একই দিনে একসঙ্গে ঘোষণা করা হলো ২০১৮ ও ২০১৯ সালের নোবেল পুরস্কারজয়ী দুজন কথাসাহিত্যিকের নাম। ২০১৮ সালের জন্য পেয়েছেন ওলগা তোকারচুক, এ বছরের জন্য পেটার হান্ডকে। দুজনকেই অভিনন্দন। হান্ডকে একাধারে ঔপন্যাসিক, নাট্যকার এবং চলচ্চিত্র নির্মাতা। সম্প্রতি ক্রিটিক’স-এর মুখোমুখি হয়েছিলেন পেটার হান্ডকে। সাক্ষাৎকারটি নিয়েছেন দেবোরাহ সোলোমন। লেখকের নোবেলপ্রাপ্তিতে হুমায়ূন শফিকের অনুবাদে সাক্ষাৎকারটি প্রকাশ করা হলো।
প্রশ্ন: ইউরোপের সবচেয়ে শ্রদ্ধেয় ঔপন্যাসিক ও নাট্যকার হিসেবে আপনি কীভাবে আপনার উপর খুব ক্ষিপ্ত তাদের ম্যানেজ করেন?
উত্তর: আমার মনে হয়, সার্বিয়ায় পোজারভাক শহরে স্লোভোডান মিলোসেভিচের অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ায় সহায়তা করেছি বলেই এমন হয়েছে।
প্রশ্ন: হ্যাঁ, কিন্তু আপনি কেন এমন একজন মানুষের অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ায় অংশগ্রহণ করবেন যিনি যুদ্ধাপরাধী হিসেবে পরিচিত?
উত্তর: আমার মতে সে দুঃখী মানুষ। সে হিরো না হতে পারে কিন্তু একজন দুঃখী মানুষ তো! আমি একজন লেখক, কোনো বিচারক তো নই। আমি যুগোস্লাভিয়াকে ভালোবাসি; সার্বিয়াকেও এতটা নয়। ইউরোপের সবচেয়ে প্রিয় দেশ যখন ধ্বংস হয়ে যাচ্ছিল তখন আমি যুগোস্লাভিয়ায় যেতে চেয়েছিলাম। এবং এটাই হচ্ছে অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ায় যাওয়ার অন্যতম কারণ।
প্রশ্ন: কেন আপনি যুগোস্লাভিয়াতেই যেতে চান?
উত্তর: আমি অস্ট্রিয়ান, কিন্তু আমার মা স্লোভেনীয়। দ্বিতীয় মহাযুদ্ধের সময় তার ভাই যুগোস্লাভিয়ার পক্ষে ছিলেন যখন হিটলার অস্ট্রিয়া দখল করেছিল। আমার মামা ছিলেন অস্ট্রিয়ান। তাকে নাৎসি বাহিনীতে ইচ্ছার বিরুদ্ধে যোগ দিতে হয়েছিল। তিনি রাশিয়ায়ত মারা গেছেন; অনেক আগেই। এটাই হচ্ছে আমার লেখালেখির শুরু। আমার মা এই গল্পটা বলেছিলেন। শুরু হয়েছিল খুবই ছোটবেলায়; যখন আমি শিশু।
প্রশ্ন: যতদূর জানি, ফরাসী জাতীয় থিয়েটার ‘কমেডি ফ্রাঞ্চি’ আপনার একটা নাটক প্রযোজনা বাতিল করেছে। যার নাম ‘ভয়েজ টু দ্যা সোনারাস ল্যান্ড, অর দ্যা আর্ট অফ আস্কিং।’
উত্তর: হ্যাঁ, এটা সত্যি। কারণ সেই একই অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ায় সহায়তা।
প্রশ্ন: হেইনরিচ হেইন পুরস্কারের ব্যাপারটার কী হলো? আপনি ফিরিয়ে দিলেন কেন?
উত্তর: অহ, এটা অদ্ভুতই বটে! জার্মান রাজনীতিকরা ভাবে এই পুরস্কারের জন্য আমি উপযুক্ত না। এবং তখন খুবই নোংরামি হচ্ছিল। শেষ পর্যন্ত নিজেকে বলেছি- তাদের ছেড়ে দেয়াই উত্তম।
প্রশ্ন: পুরস্কারের টাকা ছাড়াই কি আপনার যথেষ্ট টাকা আছে?
