এক বছরে শাহজালাল ব্যাংকে খেলাপি ঋণ বেড়েছে ৪৮ শতাংশ

ডেস্ক রিপোর্ট

শাহজালাল ইসলামী ব্যাংক

দেশের ব্যাংকগুলোর মন্দ ঋণ কমানোর জন্য সরকারের নানা উদ্যোগের মধ্যেই বেসরকারি শাহজালাল ইসলামী ব্যাংকে হু হু করে বাড়ছে খেলাপি ঋণ। গত এক বছরে এই ব্যাংকে খেলাপি ঋণ বেড়েছে প্রায় ৪৮ শতাংশ।

চলতি বছরের জানুয়ারিতে নতুন অর্থমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব নিয়ে আ হ ম মুস্তফা কামাল ঘোষণা দেন, ব্যাংকের খেলাপি ঋণ আর এক টাকাও বাড়বে না। মন্ত্রীর ঘোষণা বাস্তবায়নের জন্য বাংলাদেশ ব্যাংক ও অর্থ মন্ত্রণালয় নানা ধরনের উদ্যোগ নেয়।

এরই অংশ হিসেবে বাংলাদেশ ব্যাংক, সরকারি ব্যাংকের চেয়ারম্যান, এমডি, বেসরকারি ব্যাংক মালিকদের সংগঠন বিএবি, এমডিদের সংগঠন এবিবির সঙ্গে কয়েক দফা বৈঠক করেন অর্থমন্ত্রী।

এই উদ্যোগের ধারাবাহিকতায় এখন ২ শতাংশ ডাউন পেমেন্ট দিয়ে সর্বোচ্চ ১০ বছরের জন্য পুনঃতফসিল সুবিধা দেওয়া হয়। ঋণের ধরন বিবেচনা করে পরিশোধে এক বছরের জন্য গ্রেস পিরিয়ডেরও ব্যবস্থা করেছেন।

কিন্তু বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রকাশিত এক প্রতিবেদন পর্যালোচনা করে দেখা যায়, খেলাপি ঋণ কমিয়ে আনতে সরকারের নেওয়া ব্যবস্থার কোনো প্রতিফলন নেই শাহজালাল ইসলামী ব্যাংকে। বরং দিন দিন বেড়েই চলেছে এর খেলাপি ঋণের পরিমাণ।

আরও নানা ক্ষেত্রে ব্যাংকটির অনিয়ম বেরিয়ে আসছে। খাদ্যনিরাপত্তা ও গ্রামীণ অর্থনীতিতে অর্থ সরবরাহ বাড়ানোর জন্য কৃষিঋণের ক্ষেত্রে ব্যাংকগুলোর যে বাধ্যবাধকতা রয়েছে তার কোনো তোয়াক্কা করেনি শাহজালাল ব্যাংক। চলতি অর্থবছরের জন্য তাদের ৩৩৩ কোটি টাকার লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে তিন মাসে (জুলাই-সেপ্টেম্বর) বিতরণ করেছে মাত্র ৬ কোটি ৪৯ লাখ টাকা।

ঋণ সম্পর্কিত বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদন থেকে দেখা যায়, চলতি বছরের গত জুন শেষে শাহজালাল ব্যাংকের খেলাপি ঋণ দাঁড়িয়েছে ১১৬১ কোটি ৩৭ লাখ টাকা, যা ২০১৭ সালের জুনে ছিল ৬৩৯ কোটি ৬৫ লাখ টাকা। শতাংশীয় হিসাবে বৃদ্ধি ৮১ দশমিক ৫৬ শতাংশ।

বছরভিত্তিক হিসাবে ২০১৭ সালের জুন থেকে ১৫২ কোটি ৪৬ লাখ টাকা বেড়ে ২০১৮ জুন পর্যন্ত খেলাপি ঋণ দাঁড়ায় ৭৯২ কোটি ১১ লাখ টাকা, যা শতাংশীয় হিসাবে প্রায় ২৪ শতাংশ।

এ থেকে গত এক বছরে ৩৬৯ কোটি ২৬ লাখ টাকা বেড়ে খেলাপি ঋণের প্রবৃদ্ধি ঘটে প্রায় দ্বিগুণ- ৫০ শতাংশ। চলতি বছরের জুন শেষে মোট খেলাপি ঋণ দাঁড়িয়েছে ১১৬১ কোটি ৩৭ লাখ টাকা।

প্রতিবেদন অনুযায়ী, ব্যাংকগুলোর ঋণের ঝুঁকি বিবেচনা করে তার বিপরীতে প্রভিশন সংরক্ষণ করতে হয়। চলতি জুন শেষে ব্যাংকের প্রভিশন ঘাটতি ১০০ কোটি ৩৩ লাখ টাকা। কিন্তু প্রয়োজনীয় প্রভিশন রাখতে ব্যর্থ হয়েছে শাহজালাল ইসলামী ব্যাংক।

এ বিষয়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সাবেক গভর্নর সালেহ উদ্দিন আহমেদ বলেন, একদিকে খেলাপি ঋণ বেড়ে গেছে, অন্যদিকে বিশেষ সুবিধায় নিয়মিত ঋণগুলো ঠিকমতো আদায় হচ্ছে না। ফলে প্রভিশন ঘাটতি বাড়ছে।

খেলাপি ঋণ কমাতে না পারার পেছনে ব্যাংকগুলোতে সুশাসনের ঘাটতি দেখছেন সাবেক গভর্নর। বলেন, সরকার খেলাপিদের একের পর এক সুবিধা দিয়ে যাচ্ছে, কিন্তু খেলাপি ঋণ কমাতে পারছে না। এর কারণ ব্যাংকগুলোতে জবাবদিহি নেই, সুশাসনের অভাব।

খেলাপি ঋণ কমাতে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কার্যকর উদ্যোগ নেয়া ছাড়া কোনো পথ নেই উল্লেখ করে সালেহ উদ্দিন বলেন, আগামীতে খেলাপি যেন আর না বাড়ে সে জন্য ব্যাংকগুলোকে দেখেশুনে ঋণ দিতে হবে। অনৈতিকভাবে যাতে পুনঃতফসিল সুবিধা নিতে না পারে তা তদারক করতে হবে। একই সঙ্গে যেসব বেসরকারি ব্যাংক প্রভিশন ঘাটতিতে রয়েছে সেখানে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নজরদারি জরুরি বলে মনে করেন সাবেক এ গভর্নর।

খেলাপি ঋণের সমস্যা সমাধানে বাংলাদেশ ব্যাংক এরই মধ্যে বেশ কিছু পদক্ষেপ নিয়েছে বলে জানান কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র সিরাজুল ইসলাম। তিনি বলেন, আমরা ব্যাংকগুলোর সঙ্গে নিয়মিত আলোচনা করে যাচ্ছি।

এদিকে বিভিন্ন ব্যাংকের অনিয়ম-দুর্নীতি তদন্তে নেমেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এর মধ্যে শাহজালাল ইসলামী ব্যাংক অন্যতম।

সরকারি নানা সুবিধার পরও এভাবে খেলাপি ঋণ বৃদ্ধি প্রসঙ্গে জানতে ব্যাংকটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও অতিরিক্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালককে ফোন করেও যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি।

শেয়ার করুন

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে