৫ বছর আগে মধুপুর গ্রামের মুজিব নামে এক ব্যক্তিকে হত্যার পর কাজাউড়া গ্রামে ফেলে রাখা হয়। সে সময় এ হত্যাকাণ্ড নিয়ে আনোয়ার হোসেন ও তুহিনের পরিবারের সদস্যদের নামে রাজনৈতিক মামলা হয়।
এ ঘটনার পরে কাজাউড়া গ্রামে নিলুফা নামে একজন খুন হয়। নিলুফার আব্দুল বাছিরের আত্মীয় ছিলেন। এ ঘটনায় আনোয়ার হোসেনসহ তার পরিবারের সদস্যদের নামে হত্যা মামলা হয়।
পুলিশ সুপার মিজানুর রহমান জানান, এলাকাবাসীর দেয়া তথ্যের ভিত্তিতে এসব ঘটনার সাথে তুহিনের হত্যার কোনো যোগসূত্র আছে কি না তা যাচাই করে দেখা হচ্ছে।