ইসরাইলের নিরাপত্তা সংস্থার বিরুদ্ধে মামলা করল ফেসবুক কর্তৃপক্ষ

বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি ডেস্ক

মার্ক জাকারবার্গ।
মার্ক জাকারবার্গ। ছবি: রয়টার্স

২০টি দেশের প্রায় ১৪০০ ব্যবহারকারীর অ্যাকাউন্টে ‘স্পাইওয়্যার’ ঢোকানোর চেষ্টার ঘটনায় ইসরাইলের নিরাপত্তা সংস্থার (এনএসও) বিরুদ্ধে মামলা করেছে ফেসবুক কর্তৃপক্ষ। এসব ব্যবহারকারীদের মধ্যে ভারতে হোয়াটসঅ্যাপ ব্যবহারকারীদের ওপর আড়ি পাতার বেশি টার্গেট করা হয়েছিল বলে স্বীকার করা হয়েছে।

হোয়াটস অ্যাপ ব্যবহারকারীদের মধ্যে ভারতীয় সাংবাদিক, কূটনীতিক, পদস্থ সরকারি কর্তা ও মানবাধিকার সংগঠনের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ রয়েছে।

universel cardiac hospital

কলকাতার প্রভাবশালী সংবাদমাধ্যম আনন্দবাজারের প্রতিবেদনে বলা হয়, ‘স্পাইওয়্যার’ প্রযুক্তি বা সফটওয়্যারের সাহায্যে ব্যবহারকারীর প্রায় সমস্ত ব্যক্তিগত তথ্য সংগ্রহ করা যায়। বিষয়টি হোয়াটসঅ্যাপ কর্তৃপক্ষ আগে থেকে জেনে যাওয়ায় ইসরাইলের পরিকল্পনা সফল হয়নি।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, মার্ক জাকারবার্গের কোম্পানির পক্ষ থেকে যাদের অ্যাকাউন্ট হ্যাক করার চেষ্টা করা হয়েছিল, তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করে বিষয়টি জানিয়ে দিয়েছে। প্রয়োজনীয় সতর্কতা অবলম্বন করার কথাও বলা হয়েছে হোয়াটসঅ্যাপের পক্ষ থেকে।

তবে ইসরাইলি ওই সংস্থার দাবি, এই অভিযোগ মিথ্যা। তারাও এর বিরুদ্ধে লড়াই করবে।

হোয়াটসঅ্যাপের প্রযুক্তি ছিল এন্ড টু এন্ড এনক্রিপ্টেড। অর্থাৎ শুধুমাত্র যাদের মধ্যে ভয়েস বা ভিডিও কল কিংবা মেসেজ চালাচালি হচ্ছে, তারা ছাড়া তৃতীয় পক্ষের কেউ জানতে পারবে না। কেউ সেটা অ্যাকসেস করতে অর্থাৎ দেখতে পারবে না। এমনকি, হোয়াটসঅ্যাপে কর্তৃপক্ষও নয়।

অন্যদিকে যাদের অ্যাকাউন্টে এই প্রযুক্তি ঢুকিয়ে আড়িপাতার চেষ্টা হয়েছিল, তারা এত দিন পর্যন্ত কিছু জানতে পারেননি। হোয়াটসঅ্যাপের পক্ষ থেকে যোগাযোগে করে জানানো পর এসব ব্যবহারকারীরা আতঙ্কিত। কারণ ইতিমধ্যেই ব্যক্তিগত তথ্য চুরি হয়েছে কি-না, সে বিষয়ে তারা নিশ্চিন্ত নন। যদিও হোয়াটসঅ্যাপ কর্তৃপক্ষ আশ্বস্ত করেছে, তাদের অ্যাকাউন্ট আগের মতোই সুরক্ষিত।

স্পাইওয়্যার আসলে এক ধরনের সফটওয়্যার বা প্রযুক্তি যার মাধ্যমে ব্যবহারকারীর অজান্তেই তার মোবাইল, কম্পিউটার বা ল্যাপটপে ঢুকিয়ে দেওয়া হয়। ফলে আক্রান্তের পাসওয়ার্ড, কনট্যাক্ট লিস্ট বা ফোন নম্বরের তালিকা, ক্যামেরা, ছবিসহ প্রায় যাবতীয় তথ্যের অ্যাকসেস পেয়ে যায় আড়ি পাতা ব্যক্তি বা সংস্থা।

হোয়াটসঅ্যাপের ক্ষেত্রে সেই স্পাইওয়্যারের নাম ছিল ‘পেগাসাস’। এই ‘পেগাসাস’ ঢুকানোর চেষ্টা হয়েছিল ভিডিও কলের সময়। কল করার সঙ্গে সঙ্গেই যাকে ভিডিও কল করা হচ্ছিল, তার মোবাইলে একটি ‘বাগ’ বা ‘ম্যালওয়্যার’ (যা আসলে কিছু কম্পিউটার কোডের সমন্বয়) সক্রিয় হয়ে করার চেষ্টা হয়েছিল। সেটা সফল হলে মোবাইলে ব্যবহারকারীর অজান্তেই ইনস্টল করে দেওয়া যেত। তার পরেই পাওয়া যেত ব্যবহারকারীর প্রায় সমস্ত ব্যক্তিগত তথ্য। এমনকি, রিসিভার কলের উত্তর দিতে না পারলে বা ইচ্ছাকৃতভাবে কেটে দিলেও তার থেকে মুক্তি পেতেন না।

হোয়াটসঅ্যাপের দাবি এ বছরের এপ্রিলে প্রায় দু’সপ্তাহ ধরে ক্রমাগত এই আড়ি পাতার চেষ্টা চালিয়ে গিয়েছে ইসরাইলি ওই সংস্থা। মে মাসে ‘সাইবার অ্যাটাক’-এর ঘোষণাও করেছিল মার্ক জাকারবার্গের সংস্থা।

তবে তাদের দাবি, সেই প্রচেষ্টা সফল হয়নি। তার আগেই তাদের সুরক্ষা প্রযুক্তি এই আড়িপাতার চেষ্টা ধরে ফেলেছে। তবে ভারতের কতজনকে টার্গেট করেছিল ইসরাইলের ওই সংস্থা, তার স্পষ্ট কোনো জবাব দেয়নি মার্ক জাকারবার্গের সংস্থা। শুধু জানানো হয়েছে, সম্ভাব্য যাদের যাদের টার্গেট করা হয়েছিল, সবাইকেই জানিয়ে দেওয়া হয়েছে।

এদিকে ভারতের একটি টিভি চ্যানেলের সাংবাদিক সিদ্ধান্ত সিব্বল টুইট করে দাবি করেছেন, তার হোয়াটসঅ্যাপ অ্যাকাউন্ট টার্গেট করা হয়েছিল। কর্তৃপক্ষ তার সঙ্গে যোগাযোগ করে বিষয়টি জানিয়েছে। তিনি লিখেছেন, ‘এ বার আইনি ও প্রযুক্তিগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

তবে অভিযোগ উড়িয়ে দিয়ে এনএসও দাবি করেছে, এর বিরুদ্ধে আমরা যথাসাধ্য লড়াই করব। সাংবাদিক বা মানবাধিকার কর্মীদের ওপর আড়ি পাতার জন্য আমাদের সংস্থার প্রযুক্তি তৈরি হয়নি বা লাইসেন্স পায়নি। তাদের দাবি, ‘পেগাসাস’-এর লাইসেন্স মিলেছে শুধুমাত্র সরকারি সংস্থাগুলোর কাজকর্মের ওপর নজর রাখার জন্য।’

শেয়ার করুন

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে