বেকারত্ব এবং ধীরগতির অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি আরব বিশ্বের বেশ কিছু দেশে সামাজিক অস্থিরতা ও জনপ্রিয় বিক্ষোভ-প্রতিবাদের পেছনে অন্যতম ক্রীড়ানক হিসেবে ভূমিকা পালন করছে।
আজ সোমবার প্রকাশিত আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ)-এর এক প্রতিবেদনে বলছে, মধ্যপ্রাচ্য এবং উত্তর আফ্রিকার ধীর অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির পাশাপাশি বৈশ্বিক বাণিজ্যিক উত্তেজনা, তেলের দামের উত্থান-পতন এই অস্থিরতায় অবদান রাখছে।
চলতি সপ্তাহের শুরুর দিকে এই অঞ্চলের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির পূর্বাভাস প্রকাশ করা হয়। এতে আরব বিশ্ব এবং ইরানে গড় প্রবৃদ্ধির হার ০ দশমিক ১ থেকে ১ দশমিক ১ শতাংশ কমেছে বলে জানানো হয়। মধ্যপ্রাচ্যের তিন বৃহৎ অর্থনৈতিক শক্তি সৌদি আরব, ইরান ও সংযুক্ত আরব আমিরাতের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির ক্রমাগত অবনতি ঘটছে বলেও আইএমএফের প্রতিবেদনে জানানো হয়।
সোমবার প্রকাশিত প্রতিবেদনে আইএমএফ বলছে, গত মাসের শুরুর দিকে প্রবৃদ্ধির যে ঝুঁকি চিহ্নিত করা হয়েছিল; সেগুলো আরও বাড়ছে। আর এটি পুরোপুরি বৈশ্বিক কিছু বিষয়ের ওপর নির্ভরশীল। আইএমএফের মধ্যপ্রাচ্য ও মধ্য এশিয়া বিষয়ক পরিচালক জিহাদ আজৌর বলেন, এই অঞ্চলে এসব দেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির ধারা নিম্নমুখী; যা বেকারত্ব মোকাবেলার জন্য পর্যাপ্ত নয়।
বার্তাসংস্থা এএফপিকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে আজৌর বলেন, আমরা এমন একটি অঞ্চলে রয়েছি; যেখানে বেকারত্বের হার ২৫ থেকে ৩০ শতাংশ ছাড়িয়েছে। বেকারত্ব মোকাবেলার জন্য প্রবৃদ্ধি এক থেকে দুই শতাংশ বৃদ্ধি প্রয়োজন।
আইএমএফের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বেকারত্বের উচ্চ হারের কারণে আরব দেশগুলোতে সামাজিক বিশৃঙ্খলা বাড়ছে। উদীয়মান অন্যান্য অর্থনৈতিক বাজার ও উন্নয়নশীল অর্থনৈতিক দেশগুলোতে বেকারত্বের হার ৭ শতাংশ হলেও এই অঞ্চলে গড় বেকারত্ব প্রায় ১১ শতাংশ।
আজৌর বলেন, বিশেষ করে এ অঞ্চলের তরুণ এবং নারীরা কর্মহীন হয়ে পড়ছে। ২০১৮ সালে ১৮ শতাংশের বেশি নারীর কোনো কর্ম ছিল না।
২০১০ সালের পর থেকে আরব বিশ্বের বেশ কয়েকটি দেশে সহিংস বিক্ষোভ-প্রতিবাদ ছড়িয়ে পড়ে। শুরুতে বিক্ষোভ দেখা দিলেও সিরিয়া, ইয়েমেন এবং লিবিয়ায় শেষ পর্যন্ত তা প্রাণঘাতী রক্তাক্ত গৃহযুদ্ধে রূপ নেয়। গত বছর আলজেরিয়া, সুদান, ইরাক এবং লেবাননে নতুন করে বিক্ষোভের সূত্রপাত হয়। এই বিক্ষোভের মূল দাবিই ছিল, অর্থনৈতিক সংস্কার ও দুর্নীতির বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া।
দেশের পুরো রাজনৈতিক ব্যবস্থা এবং অর্থনৈতিক সংস্কারের দাবিতে লেবানন ও ইরাকে গত কয়েকদিন টানা বিক্ষোভ শুরু হয়েছে। অচলাবস্থা কাটাতে দেশ দুটির সরকার এখন পর্যন্ত আনুষ্ঠানিক কোনো ঘোষণা না দিয়ে বিক্ষোভকারীদের ওপর বলপ্রয়োগের চেষ্টা করলেও তারা রাজপথ ছেড়ে যাননি।
আজৌর বলেন, গত কয়েক বছর ধরে লেবাননের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি পূর্বাভাসের চেয়েও কম গতিতে হয়েছে।
আইএমএফের এ কর্মকর্তা বলেন, এই ভারসাম্যহীনতা মোকাবেলা করার জন্য সরকারকে দ্রুত এবং দৃঢ় পদক্ষেপ নিতে হবে। জীবনযাত্রার ব্যয় কমাতে ও আর্থিক সঙ্কট মোকাবেলায় মানুষের আস্থা ফিরিয়ে আনতে হবে।
আইএমএফ বলছে, আরব বিশ্বের অনেক দেশে সরকারি ঋণের পরিমাণ খুবই বেশি। কোনো দেশে মোট জিডিপির ৮৫ শতাংশকে ছাড়িয়ে গেছে এই ঋণ। লেবানন এবং সুদানে এই ঋণের হার ১৫০ শতাংশ ছাড়িয়েছে।
আন্তর্জাতিক এই মুদ্রা সংস্থা বলছে, ইরানের বেশ কিছু জটিল নিষেধাজ্ঞার কবেলে থাকা ইরান সবচেয়ে ভয়াবহ অর্থনৈতিক মন্দায় নিমজ্জিত হয়েছে। মুদ্রাস্ফীতির ধকল সামলাতে মারাত্মক লড়াই করছে দেশটি। নিষেধাজ্ঞার কারণে দেশটির অপরিশোধিত তেল রফতানি দৈনিক ৫ লাখ ব্যারেলে নেমে এসেছে।
মার্কিন এই নিষেধাজ্ঞার আগে ইরানের দৈনিক অপরিশোধিত তেল রফতানির পরিমাণ ছিল প্রায় ২০ লাখ ব্যারেল।
আইএমএফ বলছে, সৌদি আরব নেতৃত্বাধীন তেল সমৃদ্ধ উপসাগরীয় সহযোগিতা পরিষদভূক্ত (জিসিসি) দেশগুলোর প্রবৃদ্ধি গত বছরের তুলনায় ০ দশমিক ৭ শতাংশ কমতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে। জিসিসি ভূক্ত দেশগুলোর অর্থনৈতিক পরিস্থিতিকে তেল নির্ভরতা থেকে বের করে আনতে হবে বলে মন্তব্য করেছেন আজৌর।