উত্তর: চলেন দেখি। যদি আপনি কিছু পাঠাতে চান…
প্রশ্ন: আমেরিকায় আপনার পরবর্তী উপন্যাস কবে আসবে?
উত্তর: কয়েক মাসের মধ্যেই। অনুবাদ করা খুবই কঠিন। এটাকে বলে, ‘লস অফ ইমেজ’। উপন্যাসটাকে বলা যায়, আধুনিক সময়ে মধ্যযুগীয় উপন্যাস। গল্পের নায়ক একজন মহিলা ব্যাংকার। যিনি স্প্যানিশ পর্বতে গিয়ে নিজেকেই ভুলে যান।
প্রশ্ন: আপনাকে সাধারণত একজন এক্সপেরিমেন্টাল ঔপন্যাসিক এবং নাট্যকার হিসেবে অভিহিত করা হয়?
উত্তর: আমি? না, আমি ক্লাসিক্যাল লেখক। আমি কনজারভেটিভ ক্লাসিক্যাল লেখক।
প্রশ্ন: মানে কী?
উত্তর: প্রচুর হাওয়া রয়েছে এর ভিতরে। বইগুলোতে প্রচুর তুষারের হুঙ্কার এবং গ্রীষ্মের বাতাসের কলহ।
প্রশ্ন: কিন্তু আপনার বেস্ট লেখাগুলো কিন্তু খুবই কম ন্যাচারালিস্টিক। ‘এ সোরো বিঅন্ড ড্রিমস’ নিয়ে চিন্তা করছিলাম। এদেশে এটা তো পুনরায় প্রকাশ হয়েছে।
উত্তর: যখন কেউ আমার বই নিয়ে রিভিউ করে, তারা সব সময় বলে বইটা খুব সুন্দর! কিন্তু প্লটে একটু সমস্যা আর এটা তেমন কৌশলী নয়। আমি কৌশল পছন্দ করি না। আমি মানুষ হিসেবেও তেমন কৌশলী না।
প্রশ্ন: না, এটা রাজনীতি। ১৯৬৬ সালে, প্রিন্সটন ইউনিভার্সিটির একটা সম্মেলনে, আপনি গুন্টার গ্রাস এবং হেনরিচ বলের কথা বলেছিলেন যে, তারা উপন্যাসটিকে সামাজিক সমালোচনা রূপে রপান্তরিত করে সম্মানিত করেছেন?
উত্তর: হ্যাঁ, কিন্তু আমার উপন্যাসে আমি এমন কিছু করিনি। এখন পর্যন্ত না। ভাষা হচ্ছে ভাষা এবং ভাষা কখনো মতামত হতে পারে না।
প্রশ্ন: তাহলে ভাষা কী?
উত্তর: এটা হচ্ছে প্রশ্ন। বিশাল বড় প্রশ্ন, এবং এর কোনো উত্তর নেই। ভাষা মহান বইগুলোতে ভাষা হয়ে ওঠে।
প্রশ্ন: এই আলোচনায় কি আমরা ভাষা ব্যবহার করছি না?
উত্তর: সত্যিকার আলোচনা আমি তখনই করি যখন একা থাকি এবং লেখালেখি করি।
প্রশ্ন: আপনি কি মনে করেন, কথোপকথনের মাধ্যমে দুজনে কোনো কিছুর সাথে যোগাযোগ করতে পারে?
উত্তর: অবশ্যই। কিন্তু আপনাকে এটা জানতে হবে যে, এটা গেইম। বিভিন্ন মুহূর্ত খুবই টাচি এবং সিরিয়াস হয়ে যায়, কিন্তু এসব শুরু হয় গেইমের মাধ্যমে এবং শেষও হওয়া উচিত গেইমের মাধ্যমে।
প্রশ্ন: প্রায়ই নোবেল পুরস্কারের তালিকায় আপনার নাম চলে আসে। আপনি এ ব্যাপারে ভাবেন?
উত্তর: যখন আমি তরুণ ছিলাম তখন ভাবতাম। এখন ভাবি নোবেল পুরস্কার আমার জন্য না। মূলত যুগোস্লাভিয়ার ঘটনার পরে থেকে তো কোনোভাবেই না।