স্বামীর কলেজের ছাত্র-ছাত্রী দেখিয়ে স্ত্রীর কলেজ এমপিওভুক্ত!

রংপুর প্রতিনিধি

মিথ্যা তথ্যে এমপিওভুক্ত!

রংপুরের মিঠাপুকুর উপজেলার ডা. এমআর মহিলা টেকনিক্যাল অ্যান্ড বিএম কলেজ ২০১১ সালে প্রতিষ্ঠা হয়। শ্রেণিকক্ষে নেই বেঞ্চ ও চেয়ার। কলেজটিতে একদিনও পাঠদান হয়নি।

প্রায় পাঁচ বছর আগে শুধু কয়েকটি শ্রেণিকক্ষ নির্মাণ করে রাখা হয়েছে। কলেজটির অধ্যক্ষ ফারহানা আক্তার মুক্তি এবং গভর্নিং বডির সভাপতি তার স্বামী মোকছেদুর রহমান আরিফ।

এই কলেজের ২০ মিটার দূরে রয়েছে গোপালপুর বিএম কলেজ নামে আরেকটি প্রতিষ্ঠান। এই কলেজের অধ্যক্ষ মোকছেদুর রহমান আরিফ। দুটি কলেজের প্রতিষ্ঠাতা তিনি। কাগজ-কলমে দুটি প্রতিষ্ঠান চালু থাকলেও বাস্তবে শিক্ষার্থী রয়েছে গোপালপুর বিএম কলেজে।

এই কলেজের শিক্ষার্থী দিয়ে ডা. এমআর মহিলা টেকনিক্যাল অ্যান্ড বিএম কলেজটি চালু দেখিয়ে এমপিও তালিকায় নাম অন্তর্ভুক্ত করেছেন অধ্যক্ষ আরিফ।

স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, গোপালপুর বিএম কলেজ এবং ডা. এমআর মহিলা টেকনিক্যাল অ্যান্ড বিএম কলেজ ২০১১ সালে প্রতিষ্ঠা করেন মোকছেদুর রহমান আরিফ। প্রতিষ্ঠার পর থেকে আজ পর্যন্ত একদিনও ডা. এমআর মহিলা টেকনিক্যাল অ্যান্ড বিএম কলেজে পাঠদান হয়নি। গোপালপুর বিএম কলেজের মেয়ে শিক্ষার্থীদের নাম অন্তর্ভুক্ত করে দীর্ঘদিন ধরে চালু দেখিয়েছেন মহিলা কলেজটি।

গোপালপুর বিএম কলেজের অধ্যক্ষ হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন মোকছেদুর রহমান আরিফ। পাশাপাশি ডা. এমআর মহিলা টেকনিক্যাল অ্যান্ড বিএম কলেজের অধ্যক্ষ হিসেবে আছেন আরিফের স্ত্রী ফারহানা আক্তার মুক্তি। একই সঙ্গে এমআর মহিলা টেকনিক্যাল অ্যান্ড বিএম কলেজের সভাপতির পদটিও ধরে রেখেছেন আরিফ।

কলেজ কর্তৃপক্ষ সূত্রে জানা যায়, ডা. এমআর মহিলা টেকনিক্যাল অ্যান্ড বিএম কলেজের ভোকেশনাল শাখায় কম্পিউটার, এগ্রোবেজ ফুড, জেনারেল ইলেক্ট্রিক্যাল ও পোল্ট্রি ট্রেডে ৩৫ জন করে মোট ১৪০ জন শিক্ষার্থী দেখিয়ে এমপিওভুক্ত করা হয়।

পাশাপাশি বিজনেস অ্যান্ড ম্যানেজমেন্ট (বিএম) শাখায় হিসাব বিজ্ঞানে ১৫০ এবং কম্পিউটার তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তি শাখায় ২০০ জন শিক্ষার্থী দেখানো হয়। কিন্তু বাস্তবে একজন শিক্ষার্থীও নেই।

রোববার সরেজমিনে ডা. এমআর মহিলা টেকনিক্যাল অ্যান্ড বিএম কলেজে গিয়ে দেখা যায়, কলেজে কোনো শিক্ষার্থী নেই। নেই চেয়ার ও বেঞ্চ। মাঠের ময়লা পরিষ্কার করছিলেন কলেজের দপ্তরি রেজাউল ইসলাম।

তিনি বলেন, এখন থেকে নিয়মিত ক্লাস নেয়া হবে, তাই পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করা হচ্ছে।

সাংবাদিক আসার খবর পেয়ে কলেজে ছুটে আসেন শিক্ষক আরিফুল ইসলাম।

তিনি বলেন, আমাদের কলেজে নিয়মিত পাঠদান করা হয়। এমপিওভুক্ত হওয়ায় নতুন উদ্যমে পাঠদান শুরু হবে। কলেজের শ্রেণিকক্ষে বেঞ্চ ও টেবিল নেই কেন জানতে চাইলে কোনো কথা বলেননি শিক্ষক আরিফুল।

এর কিছুক্ষণ পর বিদ্যালয়ে আসেন অধ্যক্ষ মোকছেদুর রহমান আরিফের ভাই জাহেদুর রহমান। তিনি এই কলেজের হিসাব বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষক।

জাহেদুর রহমান বলেন, গোপালপুর বিএম কলেজ ও ডা. এমআর মহিলা কলেজ দুটি আমরাই প্রতিষ্ঠা করেছি। শিক্ষার্থীও আশানুরূপ। এমপিওভুক্ত হওয়ায় নতুন করে গুছিয়ে তোলা হচ্ছে মহিলা কলেজটি।

স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, গোপালপুর বিএম কলেজটি প্রতিষ্ঠা করেন মোকছেদুর রহমান আরিফ। তিনি কলেজটির অধ্যক্ষ পদে রয়েছেন। তবে কাগজ-কলমে ডা. এমআর মহিলা কলেজটি চালু রয়েছে। এই কলেজের অধ্যক্ষ তার স্ত্রী ফারহানা আক্তার মুক্তি। দীর্ঘদিন ধরে কলেজটির সভাপতি পদটি আঁকড়ে ধরে রেখেছেন আরিফ।

স্থানীয় মজিবর রহমান ও আবু বক্কর জানান, একদিনের জন্য ক্লাস হয়নি মহিলা বিএম কলেজে। শুধুমাত্র কয়েকটি ক্লাসরুম তুলে রাখা হয়েছে প্রায় বছর পাঁচেক আগে। হঠাৎ শুনি মহিলা কলেজটি এমপিওভুক্ত হয়েছে। মিঠাপুকুরে অনেক বিএম কলেজ দীর্ঘদিন ধরে নিয়মিত চললেও সেগুলো এমপিওভুক্ত হয়নি। এই মহিলা কলেজটি এমপিওভুক্ত হওয়ায় আমরা বিস্মিত।

মিঠাপুকুর উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার জাহেদুল ইসলাম বলেন, এমপিওভুক্তির ক্ষেত্রে সব তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ করেছে মন্ত্রণালয়। আমি মাঠপর্যায়ে ছোট কর্মচারী, কিভাবে ওই কলেজ এমপিওভুক্ত হলো আমি বলতে পারছি না।

গোপালপুর বিএম কলেজের অধ্যক্ষ ও ডা. এমআর মহিলা টেকনিক্যাল অ্যান্ড বিএম কলেজের সভাপতি মোকছেদুর রহমান আরিফ বলেন, এবারে যে প্রতিষ্ঠানগুলো এমপিওভুক্ত হয়েছে, বুঝতে হবে সেগুলোর অবশ্যই কোয়ালিটি আছে।

শেয়ার করুন

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে