শুধু শাস্তির ভয় দেখিয়ে সড়কে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনা সম্ভব না বলে দাবি করেছেন বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশনের কার্যকরী সভাপতি শাজাহান খান। নতুন সড়ক পরিবহন আইন কার্যকরের একদিন আগে এর বেশ কিছু ধারার সমালোচনা করে তিনি বলেন, ‘এখনও বিধি প্রণয়ন করা হয়নি। বিধি প্রণয়ন ব্যতীত আইন প্রয়োগে জটিলতার অবসান হবে কীভাবে?’
আজ বৃহস্পতিবার সেগুনবাগিচায় ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশন কর্তৃক আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ কথা বলেন।
শাজাহান খান বলেন, ‘চালক বা শ্রমিককে সাজা বা ফাঁসি দিলে দুর্ঘটনা বন্ধ হবে এমন অলীক কল্পনা যারা করেন, তারা বোকার স্বর্গে বাস করছেন।’
সাবেক এই মন্ত্রী বলেন, ‘সব দেশে আইন আছে। কেউ কাউকে হত্যা করলে তার সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ড। এ কঠিন আইন থাকার পরও কি হত্যাকাণ্ড বন্ধ হয়ে গেছে? তাদের মনে রাখতে হবে দুর্ঘটনায় মৃত্যু হত্যাকাণ্ড নয়। দুর্ঘটনা দুর্ঘটনাই। এই দুর্ঘটনার জন্য চালক এককভাবে দায়ী নয়।’
দুর্ঘটনার ওপর আদালতের কয়েকটি রায়ের প্রসঙ্গ উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘সম্প্রতি দুর্ঘটনার কারণে দেশের সর্বোচ্চ আদালত পরিবহন মালিক ও শ্রমিকদের বিরুদ্ধে কোটি কোটি টাকা ক্ষতিপূরণের রায় দিয়েছেন। ঢালাওভাবে এ ধরনের রায় কোনো দেশে নেই। এতে মালিক-শ্রমিক গভীর উদ্বেগ ও উৎকণ্ঠার মধ্যে আছেন। এসব রায় সড়কে কতটা শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনবে, তা নিয়েও প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। শুধু শাস্তির ভয় দেখিয়ে সড়কে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনা সম্ভব না। বরং সড়ক আইন যথাযথ বাস্তবায়ন করতে হলে আমাদের প্রস্তাবিত ১১১টি সুপারিশের বাস্তবায়ন জরুরি।’
সংবাদ সম্মেলনে কয়েকটি দাবি উত্থাপন করেন শাজাহান খান। তার দাবিগুলো হলো- সড়ক দুর্ঘটনার মামলাকে জামিনযোগ্য করতে হবে। তদন্ত ব্যতীত দুর্ঘটনার মামলা ৩০২ ধারায় দায়ের করা যাবে না। সড়ক দুর্ঘটনার মামলা নিরপেক্ষতার স্বার্থে পুলিশ ও দুর্ঘটনা গবেষণা ইনস্টিটিউটের যৌথ উদ্যোগে তদন্ত করতে হবে। প্রস্তাবিত ১১১টি সুপারিশ অবিলম্বে বাস্তবায়ন করতে হবে। আইনটির কয়েকটি ধারা সংশোধনের জন্য শ্রমিক ফেডারেশনের প্রস্তাব গ্রহণ করতে হবে। লোডিং পয়েন্টে ওভারলোড চেক করার ব্যবস্থা করতে হবে।
তিনি বলেন, ‘আইনটি ভেটিংয়ের সময় মালিক ও শ্রমিকরা এর কয়েকটি বিধান সংশোধনের প্রস্তাব করেন। প্রস্তাবগুলোর মধ্যে কিছু গ্রহণ করা হয়, আবার কিছু গ্রহণ করা হয়নি। আইনটি পাস হওয়ার পর আমরা দেখতে পাই আইনের মধ্যে কিছু অসামঞ্জস্য রয়ে গেছে। আমরা বিষয়গুলো সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরের দৃষ্টিতে আনি। তিনি স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর নেতৃত্বে একটি কমিটি করে দেন। কমিটি কয়েক দফা বৈঠক করে আমাদের কয়েকটি প্রস্তাবের যৌক্তিকতার সঙ্গে একমত পোষণ করেন।’
তিনি আরও বলেন, ‘একথা সত্য, এই আইনে মালিক-শ্রমিকদের স্বার্থ সংশ্লিষ্ট বিষয়ে অনেকগুলো ধারা রয়েছে। তবে কিছু ধারা সম্পর্কে আমাদের আপত্তির জায়গাটা বিবেচনা করা হোক, এটাই আমাদের দাবি। বর্তমান সরকার আইনটি বাস্তবায়নের সিদ্ধান্ত ঘোষণা করেছেন। প্রশ্ন হলো এখনও বিধি প্রণয়ন করা হয়নি। বিধি প্রণয়ন ব্যতীত আইন প্রয়োগে জটিলতার অবসান হবে কীভাবে?’
শাজাহান খান বলেন, ‘দুর্ঘটনা ঘটলে শুধু যাত্রী বা পথচারী নিহত হয় না। চালক বা শ্রমিকও নিহত হন। চালক বা শ্রমিকের কারণে যদি দুর্ঘটনা ঘটে তার দায়ভার চালক ও শ্রমিকের। আইন অনুযায়ী তাদের সাজা হবে। অন্য কারণে দুর্ঘটনার দায়ভার তারা নেবে কেন?’
- আরও পড়ুন >> ২৮ নভেম্বর থেকে চালু হবে ই-পাসপোর্ট সেবা
তিনি বলেন, ‘রেলপথের ওপর মোবাইল ফোন কানে দিয়ে কথা বলতে গিয়ে আনমনা কেউ ট্রেনের চাকায় কাটা পড়লে, তার জন্য কি ট্রেনের ড্রাইভারকে দায়ী করা হয়?’
এসময় আইন বাস্তবায়নের ধারাবাহিকতা অবলোকন ও নিবিড় পর্যবেক্ষণের পর তাদের পরবর্তী কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে বলেও জানান শাজাহান খান।