সিলেটের শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে (শাবি) ভর্তি পরীক্ষায় আগত শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের বিনামূল্যে কেন্দ্রে পৌঁছে দেওয়ার দায়িত্ব নিয়েছে মোটরসাইকেল–চালকদের সংগঠন ‘সিলেট বাইকিং কমিউনিটি’ ও স্বেচ্ছাসেবী সামাজিক সংগঠন ‘বুস্টার্স’।
আজ শুক্রবার দুটি সংগঠন তাদের স্বেচ্ছাসেবী ও বাইকারদের দায়িত্ব বন্টনের মাধ্যমে প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছে।
এছাড়াও শিক্ষার্থীদের বিনা মূল্যে পরিবহনসেবায় ৭০ আসনের ২০টি বাস দিচ্ছে সিলেট চেম্বার।
শনিবার সকাল ৭টা থেকে সিলেট নগরীর প্রবেশমুখ কদমতলী কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনাল থেকে গন্তব্য থাকবে শাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয়সহ বিভিন্ন পরীক্ষাকেন্দ্র।
এর মধ্যে ১০টি বাস কদমতলী ও রেলস্টেশনে থাকবে। পাঁচটি বাস নগরীর কেন্দ্রস্থল রিকাবিবাজার পয়েন্ট, আম্বরখানা পয়েন্ট, জেলরোড পয়েন্ট, সোবহানীঘাট পয়েন্ট, কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের সামনে ও জিন্দাবাজার পানসি রেস্টুরেন্টের সামনে থাকবে ১টি করে আরও ১০টি বাস।
শিক্ষার্থীদের মোটরসাইকেলে করে বিনা ভাড়ায় যাতায়াতের সুবিধা দেয়ার বিষয়ে বৃহস্পতিবার দুপুরে সিলেট নগরীর চৌহাট্টা মোড়ে বাইকিং কমিউনিটি ও বুস্টার্স প্রস্তুতি সভা করেছে।
সভা থেকে জানানো হয়, ভর্তি পরীক্ষার দিন শনিবার সকাল সাতটা থেকে সিলেট নগরীর প্রবেশমুখসহ ৯টি মোড়ে শতাধিক মোটরসাইকেল–চালকেরা পরীক্ষার্থীদের বিনামূল্যে পরিবহনের ব্যবস্থা করবেন। সেই সঙ্গে গণপরিবহন কিংবা সিএনজিচালিত অটোরিকশার চালকেরা পরীক্ষার্থীদের কাছ থেকে যাতে অতিরিক্ত ভাড়া আদায় না করেন, এ জন্য ট্রাফিক পুলিশের সঙ্গে সমন্বয় রেখে নজরদারি করবেন দুটি সংগঠনের স্বেচ্ছাসেবীরা।
সিলেট বাইকিং কমিউনিটির সমন্বয়ক সাহিদ জামান বলেন, গত বছর শাবির ভর্তি পরীক্ষায় অংশ নিতে আসা শিক্ষার্থীরা যানবাহনের অতিরিক্ত ভাড়া নিয়ে বিড়ম্বনার শিকার হয়েছিলেন। সে সময় অনেকেই অভিযোগ করেছিলেন। ওই অভিজ্ঞতায় সংগঠনের পক্ষ থেকে এই কার্যক্রম হাতে নেয়া হয়েছে। ভর্তি পরীক্ষার দিন সকাল ৭টা থেকে দুটি শিফটে সংগঠনের ১৫০টি মোটরসাইকেল আরোহীরা সিলেটে আসা পরীক্ষার্থীদের যাতায়াতে বিনামূল্যে রাইড শেয়ার করবেন।
পরীক্ষার্থীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সংগঠনের স্বেচ্ছাসেবীরা ‘সিলেট বাইকিং কমিউনিটি’ লেখা টি–শার্ট ও মোটরসাইকেলে স্টিকার ব্যবহার করবেন। পুরো কার্যক্রম সম্পর্কে সিলেট মহানগর পুলিশের ট্রাফিক বিভাগকে অবহিত করা হয়েছে।
বুস্টার্সের সংগঠক আরকে রায় বলেন, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে সংগঠনটি কার্যক্রম পরিচালনা করছে। ভর্তি পরীক্ষায় অংশ নিতে আসা শিক্ষার্থীরা কেন্দ্রে পৌঁছাতে বিলম্ব কিংবা বিড়ম্বনার শিকার যাতে না হন, সে জন্য এই উদ্যোগ নেয়া হয়েছে।
বুস্টার্সের অপর সংগঠক ফাহাদ মোহাম্মদ জানান, আমরা শহরের ৯টি পয়েন্ট নির্বাচন করেছি যেখানে থাকবে আমাদের ভলান্টিয়ার ও প্রয়োজনীয় বাইকার্স। প্রতিটি পয়েন্ট হতে পরীক্ষার্থীদের নিকটস্থ কেন্দ্রে পৌঁছে দিবে আমাদের বাইকার ভাইয়েরা। আপনাদের যে কোনো প্রয়োজনে স্বেচ্ছাসেবীর নাম্বারে (শুধু পরীক্ষার দিন) যোগাযোগ করবেন। তাছাড়া কন্ট্রোল রুমের অধীনে আরও ১০ জন বাইকার থাকবে।
পয়েন্ট গুলো হলো- সুবিদবাজার পয়েন্ট (১০ জন বাইকার) আর স্বেচ্ছাসেবী: সাগর আহমেদ (০১৭১০৫৬১৩৩৭) ও আবদুল্লাহ আল মামুন (০১৭৪৫৯০৪৭৯১)।
চৌহাট্টা পয়েন্ট (১০ জন বাইকার) আর স্বেচ্ছাসেবী: নুপুর দে (০১৭৬৩৮০৩৯০০) ও পারভেজ (০১৮৩৭৮৪৪১৭৯)।
মদিনা মার্কেট পয়েন্ট (১৩ জন বাইকার) আর স্বেচ্ছাসেবী: আফজাল নাঈম (০১৭৬৫৬৫৯০৯৩) ও পান্ডব (০১৭৩০০০৬০৩৬)।
বন্দরবাজার পয়েন্ট (১০ জন বাইকার) আর স্বেচ্ছাসেবী: রাজিব কুমার রায় (০১৭১৮৫১৩৭৯৫) ও রশীদ (০১৭১১৯১১০৩৮)।
জিতু মিয়ার পয়েন্ট, কাজীরবাজার ব্রিজ (১০ জন বাইকার) আর স্বেচ্ছাসেবী: অনুপম (০১৭৩৩৫০০৪২৬)।
নাইওরপুল পয়েন্ট (১০ জন বাইকার) আর স্বেচ্ছাসেবী: সুব্রত হাজরা (০১৭২১৪২৩৫৮৭) ও এমাদ (০১৭১৯৬৯৮০৩১)।
টিলাগড় পয়েন্ট (১০ জন বাইকার) আর স্বেচ্ছাসেবী: জাহাঙ্গীর আলম (০১৭২৮৩৪২৯৭৫) ও প্রমথ তালুকদার (০১৭৩৯৭১৬৮৬০)।
আম্বরখানা পয়েন্ট (১০ জন বাইকার) আর স্বেচ্ছাসেবী: আরিফ (০১৭২০১৪৬৩৩৭) ও নুরুল করিম (০১৭২৩৮৬৬০৪৯)।
রিকাবীবাজার পয়েন্ট (১০ জন বাইকার) আর স্বেচ্ছাসেবী: সাইফুল (০১৭১২০১০১১০) ও মুস্তাফিজুর রহমান (০১৭১৪৪০২৫২৪)।
এছাড়াও এসবিসি কন্ট্রোল রুমের নাম্বার সমূহ- ০১৭৩৪০০৪৬৩৬, ০১৭১৭০৯২৭৭৯, ০১৭১০২১১২৭২।
এসব উদ্যোগের পাশাপাশি সিলেট মহানগর পুলিশের ট্রাফিক বিভাগ বাড়তি নজরদারি রাখবে বলে জানিয়েছেন এসএমপির অতিরিক্ত উপকমিশনার (ট্রাফিক) জ্যোতির্ময় সরকার।
তিনি জানান, পেশাজীবী ও স্বেচ্ছাসেবীদের উদ্যোগ অবশ্যই অভিনন্দনযোগ্য। ট্রাফিক বিভাগও অটোরিকশা শ্রমিক ইউনিয়নের নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করেছে। ভর্তি পরীক্ষার দিন অতিরিক্ত ভাড়া আদায় করাকে সাংগঠনিকভাবে নিরুৎসাহিত করা হয়।
অটোরিকশা স্ট্যান্ডগুলোতে নির্দিষ্ট ভাড়ার তালিকা টাঙানো হবে বলে পরিবহনশ্রমিক সংগঠনের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে।
শিক্ষার্থীদের বিনামূল্যে পরিবহনসেবার উদ্যোগ নিয়ে শুক্রবার থেকে সংশ্লিষ্ট এলাকাগুলোতে বিশেষ প্রচারণা চালাচ্ছে সিলেট চেম্বার।
প্রসঙ্গত, প্রতিবার শাবি ভর্তি পরীক্ষায় অংশ নেন প্রায় পৌনে এক লাখ শিক্ষার্থী। তাদের সঙ্গে থাকেন প্রায় অর্ধেকসংখ্যক অভিভাবক। সব মিলিয়ে দেড় লাখ লোকের বাড়তি চাপ পড়ে সিলেট নগরীতে। থাকা–খাওয়া ও চলাচলে বাড়তি লোকের চাপে সিলেটে আগে ও পরের দুই দিন অন্য রকম এক পরিস্থিতি দেখা দেয়।
তখন নগরী যাতায়াতের ভোগান্তি চরমে পৌঁছে। অতিরিক্ত ভাড়া দিয়েও মেলে না চলাচলের যান।
এই পরিস্থিতিতে এবার শিক্ষার্থীদের যাতায়াতের সুবিধার বিষয় নিয়ে এসএমপির অতিরিক্ত উপকমিশনার (ট্রাফিক) জ্যোতির্ময় সরকারের অনুপ্রেরণায় উদ্যোগী হন- এসএমপির সার্জেন্ট ফাহাদ মোহাম্মদ, জীবনবীমা কর্পোরেশনের আর কে রায়, পুলিশ কনস্টেবল মোহাম্মদ হাফিজুর রহমান, সাংবাদিক ইয়াহ্ইয়া মারুফ।
বাইকার ও স্বেচ্ছাসেবীর মাধ্যমে ভর্তি পরীক্ষার দিন বিনামূল্যে শিক্ষার্থীদের গন্তব্যে পৌঁছে দিলে তাদের আর ভোগান্তিতে পড়তে হবে না- সেই অনুযায়ী সার্জেন্ট ফাহাদ মোহাম্মদ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে পোস্ট দিলে এগিয়ে আসে- মোটরসাইকেল–চালকদের সংগঠন ‘সিলেট বাইকিং কমিউনিটি’।
পরে ‘সিলেট বাইকিং কমিউনিটি’ ও স্বেচ্ছাসেবী সামাজিক সংগঠন ‘বুস্টার্স’ এসব উদ্যোগ নেয়।