ছাত্ররাজনীতি নিয়ে কিছু ভাবনা

আহমদ রফিক

আহমদ রফিক
আহমদ রফিক। ফাইল ছবি

বুয়েটে মর্মান্তিক ছাত্র হত্যার (আবরার হত্যা) বিয়োগান্ত ঘটনাকে কেন্দ্র করে প্রবল ঐক্যবদ্ধ ছাত্র আন্দোলন সব মহলকে চমকে দিয়েছে। মাঝেমধ্যে কোনো বিয়োগান্ত ঘটনা বা অন্যায়-অপরাধের বিরুদ্ধে প্রতিক্রিয়ায় সাধারণ ছাত্রদের অবিশ্বাস্য, স্বতঃস্ফূর্ত ছাত্র আন্দোলন দেখা দেয়, যা আমাকে প্রতিবারই একুশের ভাষাভিত্তিক ছাত্র আন্দোলনের (১৯৫২-এর ফেব্রুয়ারি) কথা মনে করিয়ে দেয়।

মনে করিয়ে দেয় এ জন্য যে তখন মুসলিম লীগের দুঃশাসনের বিরুদ্ধে ‘সাধারণ ছাত্ররা’ (বেশির ভাগই রাজনৈতিক দলভুক্ত নয়) স্বতঃস্ফূর্ত আবেগে অন্যতম রাষ্ট্রভাষা বাংলার দাবিতে পথে নামে ১৪৪ ধারা ভাঙার প্রতিবাদী প্রতীকে, যদিও সরকারবিরোধী রাজনৈতিক নেতারা ১৪৪ ধারা ভাঙায় তাঁদের সমর্থন জানাননি মূলত তাঁদের রাজনৈতিক স্বার্থের চিন্তায়। ভাবনার দ্বিতীয় কারণটি হলো, অবিশ্বাস্য গতিতে পুলিশের গুলিতে ছাত্র হত্যার প্রতিক্রিয়ায় পরদিন থেকেই ছাত্র আন্দোলন শুধু ঢাকায় নয়, দেশব্যাপী গণ-আন্দোলনে পরিণত হয়। তাত্ত্বিক পরাজয় পরাক্রমশালী মুসলিম লীগ সরকারের।

পরবর্তী রাজনৈতিক ঘটনাবলি (যেমন—যুক্রফ্রন্টের নির্বাচনী জয়) প্রমাণ করে ছাত্র আন্দোলনের সঠিক সিদ্ধান্ত রাজনৈতিক যাত্রাপথকে সঠিক পথ দেখাতে পেরেছিল, যদিও নেতারা তা শুদ্ধতায় ধরে রাখতে পারেননি।

ছাত্র আন্দোলন অবশ্য মোটা দাগে (কিছু বিভাজন সত্ত্বেও) ষাটের দশকের শেষাবধি দুঃশাসনবিরোধী প্রতিবাদী ধারা প্রবল শক্তিতে ধরে রাখতে পেরেছিল। এবং দেশের স্বাধীনতাসংগ্রামে তাৎপর্যপূর্ণ ভূমিকা গ্রহণ করেছিল।

কিন্তু স্বাধীন বাংলাদেশে সামাজিক-রাজনৈতিক পরিবেশে যে নৈরাজ্যের ব্যাপক প্রকাশ তার প্রতিক্রিয়ায় সৃষ্ট দুর্নীতি ও অনাচার শুধু সমাজেই প্রাধান্য পায়নি, তা ক্ষমতাসীন ছাত্ররাজনীতিকেও ক্রমেই ব্যাপকভাবে দূষিত, নীতিভ্রষ্ট ও একপর্যায়ে বিষাক্ত করে। আদর্শের বদলে বিত্তবৈভবের প্রবল আকর্ষণ নীতিচ্যুত করে। দুই সামরিক শাসক মেধাবী ছাত্রদের একাংশকেও কাছে টেনে নিতে সক্ষম হয়। তাদের হাতে সহপাঠী বা মানুষ হত্যার রক্ত ছাপ।

স্বৈরশাসনের অবসানও রাজনৈতিক দলের শাসনে পরিচালিত ছাত্রদের এ ভ্রষ্টাদর্শ থেকে মুক্তি দেয়নি। হোক তারা পালাক্রমে ক্ষমতাসীন বা সাময়িক বিরোধী দলের আশ্রয়ে-প্রশ্রয়ে প্রতিপালিত। ছাত্ররাজনীতির আদর্শ বুড়িগঙ্গা থেকে পদ্মা-কর্ণফুলীতে ভেসে গেল! প্রধান দুটি দলের পৃষ্ঠপোষকতায় ছাত্ররাজনীতির নামে চরম নীতিহীনতার রাজনীতির প্রকাশ।

