চলমান ক্যাসিনো বিরোধী অভিযানের অংশ হিসেবে ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের (ডিএনসিসি) ৩৩ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর তারেকুজ্জামান রাজীবকে গ্রেফতার করেছে র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব)।
শনিবার রাতে রাজধানীর বসুন্ধরা আবাসিক এলাকার একটি বাসায় অভিযান চালিয়ে তাকে গ্রেফতার করে র্যাব-১। গ্রেফতারের পর তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে।
র্যাব-১ এর এএসপি (মিডিয়া) কামরুজ্জামান বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। তিনি বলেন, এদিন রাত সাড়ে ১০টার দিকে এ অভিযান শুরু করা হয়। বসুন্ধরা আবাসিক এলাকার ৮ নম্বর রোডের ৪০৪ নং বাসা (নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ঠিক বিপরীত পাশে) পুরো ঘিরে রাখা হয়।
কামরুজ্জামান বলেন, গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে র্যাব জানতে পারে এ বাড়িতে ক্যাসিনো ও জুয়া আসর চলছে। এ খবর পেয়েই সেখানে অভিযান চালানো হয়।
প্রসঙ্গত, গেল ১৮ সেপ্টেম্বর থেকে রাজধানীতে ক্যাসিনোবিরোধী অভিযান চলছে। এ সময়ে গডফাদারসহ ১৮ জনকে গ্রেফতার করেছে র্যাব। এদের মধ্যে যুবলীগের ঢাকা মহানগর দক্ষিণের সভাপতি ইসমাইল হোসেন সম্রাট ও সাংগঠনিক সম্পাদক খালেদ মাহমুদ ভূঁইয়া, যুবলীগ নেতা জি কে শামীমসহ অনেকের বাসা ও কার্যালয়ে তল্লাশি চালিয়ে বিপুল পরিমাণ নগদ টাকা, অস্ত্র ও মাদক উদ্ধার করা হয়েছে।
এছাড়া বিভিন্ন ক্যাসিনোয় অভিযান চালিয়ে ২০১ জনকে আর্থিক জরিমানাসহ বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ড দিয়েছেন ভ্রাম্যমাণ আদালত।
জিজ্ঞাসাবাদ চলছে
চলমান ক্যাসিনোবিরোধী অভিযানের অংশ হিসেবে সুনির্দিষ্ট অভিযোগে আটকের পর ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের ৩৩ নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর তারেকুজ্জামান রাজীবকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে।
অভিযানে থাকা র্যাবের একাধিক কর্মকর্তা গণমাধ্যমকে জানান, রাজীবকে আটকের পর ওই বাড়িতে তল্লাশি চালানো হচ্ছে। তাকে ওই বাড়িতে রেখেই জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। পরে রাজীবকে নিয়ে তার কার্যালয় এবং বাসভবনে অভিযানে যাবেন র্যাব কর্মকর্তারা।
মোহাম্মদপুরে ত্রাসের রাজত্ব
তারেকুজ্জামান রাজীব ওয়ার্ড কাউন্সিলর। এই পদকে পুঁজি করে রাজধানীর মোহাম্মদপুরে চাঁদাবাজি, দখলবাজি, টেন্ডারবাজি, মাদক ব্যবসা, ডিশ ব্যবসা নিয়ন্ত্রণ করতেন। সন্ত্রাসী বাহিনী দিয়ে ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করায় তার ভয়ে কেউ মুখ খুলতেন না।
আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কাছে তথ্য আছে, এলাকায় যুবলীগের রাজনীতি দিয়েই রাজীবের রাজনৈতিক জীবন শুরু। অল্পদিনেই নেতাদের সান্নিধ্যে মোহাম্মদপুর থানা যুবলীগের যুগ্ম আহ্বায়ক পদ বাগিয়ে নেন।
কেন্দ্রীয় যুবলীগের এক নেতাকে ১ কোটি ২০ লাখ টাকা দিয়ে ঢাকা মহানগর উত্তর যুবলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক পদ পান।২০১৫ সালের কাউন্সিলর নির্বাচনে তিনি ছিলেন আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী। দলীয় প্রার্থী ও মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের সিনিয়র সহ-সভাপতি শেখ বজলুর রহমানকে হারিয়ে নির্বাচিত হন তিনি।
- আরও পড়ুন >> টাকা পাচার ঠেকাতে বাংলাদেশ ব্যাংক ও এনবিআরের বহুমুখী উদ্যোগ
- আরও পড়ুন >> কাতারে ‘কাফালা’ বাতিলে উপকৃত হবেন প্রবাসীরা
- আরও পড়ুন >> জালিয়াতি : এমপি বুবলীর সব পরীক্ষা বাতিল
এরপর তিনি নিজের এলাকায় রাজত্ব গড়ে তুলেছেন। চাঁদাবাজি, দখলদারিত্ব, টেন্ডারবাজি, কিশোর গ্যাং নিয়ন্ত্রণ আর মাদকসেবীদের আখড়ায় পরিণত করেন। ৪ বছরে ৮-১০টির বেশি নামিদামি ব্র্যান্ডের গাড়ি কিনেছেন। যার মধ্যে মার্সিডিজ, বিএমডব্লিউ, ক্রাউন প্রাডো, ল্যান্ডক্রুজার ভি-৮, বিএমডব্লিউ স্পোর্টস কার রয়েছে। বাসস্ট্যান্ড, সিএনজি স্ট্যান্ড, ফুটপাতে তার সহকারীরা চাঁদা তুলতেন নিয়মিত। গুলশান ও মোহাম্মদপুরে তার আটটি ফ্ল্যাট আছে।
অভিযোগ আছে, রাজীব মোহাম্মদীয়া হাউজিং সোসাইটির ১ নং রোড এলাকায় পানির পাম্পের জন্য নির্ধারিত জায়গায় বাড়ি বানিয়েছেন। বাড়ির জায়গাটির দামই প্রায় সাড়ে তিন কোটি টাকা।