দক্ষিণ কোরিয়ার কোম্পানি ব্লুহোলের তৈরি করা অনলাইন গেম পাবজি (প্লেয়ার আননোনস ব্যাটেল গ্রাউন্ডস) বাংলাদেশে বন্ধ করার পর আবার খুলে দেওয়া হয়েছে। গেমটির মাধ্যমে তরুণরা সহিংসতায় উদ্বুদ্ধ হতে পারে আশঙ্কায় এটি বন্ধ করা হয়েছিল। এর ফলে তরুণ-তরুণীরা জনপ্রিয় অনলাইন গেম পাবজি ইনস্টল করতে পারছিল না।
ডাক ও টেলিযোগাযোগমন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার জানান, রিভিউ করে গেমটি আবার খুলে দেওয়া হয়েছে। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, পাবজি নিষিদ্ধ করা হয়েছিল। সেটা আবার খুলে দেওয়া হয়েছে। আমাদের ধারণা ছিল, এটি খুব ক্ষতিকর একটি বিষয়। পরে পর্যালোচনা করে ক্ষতিকারক এমন কোনো কিছু পাওয়া যায়নি। তাই খুলে দেওয়া হয়েছে। তবে রেডইট ওয়েবসাইট বন্ধ করা হয়েছে। কারণ এখানে পর্নো উপাদান রয়েছে। বাকি সব কটি গেম খুলে দেওয়া হয়েছে।’
এর আগে বাংলাদেশে পাবজি খেলাটি বন্ধ করে দেওয়ার ঘোষণা দেওয়া হয়। গেমটি শিশু-কিশোর শিক্ষার্থীদের সহিংস করে তুলছে এবং তাদের লেখাপড়া থেকে দূরে রাখছে—এমন আশঙ্কা থেকে প্রায় ১০ দিন আগেই গেমটি যাতে বাংলাদেশে খেলা না যায় তার ব্যবস্থা নেওয়া হয়। আইন প্রয়োগকারী সংস্থার সুপারিশে এবং ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রণালয়ের নির্দেশে ওই ব্যবস্থা নেওয়া হয়।
সরকারের ‘সাইবার থ্রেট অ্যান্ড সিকিউরিটি রেসপন্স’ প্রকল্প সূত্র জানায়, পাবজি গেম সম্পর্কে প্রচুর অভিযোগ ও এ বিষয়ে বিস্তর গবেষণার পর বন্ধের ব্যবস্থা নেওয়া হয়। পাবজির পাশাপাশি কল অব ডিউটি, রেডিট, পাবজি লাইট গেমও বন্ধ করা হয়। ডিএমপির সাইবার সিকিউরিটি অ্যান্ড ক্রাইম বিভাগ থেকেও একই তথ্য জানানো হয়।
এর আগে গত এপ্রিলে নেপালে গেমটি নিষিদ্ধ করা হয়। ভারতেও গেমটি নিষিদ্ধ করার চিন্তাভাবনা চলছে। গত এপ্রিলে এ গেমটি নিষিদ্ধ করার জন্য কেন্দ্রীয় সরকারকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দেন মুম্বাই হাইকোর্ট। একটি জনস্বার্থ মামলার পরিপ্রেক্ষিতে এই নির্দেশ দেওয়া হয়।
ভুক্তভোগীরা জানান, অনলাইনে একাধিক ব্যক্তি মিলে খেলতে হয় এ গেম। একটি নির্জন দ্বীপে অন্যদের হত্যা করে নিজেকে টিকে থাকতে হয় গেমটিতে। শেষ পর্যন্ত যে ব্যক্তি বা দল জীবিত থাকে, সে-ই বিজয়ী হয়। বাংলাদেশের তরুণ সমাজ এ গেম খেলার ফলে নেতিবাচকভাবে আসক্ত হচ্ছে— এমন সন্দেহে কয়েক মাস ধরে পাবজি বন্ধের আলোচনা চলছিল।
অক্টোবরের প্রথম সপ্তাহে গেমটি বাংলাদেশে খেলতে সমস্যা হচ্ছিল বলে অনেক গেমার ফেসবুকে পোস্ট দেন। বর্তমানে বাংলাদেশি সার্ভার ব্যবহার করে গেমটিতে ঢোকা যাচ্ছে না।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) সাইবার সিকিউরিটি অ্যান্ড ক্রাইম বিভাগের উপকমিশনার (ডিসি) আ ফ ম আল কিবরিয়া বলেন, ‘এটি বন্ধ করার দায়িত্ব বিটিআরসির। তবে এ গেমটির বিরূপ প্রভাব নিয়ে অনেক দিন ধরেই আলোচনা-সমালোচনা চলছিল। পরে বিষয়টি নিয়ে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে আমাদের বেশ কয়েকবার আলোচনা হয়েছে। বিভিন্ন নেতিবাচক, প্রাযুক্তিক ও মানসিক প্রভাবের কথা বিবেচনায় নিয়ে বিশেষজ্ঞদের মতামতের ভিত্তিতে আমরা গেমটিকে নিরুৎসাহিত করছি।’