ওপেনার রোহিত শর্মার সেঞ্চুরি ও অজিঙ্কা রাহানের হাফ সেঞ্চুরিতে শুরুর ধাক্কাটা সামলে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে ভালো অবস্থান নিশ্চিত করেছে স্বাগতিক ভারত।
রাঁচিতে সফরকারী প্রোটিয়াদের বিপক্ষে সিরিজের তৃতীয় ও শেষ টেস্টে টস জিতে প্রথমে ব্যাটিং বেছে নেয় ভারত। ব্যাট হাতে নেমে ৩৯ রানেই ৩ উইকেট হারিয়ে বসে টিম ইন্ডিয়া। এরপর চতুর্থ উইকেটে আজিঙ্কা রাহানেকে নিয়ে অবিচ্ছিন্ন ১৮৫ রানের জুটি গড়েন রোহিত শর্মা।
নিজের সেঞ্চুরি করে ১১৭ রানে অপরাজিত আছেন রোহিত। তার সঙ্গী রাহানের সংগ্রহ ৮৩ রান। রোহিত-রাহানের ব্যাটিং দৃঢ়তায় প্রথম দিন শেষে ৫৮ ওভারে ৩ উইকেটে ২২৪ রান করেছে ভারত। চা-বিরতির পর আলোক স্বল্পতার কারণে দিনের খেলা শেষ করে দেন ম্যাচের আম্পায়াররা।
প্রথম দুই ম্যাচ জিতে সিরিজ জয় আগেই নিশ্চিত করেছে ভারত। তাই তৃতীয় ও টেস্ট জিতে দক্ষিণ আফ্রিকাকে হোয়াইটওয়াশের লক্ষ্য টিম ইন্ডিয়ার।
সেই লক্ষ্যে রাঁচিতে টস জিতে প্রথমে ব্যাট হাতে নামতে একটুও কার্পন্য করেনি ভারত। কারণ আগের দু’ম্যাচে আগে ব্যাট করেই দাপটের সাথে ম্যাচ জিতে স্বাগতিকরা। এছাড়া ভারতের ব্যাটসম্যানরা ব্যাট হাতে রানের ফুলঝুড়িও ফুটিয়েছিলেন।
কিন্তু এ টেস্টে নিজেদের ইনিংসের শুরুতেই ব্যাটিং বিপর্যয়ে পড়ে ভারত। দুই ওপেনার মায়াঙ্ক আগারওয়াল ও রোহিত শর্মা একত্রে ৫ ওভার ব্যাটিং করেন।
পঞ্চম ওভারের শেষ বলে আউট হন প্রথম দুই টেস্টে যথাক্রমে ২১৫ ও ১০৮ রান করা আগারওয়াল। দক্ষিণ আফ্রিকার পেসার কাগিসো রাবাদার বলে ডিন এলগারের হাতে ক্যাচ দিয়ে ১৯ বলে ২টি চারে ১০ রানে থামেন আগারওয়াল।
দলীয় ১২ রানে আগারওয়ালের বিদায়ের উইকেটে আসেন চেতেশ্বর পূজারা। ক্রিজে বেশিক্ষণ টিকতে পারেননি তিনি। আবারো আঘাত হানেন রাবাদা। রানের খাতা খোলার আগেই পূজারা লেগ বিফোর ফাঁদে পড়লে ১৬ রানে দ্বিতীয় উইকেট হারায় ভারত।
এ অবস্থায় ক্রিজে রোহিতের সঙ্গী হন অধিনায়ক বিরাট কোহলি। অধিনায়ককে নিয়ে শুরুর ধাক্কা সামাল দেয়ার পরিকল্পনায় ছিলেন রোহিত। আগের দুই জুটির চেয়ে বেশি রানও যোগ করে ফেলেন তারা। ২টি চারে উইকেটে সেট হবার পথেই ছিলেন কোহলি।
কিন্তু দক্ষিণ আফ্রিকার পেসার এনরিখ নর্টির বলে বিদায় ঘটে কোহলির। লেগ বিফোর হবার আগে ২২ বলে ১২ রান করেন কোহলি। এতে ৩৯ রানে উপরের সারির তিন ব্যাটসম্যানকে হারিয়ে মহাচাপে পড়ে ভারত।
বিশাল চাপের সময় জুটি বাঁধেন রোহিত ও রাহানে। দ্রুত মানিয়ে নিয়ে উইকেট পতনের পথ বন্ধ করেন তারা। ৩ উইকেটে ৭১ রান নিয়ে মধ্যাহ্ন বিরতিতে যায় ভারত। প্রথম সেশনে যেভাবে খেলেছিলেন দ্বিতীয় সেশনও সেভাবে শুরু করেন রোহিত-রাহানে।
উইকেট ধরে রেখে ভারতের স্কোর বোর্ড শক্তপোক্ত করতে থাকেন রোহিত-রাহানে। এরই মাঝে টেস্ট ক্যারিয়ারের ১১তম হাফ-সেঞ্চুরির তুলে ফেলেন রোহিত। কম যাননি রাহানেও। স্বাদ নেন ২১তম টেস্ট হাফ-সেঞ্চুরির।
হাফ-সেঞ্চুরি করে রানের গতি বাড়িয়ে দেন রোহিত। তাই চা-বিরতির আগেই ৩০ ম্যাচের টেস্ট ক্যারিয়ারে ষষ্ঠ ও এবারের সিরিজে তৃতীয় সেঞ্চুরির স্বাদ নেন রোহিত। ১৩০তম বলে দক্ষিণ আফ্রিকার স্পিনার ড্যান পিটের ডেলিভারিতে ছক্কা মেরে সেঞ্চুরি পূর্ণ করেন রোহিত।
এই ছক্কার আগে গুড়িগুড়ি বৃষ্টি শুরু হয়েছিল। তাতে মাঠের চারপাশে কভার নিয়ে গ্রাউন্ডসম্যানদের তোড়জোড় শুরু হয়ে যায়। বৃষ্টি নামলেই বন্ধ হয়ে যায় খেলা। তখন সেঞ্চুরির অপেক্ষা নিয়ে প্যাভিলিয়নে যান রোহিত। কিন্তু স্ট্রাইকে গিয়েই কোনোরকম দেরি না করে ছক্কা মেরেই সেঞ্চুরি পূর্ণ করে ফেলেন তিনি।
রোহিতের সেঞ্চুরির পর ৩ উইকেটে ২০৫ রান নিয়ে চা-বিরতিতে যায় ভারত। এসময় রোহিত ১০৮ ও রাহানে ৭৪ রানে অপরাজিত ছিলেন।
চা-বিরতির পর ৬ ওভার ব্যাট করতে সক্ষম হয় ভারত। আলো স্বল্পতার কারণে দিনের খেলা শেষ হয়। ১৪টি চার ও ৪টি ছক্কায় ১৬৪ বলে ১১৭ রানে অপরাজিত আছেন রোহিত। ১১টি চার ও ১টি ছক্কায় ১৩৫ বলে ৮৩ রান নিয়ে দিন শেষ করেন রাহানে। দক্ষিণ আফ্রিকার রাবাদা ৫৪ রানে ২ উইকেট শিকার করেন।
সংক্ষিপ্ত স্কোর
ভারত প্রথম ইনিংস: ২২৪/৩* (৫৮ ওভার)
(রোহিত ১১৭*, রাহানে ৮৩*, রাবাদা ২/৫৪)।