গণহত্যা ও নির্যাতনের মুখে বাংলাদেশে এসে আশ্রয় নেয়া লাখ লাখ রোহিঙ্গা নাগরিককে নিজ দেশে ফেরানো নিয়ে ছলচাতুরি করে আসছে মিয়ানমার।
জানা যায়, বারবার আশ্বাস দিয়ে একজন রোহিঙ্গাকে ফিরিয়ে না নিলেও দেশটি এবার দাবি করছে এখন পর্যন্ত ৩৫১ রোহিঙ্গাকে ফিরিয়ে নিয়েছে। সম্প্রতি ২৯ জনকে ফিরিয়ে নেয়ার কথা দাবি করেছে দেশটি।
আজ মঙ্গলবার মিয়ানমারের ঢাকার দূতাবাস তাদের ফেসবুক পেজে পোস্ট করে এমন তথ্য জানায়।
মিয়ানমারের দূতাবাস ফেসবুক পেজে ছবি দিয়ে ২৯ রোহিঙ্গা শরণার্থীর দেশে ফেরার তথ্য দেওয়া হয়েছে। যেখানে বলা হয়েছে, দেশটির তাং পিয়ানো লেটো রিসেপশন সেন্টারের মাধ্যমে বাংলাদেশ থেকে তারা মিয়ানমারে ফিরেছেন। প্রত্যাবাসনকালে দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, সমাজকল্যাণ, ত্রাণ ও পুনর্বাসন মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা ফিরে যাওয়া রোহিঙ্গাদের অভিবাদন জানান।
মিয়ানমারের দাবি, এখন পর্যন্ত ৩৫১ রোহিঙ্গা শরণার্থী তাদের নিজ ভূমে ফিরে গেছেন। তাদের থাকা-খাওয়াসহ সবধরনের সুবিধা দিচ্ছে দেশটি। তবে তাদের রাখাইনে না পাঠিয়ে ক্যাম্পেই রাখা হয়েছে।
দূতাবাস পেজে আরও জানানো হয়, মিয়ানমার সরকার শরণার্থীদের নিরাপদ, স্থায়ী ও মসৃণ প্রত্যাবাসন নিশ্চিত করতে বাংলাদেশ সরকার ও জাতিসংঘকে পূর্ণ সহযোগিতা দিয়ে যাবে।
এ ব্যাপারে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা গণমাধ্যমকে বলেন, এ বিষয়ে আমরা কিছুই জানি না। প্রত্যাবাসন শুরু হলে সেটা আনুষ্ঠানিকভাবেই করা হবে। সবাইকে জানিয়ে করা হবে, এভাবে গোপনে নয়।
রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন নিয়ে মিয়ানমার দূতাবাসের এই মিথ্যাচারে খুব দ্রুত দেশটির ঢাকায় নিযুক্ত রাষ্ট্রদূতকে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় তলব করা হবে বলেও জানান এই কর্মকর্তা।
মিয়ানমারের এই মিথ্যাচার নতুন নয়। রোহিঙ্গা ইস্যুতে তারা বিভিন্ন সময় মিথ্যাচার করে এসেছে। সবশেষ চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি মাসে দেশটি বঙ্গোপসাগরে বাংলাদেশের দ্বীপ সেন্টমার্টিনের কিছু অংশ নিজের ভূমি বলে দাবি করে। পরে অবশ্য দেশটির দূতকে ডেকে প্রতিবাদ জানানোর পর সেই দাবি প্রত্যাহার করে নেয়।
২০১৭ সালের আগস্ট থেকে গণহত্যা ও নির্যাতনের মুখে লাখ লাখ রোহিঙ্গা নাগরিক বাংলাদেশে এসে আশ্রয় নিতে থাকে। আগেও বিভিন্ন সময় কয়েক লাখ রোহিঙ্গা বাংলাদেশে চলে আসে। সব মিলিয়ে ১১ লাখের বেশি রোহিঙ্গা এখন বাংলাদেশে রয়েছে।
তাদেরকে ফেরাতে বারবার চেষ্টা করেও ব্যর্থ হচ্ছে বাংলাদেশ। মানবিক দিক বিবেচনায় তাদের আশ্রয় দেয়া হলেও এখন রোহিঙ্গারা বাংলাদেশের জন্য বড় সমস্যার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।