তা না হলে ভাবা যায়, ডাকসুর সোনালি যুগের, কী জাতীয়তাবাদী, কী প্রগতিবাদী ছাত্ররাজনীতির জায়গা দখল করেছে এমন এক নৃশংস রাজনীতি, যাদের স্পর্শে দূষিত প্রাচ্যের অক্সফোর্ড নামে খ্যাত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়। শিউরে উঠতে হয় সংবাদ শিরোনামটি পড়ে : ‘অর্ধশত টর্চার সেল ঢাবির ১৩ হলে’ ও ‘শারীরিক-মানসিক নির্যাতনের শিকার শিক্ষার্থীরা’।

কী করছিল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসন, হল প্রশাসন? তারা কিছু জানত না—এমন উদ্ভট যুক্তি কেউ বিশ্বাস করবে? আর যে দলের ছাত্রসংগঠনের সদস্য এসব ছাত্র নামের অমানুষ, তাদের এসব কীর্তিকলাপ দলীয় নেতারা জানতেন না, এমনটিই প্রত্যয়যোগ্য নয়। ভারতীয় তথা পশ্চিমবঙ্গীয় এই ক্যাডার রাজনীতির নিষ্ঠুর চরিত্রই কি এরা আমদানি করেছে, নাকি গোটা নষ্টভ্রষ্ট প্রক্রিয়াটি পুরোপুরি স্বদেশ ভূমিপ্রসূত?

দুই.

যাঁরা রাজনীতি, বিশেষভাবে ছাত্ররাজনীতি এবং বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর শিক্ষাব্যবস্থা সম্পর্কে খোঁজখবর রাখতে আগ্রহী তাঁরা জানেন, কিভাবে দিনের পর দিন রাজনীতির বিরোধ বা ভিন্নমত নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে রক্ত ঝরেছে, কী মাত্রায় অনৈতিকতার শিকড় গজিয়েছে শাখা-প্রশাখার বিস্তারে? শিক্ষকরা ব্যস্ত রয়েছেন অনভিপ্রেত শিক্ষক রাজনীতির অবাঞ্ছিত দ্বন্দ্ব নিয়ে এবং ছাত্রদের সেসব ন্যক্কারজনক কাজে ব্যবহার করে। সেখানে ব্যক্তিস্বার্থই প্রধান।

স্বভাবতই এই কালো, রক্তাক্ত রাজনৈতিক ধারার বিস্তার ঘটেছে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ে। রাজশাহী, চট্টগ্রাম, সিলেট, সেই সঙ্গে পরবর্তী সময়ে প্রতিষ্ঠিত একাধিক বিশ্ববিদ্যালয়ে। উপাচার্যকে কেন্দ্র করে, শিক্ষক রাজনীতিকে কেন্দ্র করে, জামায়াত-শিবিরের অপরাজনীতিকে কেন্দ্র করে এসব বিশ্ববিদ্যালয়ে কম রক্ত ঝরেনি। নিরীহ ছাত্রদের প্রাণহানি ঘটেছে নিষ্ঠুরভাবে। মাঝেমধ্যে শিক্ষক রাজনীতি বা দলীয় রাজনীতির ষড়যন্ত্রে শিক্ষকেরও প্রাণ গেছে।

এ অবস্থারই অশুভ বিস্তার কারিগরি খাতের সর্বোচ্চ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বাংলাদেশের বহুমাত্রিক প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় বুয়েটে। একই ধারায় চলেছে দূষিত রাজনীতির কালো ছায়া তার বিষমুখ প্রসারিত করে। তাতে সংশ্লিষ্ট পূর্বোক্ত সব কয়টি উপাদান—রাজনীতিক, শিক্ষক, ছাত্রদের মাধ্যমে। এখানেও ভিন্ন একটি নিষ্ঠুর উপদ্রব কৌতুকের নামে, যা অতীব ভয়ংকর রূপে সক্রিয়। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন কি কখনো ফিরে তাকিয়েছে নিরীহ নতুন ছাত্রদের র‌্যাগিংয়ের নামে নির্যাতিত হওয়ার ঘটনার দিকে? প্রতিকারের কোনো ব্যবস্থা নিয়েছে? না, তারা ওই সব অনৈতিক ও অনাচারের শিকার ছাত্রদের দিকে বিন্দুমাত্র সহানুভূতির দৃষ্টিতে তাকায়নি। ন্যায়নীতি, নৈতিকতা ও সুরুচির কোনো বালাই ছিল না। এমনই ছিল আমাদের সর্বোচ্চ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের একদা মেধাবী শিক্ষকদের কর্মকাণ্ড, যা রাজনৈতিক স্বার্থে বিকিয়ে গিয়ে মননধর্মকে বিসর্জন দিয়েছেন। সবাই নন কিন্তু ক্ষমতাসীনরাই এখানে প্রধান, তাদের বিপরীতে কথা বলতে বা সক্রিয় হতে অতি অল্পজনকেই দেখা গেছে।

আবরার হত্যাকাণ্ড বুয়েটের বিষকুম্ভটি ভেঙে দিয়েছে। দিয়েছে ঐক্যবদ্ধ সাধারণ ছাত্ররা। যদি প্রশ্ন ওঠে : এ ঐক্য এ প্রতিবাদ কোথায় ছিল দীর্ঘসময় ধরে পরিচালিত আবরারকে নির্যাতন করার সময়? যুক্তিসংগত জবাব মিলবে না। তবু এক মুঠো স্বস্তি যে তারা সাহস করে প্রতিবাদে সোচ্চার হতে পেরেছে প্রশাসনের রক্তচক্ষু উপেক্ষা করে। রেয়াত ঘটেনি উদাসীন উপাচার্যের।

একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য হিসেবে যে অপরিহার্য নিরপেক্ষতা সব ছাত্রের মাথার ওপর নিরাপদ ছায়া হয়ে থাকে, সে কর্তব্য ও দায়িত্ব হারিয়ে বুয়েটের উপাচার্য তাঁর যোগ্যতা হারিয়েছেন, পদের মর্যাদা কলঙ্কিত করেছেন। প্রাতিষ্ঠানিক অযোগ্যতা ও দায়িত্বহীনতার শাস্তি তাঁর প্রাপ্য। এরই মধ্যে একজন সংশ্লিষ্ট প্রশাসনিক কর্তাব্যক্তি পদত্যাগ করেছেন একটি করুণ মৃত্যুর দায় স্বীকার করে। বুয়েটের উপচার্যের করণীয়ও ভিন্ন নয়।

তিন.

বুয়েটের মেধাবী ছাত্র আবরার ফাহাদের মর্মান্তিক মৃত্যু তথা নিষ্ঠুর হত্যাকাণ্ড বর্তমান ছাত্ররাজনীতি নিয়ে একটি জটিল প্রশ্নের জন্ম দিয়েছে। বুয়েটের সাধারণ ছাত্রদের দাবি, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ছাত্র-শিক্ষক রাজনীতি নিষিদ্ধ করা হোক। এটা তাদের ১০ দফার অন্যতম প্রধান দফা। দিনের পর দিন দৈহিক বা মানসিকভাবে নির্যাতিত নিরীহ সাধারণ ছাত্রদের পক্ষে এমন দাবি তোলা খুব স্বাভাবিক। এটা পুঞ্জীভূত ক্ষোভের বিস্ফোরক প্রকাশ।

ঘাতকদের দাপটে, ক্ষমতাসীন রাজনীতির পরোক্ষ পৃষ্ঠপোষকতার কারণে এত দিন তাদের পক্ষে মুক্ত চিন্তার প্রকাশ ঘটানো সম্ভব ছিল না। সংবাদপত্রও এত দিন খুব যে জোরালো কণ্ঠে সরব ছিল, তা নয়। এখন অনুকূল পরিবেশে অনুসন্ধানী সাংবাদিকতার কল্যাণে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর যে অভ্যন্তরীণ দুর্বৃত্তপনা প্রকাশ পাচ্ছে তা ভয়াবহ বললেও কম বলা হয়।

নিঃসন্দেহে এ অবস্থার আমূল পরিবর্তন দরকার। ঐক্যবদ্ধ ছাত্র আন্দোলন এ অবস্থার অবসানে ছাত্র-শিক্ষক রাজনীতি নিষিদ্ধ করার দাবি তুলে স্বাভাবিক প্রতিক্রিয়াই প্রকাশ করেছে। ক্ষমতাসীন ছাত্ররাজনীতির অনাচার ও নৃশংসতার প্রতি সংশ্লিষ্ট জাতীয় রাজনীতির অন্ধ উদাসীনতাই এর কারণ। আপাতত বুয়েটসহ সংশ্লিষ্ট বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে ছাত্র-শিক্ষক রাজনীতি বন্ধ হলেও এ সম্পর্কে বিকল্প বিবেচনার প্রয়োজন আছে বলে মনে হয়। তবে শিক্ষক-রাজনীতি শিক্ষাঙ্গনে পুরোপুরি এবং স্থায়ীভাবে বন্ধ হওয়া উচিত। শিক্ষকরা বিশ্ববিদ্যালয়ে বা কলেজে নিয়োগ পেয়েছেন ছাত্রদের সুস্থ ধারার শিক্ষাদানের জন্য, স্বার্থান্ধ রাজনীতি করার জন্য নয়।

