অসুস্থতার বাহানায় মুখ খুলতে গড়িমসি সম্রাটের

মত ও পথ প্রতিবেদক

সম্রাট
সম্রাট। ফাইল ছবি

জিজ্ঞাসাবাদের জন্য র‌্যাবের হেফাজতে থাকা যুবলীগের বহিষ্কৃত নেতা ইসমাইল চৌধুরী সম্রাট রাজধানীর ক্যাসিনো বাণিজ্যের সঙ্গে জড়িত বেশ কয়েকজনের নাম জানিয়েছেন। তবে সম্রাট পুরোপুরি মুখ খুলতে গড়িমসি করছেন। অসুস্থতার বাহানা দিয়ে এড়িয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছেন নানা প্রশ্ন।

আজ শুক্রবার দিনভর জিজ্ঞাসাবাদে ক্যাসিনো ছাড়াও অবৈধভাবে উপার্জিত অর্থ বিষয়ে বেশ কিছু তথ্য পেয়েছেন র‌্যাব কর্মকর্তারা। অধিক তদন্তের স্বার্থে সম্রাটের এসব তথ্য যাচাই-বাছাই করছে সংস্থাটি।

র‌্যাবের একাধিক বিশ্বস্ত সূত্র গণমাধ্যমকে এসব তথ্য নিশ্চিত করেছে।

সূত্র জানায়, প্রথম দিন (বৃহস্পতিবার) সম্রাট ও তার সহযোগী আরমানকে র‌্যাব কার্যালয়ে আনা হলেও তেমন কিছু জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়নি। সম্রাট শারীরিক অসুস্থতার কথা জানালে ওষুধ খাইয়ে বিশ্রাম দেওয়া হয়। শুক্রবার দিনভর তার কাছে বিভিন্ন তথ্য জানতে চাওয়া হয়। বিশেষ করে দেশে-বিদেশে থাকা সম্পদসহ বিস্তারিত বিষয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়।

কিন্তু তিনি চতুরতার সঙ্গে সেসব প্রশ্নের উত্তর দেন এবং বারবার র‌্যাবকে বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করেন। সেই সঙ্গে নিজেকে অসুস্থ প্রমাণের চেষ্টা করেন। তারপরও ক্যাসিনো বাণিজ্য ও অন্যান্য বিভিন্ন বিষয়ে তথ্য দিয়েছেন সম্রাট। সেসব তথ্য সঠিক কি-না যাচাই-বাছাই করা হচ্ছে।

বৃহস্পতিবার বিকালে অস্ত্র ও মাদক মামলায় সম্রাট ও তার সহযোগী এনামুল হক আরমানকে গোয়েন্দা পুলিশ ডিবি কার্যালয় থেকে র‌্যাব-১ এর কার্যালয়ে নেওয়া হয়। মঙ্গলবার শুনানি শেষে অস্ত্র ও মাদক আইনের দুই মামলায় সম্রাটকে পাঁচ দিন করে মোট ১০ দিন এবং তার সহযোগী এনামুল হক আরমানকে মাদক আইনের মামলায় পাঁচ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করে আদালত। বুধবার মামলাটি র‌্যাবে হস্তান্তর হয়। এরপর সম্রাটকে আট দিনের মতো জিজ্ঞাসাবাদের সময় পায় র‌্যাব।

র‌্যাব-১ এর অধিনায়ক লে. কর্নেল সারওয়ার-বিন-কাশেম গণমাধ্যমকে বলেন, সম্রাট ও তার সহযোগী আরমানের মামলা দুটি তদন্ত করছে র‌্যাব। তাদের রিমান্ডে এনে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। এরই মধ্যে বেশ কিছু গুরুত্বর্ণপূর্ণ তথ্য পাওয়া গেছে। সেসব তথ্য আমরা যাচাই-বাছাই করছি।

সম্রাটের শারীরিক অবস্থা সম্পর্কে র‌্যাবের এই কর্মকর্তা বলেন, এখন তিনি ভালো আছ্নে, সুস্থ আছেন।

আরমান-সম্রাটকে মুখোমুখি করা

আরমান ও সম্রাটকে মুখোমুখি করে কোনো তথ্য মিলেছে কি-না এমন প্রশ্নে সারওয়ার বলেন, তাদের দুজনকে পৃথকভাবে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। যেসব তথ্য মিলেছে তাতে প্রয়োজনে হলে মুখোমুখি করা হবে।

জিজ্ঞাসাবাদে সম্রাট সরকারদলীয় বেশ কয়েকজন নেতার নাম জানিয়েছেন বলে কোনো কোনো গণমাধ্যমে খবর এসেছে।

এ বিষয়ে সারওয়ার বলেন, এমন কোনো কথা সম্রাট আমাদের বলেননি। কারণ আমরা তাকে একদিন হলো জিজ্ঞাসাবাদের সময় পেলাম মাত্র। এখনো সময় রয়েছে। বিভিন্ন জায়গায় যেসব কথা বলা হচ্ছে এগুলো মিথ্যা।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশে ১৮ সেপ্টেম্বর শুরু হয় ক্যাসিনোবিরোধী অভিযান। শুরু থেকেই ঢাকা মহানগর দক্ষিণ যুবলীগের সভাপতি ইসমাইল হোসেন সম্রাটের নাম আলোচনার শীর্ষে ছিল।

এর মধ্যে সম্রাট গা-ঢাকা দেন। পরে গত ৬ অক্টোবর কুমিল্লার চৌদ্দগ্রাম থেকে সম্রাট ও তার সহযোগী আরমানকে গ্রেপ্তার করে র‌্যাব। সেদিন বিকালে সম্রাটকে সঙ্গে নিয়ে কাকরাইলের ভূঁইয়া ট্রেড সেন্টারে তার কার্যালয়ে অভিযান চালানো হয়।

কারাগারে গিয়ে অসুস্থ হয়ে পড়ার পর সম্রাটকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। চিকিৎসা শেষে তাকে আবার কারাগারে আনা হয়। সেখানে থাকা অবস্থায় আদালতের নির্দেশে তাকে রিমান্ডে নেয় আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।

শেয়ার করুন

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে