ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্নাতক ২০১৯-২০ শিক্ষাবর্ষের ভর্তি পরীক্ষায় (খ ইউনিট) দ্বিতীয় এবং জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে (সি ইউনিট) প্রথম হয়েছেন টাঙ্গাইলের নুরুন নাহার ঊর্মি।
শিক্ষাজীবনে পঞ্চম শ্রেণি থেকে সব বোর্ড পরীক্ষায়ই পেয়েছেন জিপিএ-৫। বাবা-মা, শিক্ষকদের সঠিক দিকনির্দেশনা, নিজের কঠোর পরিশ্রম ও কঠোর অধ্যবসায় সফলতার ধারাবাহিকতা ধরে রেখেছেন তিনি। সফলতার এমন ধারাবাহিকতা বজায় রেখে স্বপ্নজয় করতে চান ঊর্মি।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, প্রকাশিত ফলাফল অনুযায়ী ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কলা ও সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদভুক্ত ‘খ’ ইউনিটে এ বছর মোট ১৭৭.৭৫ নম্বর পেয়ে দ্বিতীয় হয়েছেন ঊর্মি।
প্রাপ্ত নম্বরের মধ্যে এসএসসি ও এইচএসসিতে প্রাপ্ত জিপিএর ভিত্তিতে ৮০ নম্বরের মধ্যে তিনি পেয়েছেন ৮০। এ বছর ‘খ’ ইউনিটে সমন্বিতভাবে পাসের হার মোট শিক্ষার্থীর ২৩.৭২ শতাংশ।
ভর্তি পরীক্ষায় নৈর্ব্যক্তিক অংশে পাস করেছেন ১৮ হাজার ৫৮১ জন। নৈর্ব্যক্তিক ও লিখিত অংশে সমন্বিতভাবে পাস করেছেন ১০ হাজার ১৮৮ জন। অনুত্তীর্ণ হয়েছেন ৩২ হাজার ৭৬৬ জন।
১৩ অক্টোবর দুপুরে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি অফিসে উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামান আনুষ্ঠানিকভাবে এ ফলাফল ঘোষণা করেন।
বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘খ’ ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয় গত ২১ সেপ্টেম্বর। ফল প্রকাশ শেষে জানানো হয়, পাস করা ১০ হাজার ১৮৮ জনের মধ্যে থেকে মেধাক্রম অনুযায়ী ভর্তি করা হবে। মোট দুই হাজার ৩৭৮ জন ভর্তির সুযোগ পাবে।
এ বছর ‘খ’ ইউনিটে দুই হাজার ৩৭৮ আসনের জন্য ভর্তিচ্ছু আবেদনকারীর সংখ্যা ছিল ৪৫ হাজার ১৮। এর মধ্যে ফলাফলে দ্বিতীয় স্থান অর্জন করেছেন ঊর্মি। পাশাপাশি জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের কলা ও মানবিক অনুষদভুক্ত (সি) ইউনিটে প্রথম হয়েছেন নুরুন নাহার ঊর্মি।
জানা যায়, ২০০২ সালের ৬ মার্চ টাঙ্গাইলের ধনবাড়ী উপজেলার গংগাবর গ্রামের শিক্ষক দম্পতির পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন নুরুন নাহার ঊর্মি। তার বাবা নজরুল ইসলাম এবং মা লুৎফুননিসা খানম সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করেন।
ঊর্মি ছোটবেলা থেকে লেখাপড়ায় মনোযোগী। এ পর্যন্ত সব পরীক্ষার ফলাফলে সুনাম কুড়িয়েছেন তিনি। পঞ্চম শ্রেণি থেকে সব বোর্ড পরীক্ষায় জিপিএ-৫ পেয়েছেন। ধনবাড়ী প্রি-ক্যাডেট ইনস্টিটিউট থেকে ২০১১ সালে পিএসসি পরীক্ষায় জিপিএ-৫ পান ঊর্মি।
২০১৪ সালে ধনবাড়ী কলেজিয়েট স্কুল থেকে জেএসসি পরীক্ষায় জিপিএ-৫ পান তিনি। ২০১৭ সালে একই স্কুল থেকে গোল্ডেন জিপিএ-৫ পেয়ে এসএসসি পাস করেন। ২০১৯ সালে ময়মনসিংহ শহীদ সৈয়দ নজরুল ইসলাম কলেজ থেকে জিপিএ-৫ পেয়ে এইচএসসি পাস করেন ঊর্মি।
লেখাপড়ার পাশাপাশি বিতর্ক প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করেও অনেক পুরস্কার পেয়েছেন ঊর্মি। সে ধারাবাহিকতায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (খ) ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষায় দ্বিতীয় এবং জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘সি’ ইউনিটে প্রথম হয়েছেন তিনি।
মেয়ের এমন সফলতায় উচ্ছ্বসিত বাবা নজরুল ইসলাম বলেন, একজন শিক্ষক হিসেবে মেয়েকে যেভাবে দিক-নির্দেশনা দিয়েছি ঠিক তেমনি আমার অন্যান্য শিক্ষার্থীদেরও নিজের সন্তানের মতো লেখাপড়ায় অনুপ্রাণিত করার চেষ্টা করে যাচ্ছি। আমরা স্বামী-স্ত্রী শিক্ষক হওয়ায় ঊর্মি বেশির ভাগ সময় আমাদের সঙ্গে স্কুলে যেতো।
যখন সে চতুর্থ শ্রেণিতে পড়ে তখন থেকে তাকে বাংলা এবং ইংরেজি সাহিত্যের প্রতি অনুপ্রাণিত করতাম। আমাদের পাশাপাশি স্কুল এবং কলেজের শিক্ষকদের সঠিক দিক-নির্দেশনায় লেখাপড়া করায় এমন সাফল্য পেয়েছে ঊর্মি। প্রত্যেক সন্তানের সাফল্যে সব মা-বাবাই আনন্দিত হয়। তবে ঊর্মির সাফল্যে আমরা গর্বিত। আমাদের চাওয়া ঊর্মি শুধু ভালো শিক্ষার্থী নয়, একজন ভালো মানুষ হিসেবে নিজেকে সমাজে প্রতিষ্ঠিত করুক।
এত সাফল্য পাওয়ার নেপথ্যে কি তা জানিয়ে নুরুন নাহার ঊর্মি বলেন, আমার সাফল্যের নেপথ্যে মূলত পরিশ্রম। আমি মনে করি পরিশ্রম না করে শুধুমাত্র মেধা থাকলেই সফলতা পাওয়া সম্ভব নয়। এসএসসি পরীক্ষায় ভালো ফলাফল করার পর থেকে আমার বাবা-মা ঢাকা আমাকে বিশ্ববিদ্যালয়ে চান্স পাওয়ার জন্য অনুপ্রাণিত করেছেন। শুধু চান্স পেলেই হবে না, আমাকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষায় ভালো অবস্থান তৈরির জন্য উৎসাহ জুগিয়েছেন তারা।
আমার বিশ্বাস ছিল অমি চান্স পাবই। আমি মনে করি সফল হতে হলে আত্মবিশ্বাস বেশি থাকা জরুরি। বাংলা, ইংরেজি, সাহিত্য, ভূগোল এবং ইতিহাসের প্রতি আমার আগ্রহ অনেক বেশি। তাই বিজ্ঞান বিভাগ থেকে এসএসসি পাস করে নিজের ইচ্ছায় মানবিক বিভাগে এইচএসসিতে ভর্তি হই। আমি উচ্চশিক্ষায় শিক্ষিত হতে চাই, ভালো মানুষ হতে চাই।
আমর জীবনের প্রথম শিক্ষক বাবা। পরে মা। বাবা-মায়ের কাছ থেকে শিক্ষাজীবনের মূলমন্ত্র নিজের জীবনে ধারণ করি। শিক্ষকদের প্রতি আমার শ্রদ্ধা এবং সম্মানের জায়গা অনন্য উচ্চতায়। অনেক বড় স্বপ্ন আছে আমার। আমি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক হতে চাই। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এবং জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে ভালো ফলাফল আসায় আমি বেশ আনন্দিত এবং উচ্ছ্বসিত। এই সফলতা আমি ধরে রাখতে চাই, জয় করতে চাই আমার স্বপ্ন।