তুহিন হত্যা পৈশাচিক, দৃষ্টান্তমূলক বিচার হবে : আইনমন্ত্রী

মত ও পথ প্রতিবেদক

শিশু তুহিন
নির্মম ও পাশবিকভাবে খুন হওয়া পাঁচ বছরের শিশু তুহিন । ছবি : সংগৃহিত

আইনমন্ত্রী আনিসুল হক সুনামগঞ্জের আলোচিত শিশু তুহিনের হত্যাকাণ্ডকে পৈশাচিক আখ্যা দিয়ে বলেছেন, এই হত্যার বিচার এমন হবে যাতে দৃষ্টান্ত হয়ে থাকে। ভবিষ্যতে এমন হত্যাকাণ্ড ঘটানোর চিন্তা কোনো মানুষের মাথায় যেন না আসে।

আজ বুধবার দুপুরে সচিবালয়ে ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) একটি প্রতিনিধি দলের সঙ্গে বৈঠকের পর সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে আইনমন্ত্রী একথা বলেন।

universel cardiac hospital

ইইউ রাষ্ট্রদূত রেনজি তিরিংয়ের নেতৃত্বে প্রতিনিধি দলের সঙ্গে বৈঠকে আইনমন্ত্রী বাংলাদেশের মানবাধিকার পরিস্থিতি তুলে ধরেন। বৈঠকে বাংলাদেশে শ্রম অধিকার ও মানবাধিকার প্রতিষ্ঠা দেখতে চায় ইউরোপীয় ইউনিয়ন। বৈঠকে বেশ কয়েকটি হত্যা ও হত্যা মামলার প্রসঙ্গও তোলেন ইইউ প্রতিনিধি দলের কর্মকর্তারা।

সুনামগঞ্জ জেলা পুলিশ সুপার মিজানুর রহমান জানিয়েছেন, প্রতিপক্ষকে ফাঁসাতে সুনামগঞ্জের দিরাইয়ে শিশু তুহিনকে ঘুমন্ত অবস্থায় কোলে করে ঘরের বাইরে নিয়ে যান তুহিনের বাবা আব্দুল বাছির। এরপর বাছিরের এক ভাই ও ভাতিজা, অর্থাৎ তুহিনের বাবা, চাচা ও চাচাতো ভাই মিলে তাকে হত্যা করেন। এরপর তার লাশ তারা ঝুলিয়ে দেন গাছের ডালে। তুহিনের বাবা ও চাচা পুলিশের হাতে গ্রেপ্তার হয়েছেন।

তুহিন হত্যার বিষয়ে আইনমন্ত্রী বলেন, শুধু আইন দিয়ে এ ঘটনার বিচার করা যাবে না। সামাজিকভাবে উদ্যোগ নিতে হবে। সমাজকে বিচারের মুখোমুখি দাঁড় করাতে হবে।

বুয়েটছাত্র আবরার হত্যাকাণ্ডের দ্রুত বিচারের বিষয়ে প্রশ্ন করলে মন্ত্রী বলেন, একটা ফৌজদারি মামলা এজাহার দিয়ে শুরু হয়, তারপর তার তদন্ত হয়। এর পরের ধাপে আসে অভিযোগপত্র। আববার হত্যা মামলা এখন তদন্তাধীন। সরকার থেকে বলা হয়েছে এ মামলার দ্রুতবিচার নিশ্চিত করতে। শিগগিরই অভিযোগপত্রও আসবে। এরপর প্রসিকিউশন তা গ্রহণ করবে। এজন্য প্রসিকিউশন টিম পুরোপুরি প্রস্তুত।

এ সময় ফেনীর সোনাগাজীতে মাদ্রাসা শিক্ষার্থী নুসরাত হত্যা প্রসঙ্গে মন্ত্রী বলেন, নুসরাত হত্যাকাণ্ডের বিচার নিয়ে জনগণের দাবি এবং সরকারের অঙ্গীকার ছিল। সে অনুযায়ী সরকার এই হত্যাকাণ্ডের বিচার দ্রুত এগিয়ে নিয়েছে। আগামী ২৪ অক্টোবর এই মামলার রায় ঘোষণা করবে আদালত।

তবে সাংবাদিক দম্পতি সাগর- রুনি ও তনু হত্যা মামলা ধীরগতি কেন সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে আইনমন্ত্রী বলেন, ওই মামলা দুটির তদন্ত শেষ করতে পারেনি পুলিশ। তিনি কেবল বিচারকাজ শুরু হওয়া মামলা সম্পর্কেই বলতে পারেন বলেও মন্তব্য করেন আইনমন্ত্রী।

মানবাধিকারের বিষয়ে মন্ত্রী ইইউ প্রতিনিধিদের জানান, সরকার মানবাধিকার রক্ষায় যথেষ্ট সচেতন। সরকার তা পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে পালন করছে। আইনমন্ত্রী তখন ফেনীর মাদ্রাসার সাবেক ছাত্রী নুসরাত হত্যার উদাহরণ টেনে ইইউ কর্মকর্তাদের বলেন, ওই মামলায় টানা আড়াই মাস ধরে গণমাধ্যম সক্রিয় ছিল। জনগণ বিচারের দাবিতে ফুঁসে উঠেছিল আর সরকারের অঙ্গীকার ছিল সুষ্ঠু বিচার করা। সরকার তা দ্রুত সময়ের মধ্যেই শেষ করতে পেরেছে। তাছাড়া সরকারের ইচ্ছায় বুয়েট শিক্ষার্থী আবরার ফাহাদ হত্যা মামলা কীভাবে দ্রুতগতিতে এগোচ্ছে তা তুলে ধরেন মন্ত্রী।

এ সময় শ্রম আইন নিয়েও কথা বলেন ইইউ প্রতিনিধিরা। জানতে চান সরকার কীভাবে শ্রম অধিকার প্রতিষ্ঠা করছে বা ভবিষ্যতে করবে। সে প্রশ্নে আইনমন্ত্রী উল্টো তাদের কাছে জানতে চান, ইইউ শ্রম অধিকার প্রতিষ্ঠা কেমন দেখতে চায়, সে বিষয়ে কী কী সুপারিশ রয়েছে তাদের। এসবের একটি রূপরেখাও সরকারকে দিতে বলেন আইনমন্ত্রী। ওই রূপরেখার সঙ্গে সরকারের নেওয়া উদ্যোগ মিলিয়ে দেখে, কোথায় অসঙ্গতি রয়েছে তা বের করে সংশোধন করার কথা বলেন আইনমন্ত্রী।

শেয়ার করুন

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে