প্রতিবছর উচ্চমাধ্যমিক পাসের পর বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির জন্য লড়াই করতে থাকে লক্ষাধিক শিক্ষার্থী। সে জন্য ছুটে বেড়ায় দেশের এক প্রান্ত থেকে আরেক প্রান্ত। অনেক দূর গিয়ে পরীক্ষা দেওয়ার ভোগান্তি, একই দিনে একাধিক পরীক্ষা থাকা এবং শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা প্রভৃতি কারণে সমন্বিত ভর্তিপরীক্ষা পদ্ধতি ছিল দীর্ঘদিনের দাবি। কয়েক বছর ধরে চলমান প্রচেষ্টার পর এ বছর কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে সমন্বিত পরীক্ষার সিদ্ধান্তে কিছুটা স্বস্তি ফিরেছিল। কিন্তু আবেদনপত্র যাচাই শেষে প্রায় ৩৯ হাজার শিক্ষার্থীর বাদ পড়ায় হতাশা আর ক্ষোভ সৃষ্টি হয়েছে। এমতাবস্থায় বিতর্কের সৃষ্টি করেছে ৭ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের সমন্বিত পরীক্ষাপদ্ধতি।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ২০১৯-২০ শিক্ষাবর্ষে সাতটি কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় নিয়ে গুচ্ছভিত্তিক ভর্তিপরীক্ষায় অংশ নেওয়ার জন্য শিক্ষার্থীদের কাছে আবেদন চেয়ে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়। এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষায় চতুর্থ বিষয় ব্যতীত ন্যূনতম ৭.০০ থাকলে শিক্ষার্থীরা আবেদন করতে পারবেন এবং মোট আসনের ১০ গুণ অর্থাৎ ৩৫ হাজার ৫৫০ জন শিক্ষার্থীকে পরীক্ষায় অংশ নিতে দেওয়া হবে। এ ছাড়া অনলাইনে আবেদনের জন্য সকল প্রার্থীকে ১০০০ টাকা ফি দিতে হবে। এরই প্রেক্ষিতে নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে ৭৪ হাজার ৪৫৬টি আবেদন জমা পড়ে।
গত ২০ অক্টোবর সমন্বিত ভর্তিপরীক্ষার ওয়েবসাইটে প্রাথমিক বাছাইয়ের ফল প্রকাশ করা হয়। সেখানে বলা হয়, মোট আসন সংখ্যার ১০ গুণ প্রার্থীকে বাছাই করার কারণে এসএসসি ও এইচএসসি মিলে ন্যূনতম যাদের ৯.১৫ (চতুর্থ বিষয় বাদে) রয়েছে শুধু তারাই ভর্তিপরীক্ষায় অংশ নিতে পারবেন। যারা পরীক্ষার জন্য উত্তীর্ণ হয়নি তাদের আবেদন ফি বাবদ নেওয়া এক হাজার টাকা ফেরত দেওয়া হবে না। প্রাথমিক বাছাইয়ে ৭৪ হাজার ৪৫৬ প্রার্থীর মধ্যে ৩৫ হাজার ৫৫০ জন শিক্ষার্থী পরীক্ষায় অংশ নিতে পারবেন। এতে বাদ পড়েছে ৩৮ হাজার ৯৫৬ জন। এত বিপুলসংখ্যক আবেদনকারীদের বাদ দেওয়ায় ক্ষেপেছেন শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা।
বিভিন্ন সূত্রে জানা যায়, ২০১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষে বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় ব্যতীত অন্য কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে ৬.৫-৭.০০ জিপিএ নিয়ে পরীক্ষা দিতে পারলেও এবার আর দিতে পারবেন না। অন্যদিকে বাদ পড়া ৩৮ হাজার ৯৫৬ জন শিক্ষার্থীকে পরীক্ষা দিতে দেওয়া না হলেও তাদের আবেদনের প্রায় ৩ কোটি ৯০ লাখ টাকা আর ফেরত দেওয়া হবে না। এ নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ব্যাপক হইচই শুরু হয়েছে।
জিহাদুল ইসলাম নামের এক প্রার্থী বলেন, সমন্বিত ভর্তিপরীক্ষার উদ্যোগ অবশ্যই ভালো কিন্তু চতুর্থ বিষয় ছাড়া ৯.১৫ মানায় না। এমন হলে সমন্বিত না থাকাই ভালো ছিল, বাকি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে অন্তত পরীক্ষা দিতে পারতাম।
এ নিয়ে গত ২১ অক্টোবর ভর্তি পরীক্ষার জন্য অনির্বাচিত প্রার্থীদের থেকে টাকা রাখার প্রতিবাদে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করেছে বাকৃবি শাখা ছাত্র ফ্রন্ট। সকল পরীক্ষার্থীকে পরীক্ষা দেওয়ার সুযোগ দেওয়া অথবা তাদের ১০০০ টাকা ফেরত দেওয়া না হলে এর বিরুদ্ধে তীব্র ছাত্র আন্দোলন গড়ে তোলা হবে বলে হুঁশিয়ারি দেন তারা। একই দাবিতে মানববন্ধন ও বাকৃবি প্রশাসন বরাবর স্মারকলিপি প্রদান করে বাকৃবি শাখা ছাত্র ইউনিয়ন।
বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের আওয়ামীপন্থী শিক্ষকদের সংগঠন নীল দলের সাধারণ সম্পাদক ও অ্যাকোয়াকালচার বিভাগের অধ্যাপক মো. সাজ্জাদ হোসেন বলেন, আমার মনে হয় সমন্বিত ভর্তিপরীক্ষায় সবাইকে অংশ নিতে দেওয়া উচিত। তবে যদি সকলকে পরীক্ষায় অংশ নিতে দেওয়া না হয়, সে ক্ষেত্রে যারা অংশ নিতে পারছে না তাদেরকে আবেদনের টাকা ফেরত দেওয়া উচিত।
ভর্তিপরীক্ষা বিষয়ে বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বাকৃবি) উপাচার্য অধ্যাপক ড. লুৎফুল হাসান জানান, এবারের পরীক্ষার বিষয়টি আমাদের বিশ্ববিদ্যালয় নিয়ন্ত্রণ করছে। বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর সক্ষমতার ওপর পরীক্ষার্থীর সংখ্যা সীমিত করা হয়েছে। নির্বাচিত আবেদনকারীদের ফি ফেরতের বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হয়নি।
তবে সিদ্ধান্ত যাই আসুক না কেন সমন্বিত পরীক্ষা পদ্ধতি নিয়ে শিক্ষার্থীদের যে আশা ছিল তা যদি শিক্ষার্থীবান্ধব না হয়, তবে অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয় ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে এ পদ্ধতি চালু করা হয়তো সম্ভব হবে না বলে ধারণা করছেন সংশ্লিষ্টরা।