সৌদি প্রশাসনের ধরপাকড়ের শিকার হয়ে আরও ১৫৩ জন বাংলাদেশি দেশে ফিরেছেন। গতকাল বুধবার রাত ১১টা ২০ মিনিটে সৌদি এয়ারলাইন্সের এসভি-৮০৪ বিমানে তারা দেশে ফেরেন।
একেবারে নিঃস্ব এসব কর্মী যখন শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর দিয়ে নামলেন, তখন তাদের অনেকেরই ছিল খালি পা, কারও মুখে এবড়োথেবড়ো দাড়ি। কেউ আবার সৌদিতে যে পোশাক পরে কাজ করতেন, সে পোশাকেই বাংলাদেশে ফিরেছেন।
এদের মধ্যে জীবিকার উদ্দেশে মাত্র দেড় মাস আগে সৌদি যাওয়া ব্যক্তিও আছেন। ফেরত এসব কর্মীদের অনেকের পায়ে স্যান্ডেলও ছিল না।
গতকাল ফেরত আসা হতভাগ্য এসব বাংলাদেশিদের মধ্যে একজন কুমিল্লার শাহজাহান মিয়া। কান্নারত কণ্ঠে তিনি বলেন, দেড় মাসও হয়নি সৌদি গেছিলাম। কিন্তু সেখানে ধরপাকড়ের শিকার হলাম। শূন্য হাতে রাস্তা থেকেই দেশে ফিরত পাঠাল সৌদি পুলিশরা।
শাহজাহান মিয়ার মতোই দেড় মাস আগে সৌদি আরব গিয়েছিলেন ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নজরুল ইসলাম। তার মুখেও শোনা গেল একই বিলাপ, খরচের টাকাই তুলতে পারলাম না। এভাবে ধরপাকড় করা ঠিক হচ্ছে না সৌদি সরকারের।
কুষ্টিয়ার রুহুল আমিন যে শুধু শূন্য হাতে ফিরেছেন তাই নয়, তার পায়ে স্যান্ডেলটাও ছিল না। তিনি বলেন, ১১ মাস আগে সৌদি গিয়েছিলাম। যে টাকা খরচ করে গিয়েছিলাম তাই তুলতে পারিনি। আর আজ খালি হাতে ফিরতে হলো।
কিশোরগঞ্জের খালেদের কষ্টটা অনেক বেশি। সৌদি আরবে বেশ ভালই ব্যবসা করছিলেন তিনি। হঠাৎই ধরপাকড়ের শিকার হলেন। ১১ লাখ টাকার ব্যবসা রেখেই শূন্য হাতে দেশে ফিরতে হয়েছে তাকে।
অন্যান্য বারের মতো গতকালও এসব হতভাগা সৌদি ফেরত বাংলাদেশি কর্মীদের প্রবাসী কল্যাণ ডেস্কের সহযোগিতায় খাবার-পানিসহ নিরাপদে বাড়ি পৌঁছানোর জন্য জরুরি সহায়তা প্রদান করেছে ব্র্যাক মাইগ্রেশন প্রোগ্রাম।
ব্র্যাক অভিবাসন কর্মসূচির প্রধান শরিফুল হাসান জানান, চলতি বছর এখন পর্যন্ত অন্তত ১৮ হাজার বাংলাদেশিকে সৌদি আরব থেকে ফেরত পাঠানো হয়েছে। সাধারণ ফ্রি ভিসার নামে গিয়ে এক নিয়োগকর্তার বদলে আরেক জায়গায় কাজ করার সময় ধরা পড়ে ফেরত আসছেন। অনেকে খরচের টাকাও তুলতে পারছেন না।
- আরও পড়ুন >> আবরার হত্যার চার্জশিট নভেম্বরের প্রথম সপ্তাহে
তিনি বলেন, সৌদি আরবের বাংলাদেশ দূতাবাস বলছে, নির্দোষ কাউকে ফেরত পাঠানোর বিষয়টি জানতে পারলে তারা সৌদি সরকারের সঙ্গে যোগাযোগ করবে। দূতাবাসের এ তৎপরতার পাশাপাশি রিক্রুটিং এজেন্সিগুলোকে দায়িত্ব নিতে হবে।