রোহিঙ্গাদের দেশে ফেরানোর আহ্বান অর্থমন্ত্রীর

নিজস্ব প্রতিবেদক

‘রোহিঙ্গাদের জন্য আমরা মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছি। এ জন্য বিশ্বব্যাংক বা অন্য কোনো উন্নয়ন সহযোগীর আর্থিক সহায়তার বিষয়টি আমরা ভাবছি না। আমরা ভাবছি, তাদের দেশে ফেরা ছাড়া কোনো বিকল্প নেই। আশা করি, বিশ্বব্যাংক সবার সঙ্গে আলোচনা করে আমাদেরকে একটা সুন্দর সমাধানের পথ দেখাবে।’-বলে জানিয়েছেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল।

১৯ অক্টোবর ওয়াশিংটনে বিশ্বব্যাংকের প্রধান কার্যালয়ে রোহিঙ্গা বিষয়ক একটা গোলটেবিল বৈঠক এবং বিশ্বের দুটি শীর্ষ স্থানীয় ব্যাংক সিটি ব্যাংক ইন্টারন্যাশনাল ও এইচএসবিসি ব্যাংকের সাথে বৈঠককালে তিনি এসব কথা বলেন। রোববার (২০ অক্টোবর) ওয়াশিংটন থেকে অর্থ মন্ত্রণালয়ের জনসংযোগ কর্মকর্তা গাজী তৌহিদুল ইসলামের পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এসব তথ্য জানানো হয়েছে।

রোহিঙ্গা ইস্যু নিয়ে বৈঠকে দক্ষিণ এশিয়া অঞ্চলের বিশ্বব্যাংকের ভাইস প্রেসিডেন্ট হার্টউইগ শেফার, অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের (ইআরডি) সচিব মনোয়ার আহমেদ, অর্থ সচিব আব্দুর রউফ তালুকদারসহ সংশ্লিষ্টরা উপস্থিত ছিলেন।

কামাল বলেন, রোহিঙ্গা বিষয়ে বিশ্বের সবাই আমাদের সঙ্গে একমত হয়েছে। এতে চীন, ভারত ও জাপান প্রত্যেকে একেকটি বড় ফ্যাক্টর। ফলে এদেরকে বাদ দিয়ে কিছু করা যাবে না। তারা সব আলাপ-আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেবে বলে আমাদের বিশ্বাস। আমাদের চাওয়া রোহিঙ্গারা মিয়ানমারে ফিরে যাবে।

তিনি বলেন, পৃথিবীর অন্যতম প্রধান জনবসতি ঘনত্বপূর্ণ দেশ বাংলাদেশ। বাংলাদেশ হচ্ছে একটি সামাজিক বন্ধন ও সম্প্রীতির দেশ এবং এটি আমাদের সামনে এগিয়ে যাওয়ার জন্যও একটি হাতিয়ার। এখানে একে অপরের কষ্টে ব্যথিত হয়, যেকোনো ধরনের আপদ বিপদে একে অপরকে যেভাবে সাহায্য সহযোগিতা করতে এগিয়ে আসে তা যেকোনো দেশের ইতিহাসে বিরল। কিন্তু রোহিঙ্গা সমস্যার কারণে এটা এখন অনেকটাই হুমকির মুখে। আর তাই বাংলাদেশে অবস্থানরত রোহিঙ্গাদের নিজ দেশ মিয়ানমারে প্রত্যাবসনের কোনো বিকল্প নেই।

অর্থমন্ত্রী আরও বলেন, যেকোনো উপায়ে দ্রুততম সময়ের মধ্যে রোহিঙ্গা নাগরিকদের নিজ দেশে ফেরত পাঠাতে বিশ্বব্যাংকের সহায়তা চাওয়া হয়েছে। রোহিঙ্গাদের জন্য আমরা মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছি। তাই তাদের নিজ দেশে ফিরিয়ে নেয়া অত্যন্ত জরুরি। এ ক্ষেত্রে কোনো বিকল্প ব্যবস্থা নেয়ার সুযোগ নেই, শুধু তাদেরকে ফিরিয়ে নিতে হবে।

তিনি বলেন, প্রাণভয়ে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গা নাগরিকদের বাংলাদেশে মানবিক কারণে আশ্রয় দেয়া হলেও এখন তার উচ্চমূল্য দিতে হচ্ছে। কক্সবাজারসহ ঐ এলাকার পুরো পরিবেশ বিপর্যয়ের মুখে পড়েছে। এতে আমাদের সামাজিকভাবে ও জলবায়ুগত চ্যালেঞ্জ বাড়ছে। আমাদের সামাজিক বন্ধনসহ যে সব ক্ষতি হচ্ছে তা ডলার বা টাকার অংকে পরিমাপ করা সম্ভব নয়। তাই রোহিঙ্গাদের তাদের নিজ দেশে ফিরিয়ে নিয়ে যেতে হবে, এটাই আমাদের প্রধান চাওয়া।

কিভাবে দ্রুত সময়ে রোহিঙ্গারা নিজ দেশে ফিরে যেতে পারে সেই বিষয়ে বিশ্বব্যাপী জনমত গড়ে তোলার জন্য বিশ্বব্যাংকে জোরালো ভূমিকা রাখতে বলেছে বাংলাদেশ। এ বিষয়ে ইতিবাচক মনোভব প্রকাশ করেছেন হার্টউইগ শেফার।

বিশ্বের দুটি শীর্ষ স্থানীয় ব্যাংক সিটি ব্যাংক ইন্টারন্যাশনাল ও এইচএসবিসি ব্যাংকের সাথে বৈঠক সম্পর্কে অর্থমন্ত্রী বলেন, ব্যাংক দুটি বাংলাদেশে পুঁজিবাজার ও বন্ড মার্কেটে বিনিয়োগ বাড়াতে চায়। এ সংক্রান্ত আলাদাভাবে দুটি প্রস্তাব করা হয়েছে।

তিনি বলেন, এইচএসবিসি মালয়েশিয়ায় জনপ্রিয় সুকুব বন্ড ইস্যু করতে চায়। বাংলাদেশের ব্যাংকিং খাতে পাবলিক ব্যাংকিং ব্যবস্থায় ইসলামী ব্যাংকিং পদ্ধতি চালু নাই। তবে সেটা বেসরকারি খাতের ব্যাংকগুলোতে চালু রয়েছে। এ জন্য তাদের প্রস্তাব নিয়েছি, এগুলো যাচাই-বাছাই করে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে। বৈদেশিক উৎস থেকে নেয়া ঋণগুলো এখন থেকে টাকায় পরিশোধের জন্য প্রস্তাব এসেছে।

অর্থমন্ত্রী বলেন, এ ক্ষেত্রে এই দুটি ব্যাংকের মাধ্যমে ঋণ পরিশোধ করার প্রস্তাবনা তুলে ধরা হয়েছে। তবে এ ব্যাপারে এখনও চূড়ান্ত কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। কেননা ডলারের বিপরীতে টাকার মান সব সময় উঠানামা করে। এ ক্ষেত্রে টাকার মূল্যমান নির্দিষ্ট রেখে ডলারের বিপরীতে নেয়া ঋণ বাংলাদেশি টাকায় পরিশোধ করা হলে বাংলাদেশ লাভবান হবে।

শেয়ার করুন

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে