বয়সের সীমারেখা আরোপের পর যুবলীগে বয়স্করা নেতৃত্বের দৌড়ে ছিটকে গেলেও আলোচনায় এসেছেন তরুণরা। যারা ভবিষ্যতে সংগঠনটিতে শীর্ষ পদের দাবিদার। নেতৃত্ব বাছাইয়ের ক্ষেত্রে বয়সের এই নির্ণায়ককে স্বাগত জানিয়ে তারা বলছেন, এর মাধ্যমে যুবলীগ তার অতীত ঐতিহ্যের ধারাবাহিকতা রক্ষা করে নতুন দিনের সূচনা করবে।
যুবলীগের নতুন নেতৃত্বের দৌড়ে নেতারা দৃষ্টি রাখছেন তার প্রতিদ্বন্দ্বি সতীর্থদের বয়স কত সেদিকে। অর্থাৎ বয়স এখন যুবলীগের রাজনীতিতে বড় ফ্যাক্ট। পদপ্রত্যাশীরা একে অন্যের কত বয়স- এ বিষয়ে খোঁজ নিচ্ছেন।
যুবলীগের সপ্তম কংগ্রেস উপলক্ষে সংগঠনের নেতারা গতকাল রোববার গণভবনে দলীয় সভাপতি শেখ হাসিনার সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে গেলে তিনি যুবলীগ করার ক্ষেত্রে বয়সের সীমারেখার কথা জানান।
ওই বৈঠকের পর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের জানান, যুবলীগের যে জাতীয় কংগ্রেস আগামী ২৩ নভেম্বর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে অনুষ্ঠিত হবে, তার জন্য বয়সসীমা নির্ধারণ হয়েছে ৫৫ বছর।
মূলত এরপরই যুবলীগের শীর্ষ পদের জন্য যারা প্রত্যাশী তারা খোঁজ নিতে শুরু করেছেন তার প্রতিদ্বন্দ্বি প্রার্থীর বয়সের। অর্থাৎ বয়সের সীমানা যুবলীগের রাজনীতিকে নতুন মোড় দিয়েছে।
জানা গেছে, যুবলীগের শীর্ষ দুই পদের জন্য আলোচনায় থাকা সংগঠনটির প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান শেখ ফজলুল হক মনির ছেলে সংসদ সদস্য ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নূর তাপসের বয়স ৪৯। অপর ছেলে শেখ ফজলে শামস পরশের ৫১, শেখ সেলিমের ছেলে এফবিসিসিআইয়ের বর্তমান প্রেসিডেন্ট শেখ ফজলে ফাহিম ও আরেক ছেলে শেখ ফজলে নাঈমের বয়সও ৫৫ বছরের কম। যুবলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক মির্জা আজমের বয়স ৫৫ বছর।
অন্যদের মধ্যে যুবলীগের বর্তমান কমিটির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মহিউদ্দিন আহমেদ মহির বয়স ৫২, সুব্রত পালের ৫০, সাংগঠনিক সম্পাদক মোহাম্মদ বদিউল আলমের ৫০, সাংগঠনিক সম্পাদক ফারুক হাসান তুহিনের ৫২, উপ-গ্রন্থনা ও প্রকাশনা সম্পাদক ইকবাল মাহমুদ বাবলুর বয়স ৪১ বছর।
এছাড়া ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি বাহাদুর বেপারির ৫৩, সাবেক সাধারণ সম্পাদক নজরুল ইসলাম বাবুর ৪৮, ছাত্রলীগের সহ সভাপতি সৈয়দ আলাউল ইসলাম সৈকত ৪০, ছাত্রলীগের সাবেক সহ সম্পাদক ও জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রলীগের সাবেক প্রচার সম্পাদক এবং যুবলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য এন আই আহমেদ সৈকতের বয়স ৩৯ বছর।
যুবলীগের নতুন বয়সসীমার সিদ্ধান্তের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে মহিউদ্দিন আহমেদ গণমাধ্যমকে বলেন, দল হোক বা রাষ্ট্র পরিচালনার ক্ষেত্রে হোক, জননেত্রী শেখ হাসিনা যে সিদ্ধান্ত নিয়েছেন সেগুলো সবসময় সঠিক হয়েছে। যুবলীগের ক্ষেত্রেও তিনি মনে করেছেন বয়সের একটা বাউন্ডারি থাকা উচিত। ওনার এই সিদ্ধান্তকে আমরা স্বাগত জানাই।
বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, বয়সের ক্যাটাগরিতে বাদ পড়তে যাচ্ছেন যুবলীগের প্রেসিডিয়ামের অধিকাংশ সদস্য। প্রেসিডিয়ামে যতজন সদস্য রয়েছেন তার মধ্যে পাঁচজন ছাড়া আর কারোরই যুবলীগ করার বয়স নেই। ৫৫ বছরের নিচে যে পাঁচজন প্রেসিডিয়াম সদস্যের বয়স আছে তারা হচ্ছেন মো. আতাউর রহমান, অ্যাডভোকেট বেলাল হোসেন, অ্যাডভোকেট মোতাহের হোসেন সাজু, ইঞ্জিনিয়ার নিখিল গুহ, আনোয়ার হোসেন।
সূত্র মতে, রোববার দলীয় সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে সংগঠনের শীর্ষ নেতাদের গণভবনে যে বৈঠক হয়েছে তাতে যুবলীগের একজন প্রেসিডিয়াম সদস্য যুবলীগ করার বয়স ৬৫ করার প্রস্তাব করেন। তখন দলীয় প্রধান শেখ হাসিনা তাকে বলেন, তরুণদের সংগঠনে আসার সুযোগ করে দিতে হবে। এজন্য বয়সের সীমানা থাকা দরকার।
প্রেসিডিয়ামের আরেকজন বয়স সীমা ৬৫ করার প্রস্তাব করলে দলীয় প্রধান তাকে বলেন, অনেক যুবলীগ করেছো, এবার এলাকায় গিয়ে আওয়ামী লীগের রাজনীতি করো।
আওয়ামী লীগের দলীয় সূত্রে জানা গেছে, যুবলীগে গতি আনার জন্যেই সংগঠনে তারুণ্য নির্ভর নেতৃত্ব আনতে চাইছে দলের হাইকমান্ড। সে জন্যই বয়সের সীমারেখা নিয়ে আসা হয়েছে যুবলীগে। এছাড়া দীর্ঘদিন সাবেক ছাত্রলীগ নেতা যারা রয়েছেন, তাদেরকে যুবলীগ করার সুযোগ তৈরি করতেই বয়সের এই দেয়াল।
যুবলীগের বর্তমান কমিটির একজন নেতা জানান, নেত্রী যখন বয়সসীমা ৫৫ করার কথা বলেন, তখন সেখানে থাকা অপেক্ষাকৃত তরুণরা হাততালি দিয়ে স্বাগত জানান। আর বয়স্করা বিষয়টি ভালো চোখে দেখেননি।
যুবলীগের নেতা-কর্মীরা বলছেন, বয়স সীমা ৫৫ নির্ধারণের পর থেকেই সংগঠনের নেতাদের মধ্যে তারুণ্য নির্ভর কমিটি হওয়ার সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে। তরুণ যুবলীগ নেতারাও পদপ্রত্যাশার আশা আশান্বিত হয়েছেন। অনেকেই কর্মীদের সঙ্গে যোগাযোগ বাড়িয়ে দিয়েছেন।
উল্টোদিকে যারা বয়সের নির্ণায়কে বাদ পড়তে পারেন এমন সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে, তারা হতাশ হয়েছেন। অনেকেই সম্মেলনের আগেই নিস্ক্রিয় হতে পারেন এমন সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে।
এদিকে যুবলীগে বয়সের সীমানা আরোপ করায় এখন আশাবাদী হয়ে উঠেছেন সাবেক ছাত্রলীগ নেতারা। তারা ছাত্রলীগ থেকে সাবেক হওয়ার পর কোনো জায়গায় পদায়ন হননি। আওয়ামী লীগের হাইকমাণ্ডে এবার ছাত্রলীগের সেসব নেতা যারা এক-এগারোর প্রেক্ষাপট এবং বিরোধীদলে নির্যাতন ও নিপীড়নের শিকার হয়েছে, তাদের অনেককেই সংগঠনের দায়িত্বে আনার সম্ভাবনা রয়েছে।