ফেনীর সোনাগাজীতে আগুনে পুড়িয়ে হত্যা করা মাদ্রাসাছাত্রী নুসরাত জাহান রাফির মা ও বড় ভাইকে মোবাইল ফোনে হুমকি দেয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে। শুক্রবার তাদের এ হুমকি দেয়া হয় বলে নুসরাতের পরিবার জানিয়েছে।
এ ছাড়া বৃহস্পতিবার রায় ঘোষণার আগে নুসরাতদের বাড়ির ডিশ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেয়া হয়েছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।
নুসরাতের বড় ভাই মাহমুদুল হাসান গণমাধ্যমকে বলেন, শুক্রবার সকালে আমার মায়ের মোবাইল ফোনে কল দিয়ে অজ্ঞাত দুর্বৃত্তরা হুমকি দিয়েছে।
এছাড়া জুমার নামাজের আগে একটি অপরিচিত নম্বর থেকে কল করে আমাকেও গালাগাল ও হুমকি দেয়া হয়। এরপর থেকে আমরা শঙ্কায় রয়েছি। বিষয়টি প্রশাসনকে জানানো হয়েছে বলে জানান তিনি।
মাহমুদুল হাসান জানান, বৃহস্পতিবার রায় ঘোষণার আগে অজ্ঞাত দুর্বৃত্তরা তাদের বাড়ির টেলিভিশনের ডিশ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেয়। ছয় ঘণ্টা পর পুলিশের হস্তক্ষেপে ডিশ লাইনের মালিক নতুন তার দিয়ে লাইন সচল করেন।
হুমকির বিষয়ে সোনাগাজী মডেল থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মো. খালেদ হোসেন গণমাধ্যমকে বলেন, মোবাইল ফোনে হুমকি দেয়ার বিষয়টি খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
আর ডিশের লাইন বিচ্ছিন্ন করার কথা শুনে ডিশের মালিককে ফোন করে দ্রুত লাইনটি সচল করার ব্যবস্থা করা হয়েছিল।
তিনি বলেন, নুসরাতের বাড়িতে দুজন কর্মকর্তাসহ ১০-১২ জন পুলিশ সদস্য নিরাপত্তার দায়িত্বে রয়েছেন। যেকোনো পরিস্থিতি মোকাবিলায় পুলিশ প্রস্তুত রয়েছে। একইভাবে পৌর শহরের গুরুত্বপূর্ণ এলাকাগুলোয়ও পুলিশি টহল জোরদার করা হয়েছে।
ফেনীর নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের বিচারক মো. মামুনুর রশিদ বৃহস্পতিবার নুসরাত হত্যা মামলার রায় ঘোষণা করেন। রায়ে মামলার প্রধান আসামি মাদ্রাসার অধ্যক্ষ সিরাজ উদ্দৌলাসহ ১৬ জনের মৃত্যুদণ্ড দেয়া হয়। এ ছাড়া প্রত্যেক আসামিকে ১ লাখ টাকা করে জরিমানা করেছেন আদালত।
সোনাগাজী ইসলামিয়া ফাজিল মাদ্রাসার আলিম পরীক্ষার্থী ছিলেন নুসরাত জাহান রাফি। মাদ্রাসার অধ্যক্ষ সিরাজউদ্দৌলা নিজ কক্ষে ডেকে নিয়ে তার শ্লীলতাহানী করে।
এ ঘটনায় নুসরাতের মা শিরিন আক্তার বাদী হয়ে ২৭ মার্চ সোনাগাজী থানায় মামলা দায়ের করেন। এরপর অধ্যক্ষকে গ্রেফতার করে পুলিশ। পরে মামলা তুলে নিতে বিভিন্নভাবে রাফির পরিবারকে হুমকি দেয়া হয়।
৬ এপ্রিল সকাল ৯টার দিকে আলিম পর্যায়ের আরবি প্রথম পত্রের পরীক্ষা দিতে ওই মাদ্রাসার কেন্দ্রে যায় নুসরাত। এ সময় বোরকা পরিহিত কয়েকজন তাকে পাশের বহুতল ভবনের ছাদে ডেকে নিয়ে অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে মামলা তুলে নিতে চাপ দেয়। রাজি না হলে নুসরাতের গায়ে কেরোসিন ঢেলে আগুন দেয় তারা।
এতে নুসরাতের পুরো শরীর দগ্ধ হয়। ১০ এপ্রিল রাত সাড়ে ৯টার দিকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে চিকিৎসাধীন অবস্থায় সে মারা যায়। এ ঘটনায় নুসরাতের বড় ভাই বাদী হয়ে ৮ এপ্রিল সোনাগাজী মডেল থানায় মামলা করেন।
নুসরাত হত্যা মামলায় পুলিশ ও পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) অধ্যক্ষ সিরাজউদ্দৌলাসহ ২১ জনকে বিভিন্ন স্থান থেকে গ্রেফতার করে। পরে ২৯ মে ১৬ জনকে আসামি করে ৮০৮ পৃষ্ঠার অভিযোগপত্র দাখিল করে পিবিআই।
চার্জশিটভুক্ত ১৬ আসামির মধ্যে ১২ জন আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছে।
৩০ মে মামলাটি ফেনীর নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালে স্থানান্তর করা হয়। ১০ জুন আদালত মামলাটি আমলে নিলে শুনানি শুরু হয়। ২০ জুন অভিযুক্ত ১৬ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করেন বিচারিক আদালত।
২৭ ও ৩০ জুন মামলার বাদী মাহমুদুল হাসান নোমানকে জেরার মধ্য দিয়ে বিচারকাজ শুরু হয়। এরপর ৯২ সাক্ষীর মধ্যে ৮৭ জন সাক্ষ্য দেন আদালতে।