ঢাকায় ক্লাব ব্যবসায়ের আড়ালে অবৈধ ক্যাসিনো ব্যবসা পরিচালনা দায়ে গ্রেফতার ঢাকা মহানগর দক্ষিণ যুবলীগের সভাপতি (বহিষ্কৃত) ইসমাইল হোসেন চৌধুরী সম্রাটকে জিজ্ঞাসাবাদে গোয়েন্দা কর্মকর্তাদের তেমন কোনো বেগ পেতে হচ্ছে না। তাকে জিজ্ঞাসা করলেই অকপটে সব বলে দিচ্ছেন।
সম্রাটকে জিজ্ঞাসাবাদের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
গোয়েন্দা জিজ্ঞাসাবাদে সম্রাট এরই মধ্যে চারজন গডফাদারের নাম বলেছেন। যেসব গডফাদারের নাম বলেছেন, তাদের নাম যুবলীগ নেতা খালেদ মাহমুদ ভূঁইয়া ও জি কে শামীমও বলেছেন।
সূত্রে জানা গেছে, সম্রাটকে ‘গডফাদারদের’ মুখোমুখি করা হতে পারে। রিমান্ডে থাকা সম্রাট জিজ্ঞাসাবাদে যাদের (গডফাদার) নাম বলেছেন, তাদের বিষয়ে খোঁজ নেয়া শুরু করেছে একাধিক গোয়েন্দা সংস্থা। অকাট্য প্রমাণ পেলে শিগগিরই তাদের আইনের আওতায় এনে সম্রাটের মুখোমুখি করা হবে।
এছাড়া গোয়েন্দা জিজ্ঞাসাবাদে তিনি বিদেশে অর্থপাচারের পাশাপাশি অবৈধ সম্পদের বিষয়ে অনেক তথ্য দিয়েছেন। এগুলো যাচাই-বাছাই করে প্রমাণ সংগ্রহ করছেন গোয়েন্দারা। প্রমাণ পেলেই তার বিরুদ্ধে মানি লন্ডারিং আইনে মামলা করা হবে।
রাজধানীর রমনা থানায় দায়ের করা মাদক ও অস্ত্র আইনের দুটি মামলায় মঙ্গলবার সম্রাটকে ১০ দিনের রিমান্ডে নেয়া হয়। তার সহযোগী এনামুল হক আরমানকেও পাঁচ দিনের রিমান্ডে নেয়া হয়েছে। শুক্রবার ছিল রিমান্ডের তৃতীয় দিন।
এদিকে ১৮ সেপ্টেম্বর থেকে শুরু হওয়া শুদ্ধি অভিযানের এক মাস পার হয়েছে শুক্রবার। এই অভিযানে ২২১ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। এর মধ্যে প্রভাবশালী যুবলীগ নেতা সম্রাট, খালেদ মাহমুদ ভূঁইয়া ও জি কে শামীমসহ সুপরিচিত ৮ জন রয়েছেন।
এক মাসের এই অভিযানে রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন থানায় মোট ২৭টি মামলা দায়ের করা হয়েছে। এর মধ্যে মাদক ও অস্ত্র আইনে দায়ের করা ১১টি মামলার তদন্ত করছে র্যাব। মানি লন্ডারিং আইনে দায়ের করা ৮টি মামলার তদন্ত করছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)।
এই অভিযানের মূল দায়িত্বে রয়েছে র্যাব। সংস্থাটির দায়িত্বশীল কর্মকর্তারা জানান, এই অভিযান চলমান থাকবে।
বিদেশে পালিয়ে যাওয়ার বিষয়ে সম্রাট গোয়েন্দাদের বলেছেন, চলমান শুদ্ধি অভিযান শুরুর পর সম্রাটের ধারণা ছিল তিনি সব ‘ম্যানেজ’ করতে পারবেন। এ বিষয়ে তার আত্মবিশ্বাসও ছিল। কারণ তার কাছ থেকে আওয়ামী লীগ, যুবলীগ এবং স্বেচ্ছাসেবক লীগের প্রথম সারির কয়েকজন নেতা নিয়মিত মোটা অঙ্কের অর্থ নিতেন।
ঢাকায় দলীয় কোনো কর্মসূচি থাকলে সম্রাট সেখানে মোটা অঙ্কের অর্থ দিতেন। এ কারণে তিনি ভেবেছিলেন তাকে হয়তো গ্রেফতার করা হবে না। কিন্তু পরিস্থিতি বেগতিক দেখে দ্রুত তিনি পরিকল্পনা পরিবর্তন করেন। বিদেশে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেন।
প্রসঙ্গত, ১৮ অক্টোবর ক্যাসিনো, সন্ত্রাস, চাঁদাবাজিসহ নানা অপকর্মে জড়িত থাকার ঘটনায় খালেদ মাহমুদ গ্রেফতার হন। ২০ অক্টোবর চাঁদাবাজি, টেন্ডারবাজি এবং সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে জড়িত থাকার অভিযোগে গ্রেফতার হন জি কে শামীম। এ দু’জনকে গ্রেফতারের পর ব্যাপক আলোচনায় আসে সম্রাটের নাম।
ভারতে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টাকালে ৬ অক্টোবর কুমিল্লার চৌদ্দগ্রাম থেকে সহযোগী আরমানসহ সম্রাটকে গ্রেফতার করে র্যাব। ৭ অক্টোবর র্যাব-১ এর ডিএডি আবদুল খালেক বাদী হয়ে রমনা থানায় অস্ত্র ও মাদক আইনের এ দুটি মামলা করেন। দুই মামলায় আসামিদের আদালতে হাজির করে রিমান্ডের আবেদন করা হয়। আদালত সম্রাটকে ১০ দিনের এবং আরমানের পাঁচ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।