বাংলাদেশে ছাত্ররাজনীতির সুস্থ ঐতিহ্যের কথা মাথায় রেখে (যে কথা এর আগে উল্লেখ করা হয়েছে) শিক্ষায়তনে ছাত্ররাজনীতি বন্ধ করার সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনা করা দরকার। পূর্ব ঐতিহ্য ধারায় মূলত শিক্ষা সমস্যা, সেই সঙ্গে আপৎকালীন জাতীয় সমস্য নিয়ে ছাত্ররা ঐক্যবদ্ধভাবে স্ব-স্বাধীন রাজনীতি করবে, যেখানে থাকবে আদর্শ, ন্যায়নীতি, নৈতিকতা ও সুস্থ মানবিক মূল্যবোধ—এতে আপত্তির কারণ দেখি না।

এ ধারার ছাত্ররাজনীতিতে রাজনীতিক দলগুলোর প্রত্যক্ষ প্রভাব ও অনুপ্রবেশ বাঞ্ছনীয় নয়। ছাত্ররা স্বাধীনভাবে, প্রয়োজন বোধ করলে সংগঠন গড়তে পারে, তবে তা দ্বন্দ্ব-সংঘাতের জন্য নয়। এ প্রসঙ্গে আমি পঞ্চাশের দশকে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজের ছাত্ররাজনীতির উদাহরণ টানতে পারি, যা হয়তো একালের ছাত্রদের অজানা! তাই বর্তমান অবস্থার বিকল্প হতে পারে সুস্থ ছাত্ররাজনীতির পরিচ্ছন্ন ঠিকানা—সেটা কিভাবে হতে পারে, সেটাই ভাবা উচিত। ভাবছেন, লিখছেন বৌদ্ধিক ভুবনের ধীমানগণ।

তবে একটি বিষয়ে প্রায় সবাই একমত যে স্বাধীন ছাত্ররাজনীতিতে দলীয় স্বার্থের অনুপ্রবেশ নয়। একজন শিক্ষাবিদ লিখেছেন : ‘রাজনৈতিক দলগুলো ছাত্রসংগঠনকে অঙ্গসংগঠন, এমনকি সহযোগী সংস্থার মর্যাদা থেকে অন্তত তিন থেকে পাঁচ বছরের জন্য বিযুক্ত করার কথা বিবেচনা করে দেখতে পারে।’ আরেকজনের মতে, ‘উপসর্গ চিহ্নিত না করে, প্রতিকার নিশ্চিত না করে হঠাৎ করে ছাত্ররাজনীতি বন্ধ করে দিলেই কি কাঙ্ক্ষিত ফল পাওয়া যাবে?’ অন্য একজন এ ব্যাপারে মধ্যপন্থী।

চলছে স্বনামখ্যাত শিক্ষাবিদ এবং দু-একজন রাজনীতিকের ছাত্ররাজনীতি নিয়ে পোস্টমর্টেম পর্যালোচনা। সুস্থ ঐতিহ্যবাহী ছাত্ররাজনীতির অবসান বেশির ভাগ বিশিষ্টজনই চান না। তবে কেউ চান না এতে দলীয় রাজনীতির নিয়ন্ত্রণ। বড় কথা হলো শিক্ষায়তনের পরিবেশ সুস্থ, মানবিক ও পরিচ্ছন্ন রাখতে হবে। পড়াশোনার পাশাপাশি প্রয়োজন সুস্থধারার ছাত্ররাজনীতি। এ পরিবেশ তৈরি ও রক্ষার দায় যেমন শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের, তেমনি সংশ্লিষ্ট শিক্ষকদের, তাদের প্রশাসনের। শেষোক্তরা নীতির দিক থেকে সৎ ও বলিষ্ঠ হলে দুষ্ট রাজনীতির অনুপ্রবেশ সহজ হয় না। আরো একটি কথা, শিক্ষকদের স্বার্থপর দ্বন্দ্ব ছাত্রদের ওই পথে চলতে প্রেরণা জোগাবে। এ সত্যটি শিক্ষকদের মনে রাখা দরকার।

লেখক : কবি, গবেষক, ভাষা সংগ্রামী

শেয়ার করুন

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে