গ্রেড পরিবর্তন ও বেতন বৈষম্য নিরসনের দাবিতে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে শিক্ষকদের পূর্বঘোষিত মহাসমাবেশে বাধা দিয়েছে পুলিশ। কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে শিক্ষকরা প্রবেশ করতে চাইলে পুলিশ তাদেরকে বাধা দেয় এবং ছত্রভঙ্গ করে দেয়।
আজ বুধবার দুপুর ১২টার দিকে শহীদ মিনারের সামনে অবস্থান নেয়া শিক্ষকদের ছত্রভঙ্গ করে দেয় পুলিশ। এ সময় শিক্ষকরা শহীদ মিনারের সামনে থেকে সরে গিয়ে পাশেই অবস্থান নেন। পুলিশের বাধার মুখে আন্দোলনরত শিক্ষকরা ছত্রভঙ্গ হয়ে দুই ভাগে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চিকিৎসা কেন্দ্র ও ঢাকা মেডিকেল কলেজের বহির্বিভাগের সামনের রাস্তায় অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ করছেন। পুলিশও দুই ভাগে শিক্ষকদেরকে সরিয়ে দেয়ার চেষ্টা করছেন।
এ সময় বিক্ষোভরত এক শিক্ষককে পুলিশ আটক করার চেষ্টা করলে সে জ্ঞান হারিয়ে ফেলেন। পরে কয়েকজন শিক্ষক তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজে (ঢামেক) হাসপাতালে নিয়ে যান।
এদিকে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে মহাসমাবেশে যোগ দিতে সকাল থেকেই বিভিন্ন জেলা থেকে আসা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকরা শহীদ মিনারের আশপাশে জড়ো হতে থাকেন। প্রাথমিক শিক্ষক ঐক্য পরিষদের আহ্বায়ক মোহাম্মদ ছামছুদ্দীন মাসুদ জানান, প্রায় ১০ হাজার শিক্ষক তাদের এ সমাবেশে অংশ নেবেন।
তবে শিক্ষকদের এ সমাবেশকে কেন্দ্র করে সকাল থেকেই শহীদ মিনার ও আশপাশের রাস্তায় বিপুল সংখ্যক পুলিশসহ বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার সদস্যরা অবস্থান নেন। তারা শিক্ষকদের শহীদ মিনারে প্রবেশে বাধা দেন।
শিক্ষকরা ‘শিক্ষকদের বেতন বৈষম্য মানি না মানব না’, ‘দাবি মোদের একটাই আদায় ছাড়া যাব না’, ‘দাবি মোদের একটাই ১০-১১ গ্রেড চাই’ ইত্যাদি স্লোগান দিচ্ছেন। দফায় দফায় শিক্ষকরা সমবেত হয়ে স্লোগান দেয়ার চেষ্টা করলে পুলিশ তাদেরকে ছত্রভঙ্গ করে দিচ্ছে।
কোতোয়ালি থানার আই আই টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক বন্যা খাতুন বলেন, প্রধান শিক্ষকদের দশম গ্রেড ও সহকারী শিক্ষকদের ১১তম গ্রেডের দাবি জানাতে আমরা মহাসমাবেশে যোগ দিতে এসেছি। আমরা শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি পালন করতে শহীদ মিনারে আসলেও পুলিশ আমাদের ছত্রভঙ্গ করে দিচ্ছে।
তিনি বলেন, আমাদের ন্যায্য দাবি জানাতে সমবেত হয়েছি। অথচ পুলিশ আমাদের শিক্ষকদের ওপর লাঠিচার্জ করে সাত-আটজন শিক্ষককে আহত করেছে। তাদের ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। এছাড়াও অনেক শিক্ষক লাঠিচার্জে আহত হয়েছেন।
তিনি আরও বলেন, আমাদের দাবি-দাওয়া বাস্তবায়নের আশ্বাস না পাওয়া পর্যন্ত আমরা ক্লাসে ফিরে যাব না। পুলিশ আমাদের মহাসমাবেশ ছত্রভঙ্গ করে দিলেও শিক্ষকরা চারপাশে ছড়িয়ে রয়েছেন। সুযোগ পেলে আবারও সবাই শহীদ মিনারের সামনে সমবেত হবেন।
প্রসঙ্গত, প্রধান শিক্ষকদের জাতীয় বেতন স্কেলের দশম গ্রেডে ও সহকারী শিক্ষকদের ১১তম গ্রেডে বেতন দেয়ার দাবিতে গত ১৪ অক্টোবর সারাদেশের ৬৫ হাজারের বেশি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে সকাল ১০টা থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত কর্মবিরতি পালন করা হয়। পরদিন ১৫ অক্টোবর পালন করা হয় তিন ঘণ্টার কর্মবিরতি। ১৬ অক্টোবর এসব বিদ্যালয়ে অর্ধদিবস কর্মবিরতি পালন করেন তারা। এছাড়া গত ১৭ অক্টোবর পর্যন্ত অর্ধদিবস কর্মবিরতিতে যান শিক্ষকরা।
আন্দোলনের ধারাবাহিকতায় আজ বুধবার শহীদ মিনারে মহাসমাবেশ করার ঘোষণা দেন। যদিও সোমবার (২১ অক্টোবর) ডিপিই’র মহাপরিচালক ড. এ এফ এম মনজুর কাদির স্বাক্ষরিত এক নির্দেশনায় সমাবেশে যোগ না দিয়ে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের ছুটির দিনে কর্মস্থলে উপস্থিত থাকার নির্দেশ দেয়া হয়।