ভোলার বোরহানউদ্দিনে সাধারণ মুসল্লিদের বিক্ষোভ সমাবেশে পুলিশের সঙ্গে এলাকাবাসীর সংঘর্ষে চারজন নিহত ও শতাধিক লোক আহত হয়েছে। রবিবার বেলা ১১টার দিকে এ সংঘর্ষে উপজেলার ঈদগাহ মাঠ রণক্ষেত্রে পরিণত হয়। শুক্রবার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকের মেসেঞ্জারে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিনষ্ট করার লক্ষে সংখ্যালঘু এক ব্যক্তির আইডি থেকে ইসলাম ধর্ম ও নবী (স.)কে কটূক্তি করে কয়েকজনকে কুরুচিপূর্ণ মেসেজ পাঠানোর প্রেক্ষিতে এই সংঘর্ষের সূত্রপাত বলে সংবাদ মাধ্যমে খবর প্রকাশিত হয়েছে্। আমরা এই ঘটনার তীব্র প্রতিবাদ জানাই।
জানা গেছে, এ বিক্ষোভ মিছিল না করার জন্য স্থানীয় দুই ইমামকে অনুরোধ জানায় পুলিশ। তাদের অনুরোধে ঐ দুই ইমাম রবিবার সকাল ১০টার দিকেই দোয়া-মোনাজাতের মাধ্যমে বিক্ষোভ মিছিলটি সমাপ্তও করেন। কিন্তু সেখানে উপস্থিত একদল লোক উপস্থিত জনতাকে উত্তেজিত করার মাধ্যমে ঐ দুই ইমাম এবং সেখানে থাকা পুলিশের ওপর চড়াও হয়। পুলিশ আত্মরক্ষার্থে মসজিদের ইমামের রুমে আশ্রয় নেয়। একপর্যায়ে আক্রমণকারীদের একদল আগ্নেয়াস্ত্রে সজ্জিত হয়ে পুলিশ ও অন্যান্য কর্মকর্তার ওপর আক্রমণ চালান। আক্রমণকারীদের গুলিতে ও হামলায় বরিশাল রেঞ্জের অতিরিক্ত ডিআইজিসহ পুলিশের তিন সদস্য মারাত্মক আহত হন। এমন পরিস্থিতিতে ইউএনও ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের নির্দেশে আত্মরক্ষার্থে ও সরকারি জানমাল রক্ষার্থে ও উত্তেজিত লোকজনকে নিবৃত্ত করার জন্য প্রথমে টিয়ারশেল ও পরে শটগান চালায় পুলিশ।
পরিস্থিতির ভয়াবহতা বেড়ে গেলে একপর্যায়ে ম্যাজিস্ট্রেটের নির্দেশে পুলিশ গুলি চালাতে বাধ্য হয়। আক্রমণকারীদের গুলিতে মারাত্মক আহত পুলিশ সদস্যকে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকার সিএমএইচে স্থানান্তর করা হয়েছে। এ ঘটনায় নিহত চারজনের মধ্যে অন্তত দুজনের মাথা ভোঁতা অস্ত্র দ্বারা থেঁতলানো বলে নিশ্চিত করেছেন কর্তব্যরত চিকিৎসক। আমরা মনে করি ঘটনাস্থলে এসে পরিস্থিতিকে ঘোলাটে এবং উত্তপ্ত করার ক্ষেত্রে কে কে ইন্দন যুগিয়েছে তাদেরকে খুঁজে বের করে দ্রুত আইনের আওতায় আনা দরকার।
অভিযোগ উঠেছে, শুক্রবার বিকেলে বিপ্লব চন্দ্র শুভ নামের ফেসবুক আইডি থেকে তার ফ্রেন্ড লিস্টের বেশ কয়েক জনের কাছে ইসলাম ধর্ম ও নবী নিয়ে কুরুচিপূর্ণ ভাষার মেসেজ আসে। পরে কয়েকটি আইডি থেকে মেসেজগুলোর স্ক্রিনশট নিয়ে ফেসবুকে প্রতিবাদ জানালে বিষয়টি দ্রুতই ভাইরাল হয়ে যায়। এ অবস্থায় বিপ্লব চন্দ্র বৈদ্য (২৫) ওরফে শুভ নামে এক যুবক রাত ৮টা ৫ মিনিটে ভোলা জেলার বোরহানউদ্দিন থানায় জিডি করেন, যার জিডি নং-৪৪০। জিডি করার সময় থানায় অবস্থানের সময়েই বিপ্লব চন্দ্র বৈদ্যের নম্বরে একটি কল আসে এবং তার কাছে চাঁদা দাবি করা হয়। বিষয়টি তাৎক্ষণিকভাবে তিনি ওসিকে জানান। ওসি বিষয়টি ভোলা জেলার পুলিশ সুপারকে জানান। প্রযুক্তির সাহায্য নিয়ে সেদিন রাতের মধ্যেই বিপ্লব চন্দ্র বৈদ্যের ফেসবুক অ্যাকাউন্ট হ্যাককারী ও তার মোবাইলে কলকারী শরিফ এবং ইমন নামে দুই মুসলিম যুবককে পটুয়াখালী এবং বোরহানউদ্দিন থেকে আটক করে পুলিশ। আটকের পর জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তাদের বোরহানউদ্দিন থানায় নেয়ার পরও কারা সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিনষ্ট করার চেষ্টা করেছে তা খতিয়ে দেখা উচিত।
এর আগেও ফেসবুকে ধর্ম অবমাননা করার গুজব ছড়িয়ে দেশের বিভিন্ন স্থানে ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের ওপর হামলার ঘটনা ঘটেছে। ২০১২ সালের ২৯ সেপ্টেম্বর রাতে কক্সবাজার জেলার রামুতে হামলা চালিয়ে লুটপাটসহ ১২টি বৌদ্ধ মন্দির ও ৩০টি বাড়িতে অগ্নিসংযোগ করে একদল দুর্বৃত্ত। এছাড়া ২০১৬ সালে ব্রাক্ষণবাড়িয়ার নাসিরনগরে রসরাজ নামের এক মৎস্যজীবীর বিরুদ্ধে এমন অভিযোগ এনে লোকজনকে উসকানি দিয়ে খেপিয়ে তুলে বাড়িঘর ও মন্দিরে হামলা চালানো হয়। যার কোনটির বিচার এখনো নিষ্পত্তি করা হয়নি। আমরা মনে করি যারা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ইসলাম ধর্ম ও নবীর নামে কুরুচিপূর্ণ পোস্ট ভাইরাল করে দেশের সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিনষ্টের মাধ্যমে দেশকে অস্থিতিশীল করার চেষ্টা করছে তারা প্রকৃত অর্থে দেশদ্রোহী। এসব উসকানিদাতাদের চিহ্নিত করে দ্রুত আইনের আওতায় এনে শাস্তি নিশ্চিত করা হোক।