ঐক্য সুসংহত করে দেশকে জনগণের নিয়ন্ত্রণে রাখার প্রত্যয় ব্যক্ত করেছেন জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের শীর্ষ নেতা গণফোরামের সভাপতি ড. কামাল হোসেন। একই সঙ্গে তিনি এ ঐক্যের ডাক গ্রামে, গ্রামে নিয়ে যেতে বলেন যাতে জনগণ সত্যিকার অর্থে ক্ষমতার মালিক হিসেবে নিজের ভূমিকা রাখতে পারে।
শুক্রবার দুপুরে জাতীয় প্রেস ক্লাবে আয়োজিত এক আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ প্রত্যয় ব্যক্ত করেন।
‘নির্বাচন কেন্দ্রিক সংকট সমাধানে জাতীয় ঐক্যের প্রয়োজন ও প্রাসঙ্গিকতা’ শীর্ষক এ আলোচনা সভার আয়োজন করে ‘বাংলা সাংস্কৃতিক মুক্তি জোট’।
ড. কামাল হোসেন বলেন, ‘যখনই আমাদের কোনো লক্ষ্য অর্জনের জন্য ঐক্যের প্রয়োজন হয়, তখনই অসাধারণ সাড়া পড়ে। দেশের মূল লক্ষ্য সামনে রেখে যখনই আমরা ঐক্য গড়ার চেষ্টা করি, তখনই কালো টাকা দিয়ে বিভেদ সৃষ্টির চেষ্টা করা হয় এবং সাম্প্রদায়িক বিভাজনকে সামনে আনা হয়। কিন্তু জনগণ এগুলো প্রশ্রয় দেয় না বলে সরকার সফল হয় না।’
তিনি বলেন, ‘সরকার চেষ্টা করে সংকীর্ণ দলীয় বক্তব্য দিয়ে এবং কালো টাকা ব্যবহার করে অনৈক্য সৃষ্টির। কিন্তু সরকার কোনো দিনও সফল হয়নি। যখন আমরা ঐক্যের ডাক দিয়েছি, তখন মানুষ সরকারের এ নেতিবাচক চেষ্টা প্রত্যাখান করেছে এবং জনগণের মধ্যে ঐক্য গড়ে উঠেছে। এ ঐক্যের মধ্য দিয়ে যতগুলো চ্যালেঞ্জ ফেস করতে হয়েছে, আমরা সেটা করেছি। এবারও সেটা করতে হবে।’
ড. কামাল হোসেন বলেন, ‘আগামী নির্বাচন খুবই গরুত্বপূর্ণ। কারণ, রাষ্ট্রকে জনগণের নিয়ন্ত্রণে আনতে হবে। আমাদের অর্থনীতি আরও গতিশীল করে, গণতন্ত্রকে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ ভালোভাবে দিয়ে দেশের উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ গড়ার যে পদক্ষেপগুলো রয়েছে, সেগুলো আমরা অবশ্যই নেব।’
ঐক্যফ্রন্টের শীর্ষ নেতা বলেন, ‘আমাদের সবচেয়ে বড় সুবিধা হলো অভিজ্ঞতার আলোকে ঐক্যের গুরুত্ব জনগণ বোঝে। সে কারণে আমরা যখন ঐক্যের কথা বলি, তখন অনেক বেশি যুক্তি দিতে হয় না, বেশি ইতিহাস তুলে ধরতে হয় না। জনগণ এটাও বোঝে যে, অনৈক্য থাকলে সন্ত্রাস-দুর্নীতি হয় এবং দেশের ক্ষতি হয়। অতএব আমরা এখন মনে করি, যে ঐক্যের ডাক আমরা দিয়েছি, সেখানে সাড়া পড়েছে। এ ঐক্য আরও সুসংহত করে দেশকে জনগণের নিয়ন্ত্রণে আনব।’
‘জনগণ ক্ষমতার মালিক— এটা আমাদের সংবিধানে লেখা আছে। বারবার নিজেকে বলতে হয়, আমরা ক্ষমতার মালিক। কোনো সরকার বৈধভাবে আসলেও কিন্তু তারা মালিক না। তারা মালিকের প্রতিনিধি। আর যারা অবৈধভাবে ক্ষমতায় আসে, তারা কিছুই না। এখন জনগণকে মালিক হিসেবে ভূমিকা রাখতে হবে। যখনই মানুষ সেই ভূমিকা রেখেছে, তখনই রাষ্ট্র জনগণের নিয়ন্ত্রণে এসেছে’— বলেন ড. কামাল হোসেন।
গণফোরামের সভাপতি বলেন, ‘কার্যকর গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার পূর্ব শর্ত হলো প্রত্যেককে নিজের দিকে তাকিয়ে বলতে হবে, আমি দেশের মালিক। মালিক হওয়াটা মানে আমরা সবাই ঐক্যবদ্ধ হব, সংগঠিত হব, দেশে জনগণের ক্ষমতা প্রতিষ্ঠিত করব যাতে দেশ আমাদের নিয়ন্ত্রণে চলে। মালিক হিসেবে ভূমিকা পালন করতে পারলেই, আমাদের যে স্বপ্ন, লক্ষ্য সেটা পূরণ হবে।’
ড. কামাল বলেন, ‘আমাদের অভিজ্ঞতা হলো বাংলাদেশে জন্ম থেকে এখন পর্যন্ত যারা জনগণের ঐক্যের বিরুদ্ধে দাঁড়িয়েছে, তারা সাময়িকভাবে সফল হলেও শেষ পর্যন্ত টিকতে পারেনি। ঐক্যের ডাক দিলে মানুষ সাড়া দেয়। এবারও সে রকম সাড়া দিয়েছে। সুতরাং এ ঐক্যের ডাক গ্রামে, গ্রামে নিয়ে যান, যাতে জনগণ সত্যিকার অর্থে ক্ষমতার মালিক হিসেবে নিজের ভূমিকা রাখতে পারে।’
এ আর শিকদারের সভাপতিত্বে অন্যদের মধ্যে বক্তব্য দেন জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের (জেএসডি) সভাপতি আ স ম আব্দুর রব, সহ-সভাপতি তানিয়া রব, গণফোরামের সাধারণ সম্পাদক ডা. রেজা কিবরিয়া, বাংলাদেশ সাংস্কৃতিক মুক্তিজোটের প্রধান আবু লায়েস মুন্না, জাতীয় স্টিয়ারিং কমিটির প্রধান মো. সিরাজুল ইসলাম প্রমুখ।