নেত্রকোনার মদন উপজেলায় নিজস্ব অবকাঠামো ছাড়া নামসর্বস্ব ‘জনতা কারিগরি ও বাণিজ্য কলেজ’ নামে একটি প্রতিষ্ঠানকে এমপিওভুক্ত করা হয়েছে।
স্থানীয়রা জানান, উপজেলায় এমপিওভুক্ত হওয়ার যোগ্য বেশ কয়েকটি প্রতিষ্ঠান থাকলেও সেগুলো না করে নিজস্ব জায়গা নেই এমন প্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্ত করা হয়েছে। ভুয়া প্রতিষ্ঠানের এমপিও বাতিল করে এর সঙ্গে জড়িতদের শাস্তির দাবি করেছেন তারা।
প্রতিষ্ঠানের ঠিকানা অনুযায়ী নিজস্ব জায়গা-জমি কিংবা অবকাঠামো না থাকলেও এমপিওভুক্ত হয়েছে জনতা কারিগরি ও বাণিজ্য কলেজ। প্রতিষ্ঠানটির অবস্থান দেখানো হয়েছে মদন উপজেলার বালালি এলাকায়। কিন্তু বাস্তবতা ভিন্ন। এই নামে এলাকায় কলেজ আছে জানেন না খোদ এলাকাবাসী। কারণ কলেজ প্রতিষ্ঠা হওয়া তো দূরের কথা এই নামে কলেজের কোনো জায়গা-জমি কিংবা অবকাঠামো নেই।
এদিকে, ২৫ বছরের পুরনো তিনতলা ভবনসহ অনেক প্রতিষ্ঠান রয়েছে ওই এলাকায়। কিন্তু এসব প্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্ত হয়নি। এ নিয়ে এলাকাবাসীর মধ্যে দেখা দিয়েছে ক্ষোভ ও অসন্তোষ।
সরেজমিনে দেখা যায়, বালালি এলাকায় ‘জনতা কারিগরি ও বাণিজ্য কলেজ’ নামে কোনো প্রতিষ্ঠান নেই। তবে ওই এলাকায় ‘বালালি বাঘমারা শাহজাহান মহাবিদ্যালয়’ নামে একটি প্রতিষ্ঠান রয়েছে। এই প্রতিষ্ঠানটি ১৯৯৮ সালে প্রতিষ্ঠা করেছেন প্রয়াত মুক্তিযোদ্ধা লে. কর্নেল শাহজাহান উদ্দিন ভুঁইয়া। হাওরের পাশে বিশাল জায়গা, তিনতলা ভবন বিশিষ্ট অবকাঠামো, দুই শতাধিক শিক্ষার্থী, প্রয়োজনীয় শিক্ষক, পাশের হার সন্তোষজনক হওয়া সত্ত্বেও এই প্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্ত হয়নি।
বালালি বাঘমারা শাহজাহান মহাবিদ্যালয়ের ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি ও মদন উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি রুকন উদ্দিন, বালালি গ্রামের মুক্তিযোদ্ধা জসিম উদ্দিন, মজিবুর রহমান, হাবিবুর রহমান, সাইদুল হকসহ অন্তত ১২ জন বলেন, ‘জনতা কারিগরি ও বাণিজ্য কলেজ’ নামে এই এলাকায় কোনো প্রতিষ্ঠান নেই।
শুনেছি বালালি এলাকার আব্দুল আজিজ নামে এক ব্যক্তির ‘জনতা কারিগরি ও বাণিজ্য কলেজ’ নামে একটি প্রতিষ্ঠান আছে। প্রতিষ্ঠানটি মদন পৌর শহরের একটি এলাকায় বাসা ভাড়া নিয়ে মাঝেমধ্যে কার্যক্রম চালায়। আব্দুল আজিজ নেত্রকোনা শহরের খতিবনগুয়া এলাকায় নেত্রকোনা কারিগরি স্কুল অ্যান্ড কলেজের অধ্যক্ষ হিসেবে কর্মরত।
মদন পৌর শহরে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, মদন বাজার এলাকায় মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্সসংলগ্ন কাজি জসিম উদ্দিন নামে এক ব্যক্তির এক রুমের একটি বাসা ভাড়া নিয়ে ‘জনতা কারিগরি ও বাণিজ্য কলেজের’ কার্যক্রম চালানো হয়।
সেখানে গিয়ে দেখা যায়, অপরিচ্ছন্ন পরিবেশের ওই বাসার একটি রুমকে তিন ভাগে বিভক্ত করে ছোট একটি কক্ষে শিক্ষকদের বসার জন্য ছয়টি চেয়ারের ব্যবস্থা করা হয়েছে। পাশের দুই কক্ষে কয়েকটি বেঞ্চ রাখা আছে। প্রতি মাসে ভাড়া গুনতে হয় ছয় হাজার টাকা।
কথা হয় অধ্যক্ষের দায়িত্বে থাকা আরিফুর রহমান খান ও ব্যবস্থাপনা বিভাগের শিক্ষক নূরে আলম সিদ্দিকির সঙ্গে। তারা জানান, ২০০৫ সালে ‘জনতা কারিগরি ও বাণিজ্য কলেজ’ নামে এই প্রতিষ্ঠানটি আব্দুল আজিজ নামে এক ব্যক্তি প্রতিষ্ঠা করেন। কলেজে শিক্ষক ও কর্মচারী মিলিয়ে মোট জনবল ১১ জন। বর্তমানে প্রতিষ্ঠানের নিজস্ব ৫০ শতক জায়গা মদনের বালালি এলাকায় রাখা আছে। সেখানে দ্রুত ঘর তৈরি করা হবে।
তাদের দাবি, কলেজের বিএম শাখায় ১৭২ জন ও স্কুল শাখায় ১২৩ জন শিক্ষার্থী আছে। তবে স্কুল শাখা এ বছর থেকে প্রথম শুরু করা হয়। এ বছর বিএমএ শাখা থেকে ৭২ জন পরীক্ষা দিয়ে ৬২ জন পাস করেছে। এর আগের বছর পাসের হার ৮৬ শতাংশ।
এ বিষয়ে স্থানীয়রা বলছেন, কয়েক বছর আগে ভাড়া বাড়িতে কলেজটির কার্যক্রম শুরু করলেও সেখানে দীর্ঘদিন ধরে কোনো কার্যক্রম ছিল না। শুধু ভর্তি ও ফরম পূরণের সময় কার্যালয় খোলা থাকে।
তবে সরকারি ছুটির দিন থাকার পরও বিএম প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থী ঝুমা আক্তার, মনোয়ার হোসেন, পারভেজ, লিজা আক্তার, নবম শ্রেণির আলিমুল, মো. মোন্না নামের ছয়জন শিক্ষার্থীকে কলেজে উপস্থিত দেখা গেছে। তারা জানায়, প্রয়োজনীয় শিক্ষা উপকরণসহ শিক্ষার্থীর উপস্থিত কম থাকলেও নিয়মিত ক্লাস হয়। এখন এমপিওভুক্ত হওয়ায় আনন্দিত আমরা।
এসব বিষয়ে জানতে জনতা কারিগরি ও বাণিজ্য কলেজের প্রতিষ্ঠাতা আব্দুল আজিজের মুঠোফোন নম্বরে একাধিক বার কল দিলেও রিসিভ করেননি।
নেত্রকোনা জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা আব্দুল গফুর বলেন, এমপিওভুক্তির আবেদন সরাসরি করা হয়েছে। আবেদনের আগে বা পর জেলা থেকে খোঁজখবর নেয়ার সুযোগ ছিল না। তবে অভিযোগ পেলে বিষয়টি তদন্ত করে কর্তৃপক্ষকে জানানো হবে।