সাকিবের নিষেধাজ্ঞা: লঘু পাপে গুরু দণ্ড

সম্পাদকীয়

র আ ম উবায়দুল মোকতাদির চৌধুরী
র আ ম উবায়দুল মোকতাদির চৌধুরী এমপি। ফাইল ছবি

বাংলাদেশের ক্রিকেট একটি সংকটময় সময় অতিক্রম করছে।একটা সমস্যা কাটিয়ে ওঠার আগেই যেন হাজির হচ্ছে আরেকটা সমস্যা। যার শুরু গত ২১ অক্টোবর সাকিবের নেতৃত্বে ক্রিকেটারদের ১১ দফা পেশ এবং তাৎক্ষণিক ধর্মঘট ঘোষণার মধ্য দিয়ে। পরদিন বিসিবি প্রধানের কঠোর প্রতিক্রিয়া দেশের কোটি ক্রিকেটপ্রেমীর উদ্বেগ উৎকন্ঠাকে আরও বাড়িয়ে দেয়। তবে তারপর দিনই আমাদের ক্রিকেটপ্রেমী প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে নমনীয় হন বিসিবি প্রধান। ঐদিন রাতেই হয়ে যায় সমঝোতা। কিন্তু দুদিন পরই শুরু হয় নতুন বিতর্ক। নিয়ম না মেনে গ্রামীণফোনের সাথে চুক্তি করার অভিযোগে সাকিব আল হাসানকে কারণ দর্শাতে বলে বোর্ড। ভারত সফরের আগে দলের মনোবল ভেঙ্গে দেয়ার জন্য এর বেশি কিছুর প্রয়োজন ছিল না। ক্রিকেটারদের আন্দোলন, সাকিবকে শোকজ, বিসিবি প্রধানের হুমকির মধ্যেই রীতিমত পারমাণবিক বোমা ফাটালো আইসিসি।

বাংলাদেশের ভারত সফরের ঠিক আগের দিন সন্ধ্যায় আইসিসি তাদের ওয়েবসাইটে জানিয়ে দিল, জুয়াড়ীদের সাথে যোগাযোগের তথ্য গোপন করায় বিশ্বসেরা অলরাউন্ডার সাকিব আল হাসান দুই বছরের জন্য নিষিদ্ধ।

universel cardiac hospital

ম্যাচ ফিক্সিংয়ের  সাথে জড়িত না থেকেও দুই বছরের জন্য সবধরনের ক্রিকেট থেকে নিষিদ্ধ করা হলো বিশ্বসেরা অলরাউন্ডারকে। অবশ্য দোষ স্বীকার করায় এক বছরের শাস্তি স্থগিত করেছে আইসিসির অ্যান্টি-করাপশন ইউনিট। তবে আমরা মনে করি, সাকিবের প্রতি আইসিসি ন্যায় বিচার করেনি। তাঁর অপরাধ হলো- আইসিসি এবং এন্টি করাপশন ইউনিটকে ম্যাচ ফিক্সিংয়ের প্রস্তাব সম্পর্কে জানায়নি। এক্ষেত্রে সাকিব ভুল করেছে, কিন্তু কোনো অপরাধ করেনি। এজন্য দুই বছরের নিষেধাজ্ঞা লঘু পাপে গুরু দণ্ডের পর্যায়েই পড়ে। আমরা আশা করি, আইসিসি তাদের সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনা করবে।

সাকিবের দণ্ডের বিষয়ে বিসিবির বক্তব্য স্ববিরোধীতার পর্যায়ে পড়ে। বিসিবি সভাপতি ২২ অক্টোবরের সংবাদ সম্মেলনে সাকিবের শাস্তির বিষয়ে ইঙ্গিত করে বলেছিলেন ‘ম্যাচ ফিক্সিংয়ের খবর খুব শ্রীগই আসবে, চিন্তা কইরেন না ঐগুলা আসতেছে’। অথচ সাকিবের শাস্তি পরবর্তী সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেছেন, ‘এসব বিষয়ে তাঁর কোনো ধারণাই ছিল না’।

আমরা মনে করি, বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি) সবকিছুই জানতো এবং তাঁরা সাকিবের নিষেধাজ্ঞার মেয়াদ কমানোর চেষ্টা করতে পারতো। তবে বিসিবি এই জায়গায় সাকিবের পাশে দাঁড়ায়নি।

বাংলাদেশ টিমের জন্য সাকিব আল হাসান অবিচ্ছেদ্য অংশ। তাকে ঘিরে ২০২৩ বিশ্বকাপের স্বপ্ন দেখে এদেশের অসংখ্য ক্রিকেটপ্রেমী। ফর্মের তুঙ্গে থাকা সাকিবের একবছর না থাকাটা শুধু বাংলাদেশ নয়, বিশ্ব ক্রিকেটের জন্যই বিশাল ক্ষতি।

তবে সাকিব কথা দিয়েছেন, তিনি আরো শক্তিশালী হয়ে ফিরে আসবেন। অবশ্য সেই ফিরে আসার জন্য তিনি সবার সহায়তা চেয়েছেন। বাস্তবিকই এই দুঃসময়ে সবাইকে তার পাশে থাকা উচিত। তাই প্রধানমন্ত্রী থেকে শুরু করে আমজনতা সবাই সাকিবের পাশে থাকার অঙ্গীকার করেছেন। আমরা সবাই আছি সাকিবের পাশে, ক্রিকেটের পাশে।

শেয়ার করুন

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে