রাজধানীর টিকাটুলী এলাকার রাজধানী সুপারমার্কেট ও নিউ রাজধানী সুপারমার্কেটের ‘স্বঘোষিত’ সভাপতি ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) ৩৯ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর ময়নুল হক মঞ্জুর বাসায় বৃহস্পতিবার অভিযান চালিয়ে দুটি পিস্তল, মদ, গাঁজা, ইয়াবা, ফেনসিডিল ও যৌন উত্তেজক ট্যাবলেট জব্দ করেছে র্যাব। বাড়ি থেকে মনজুর গাড়িচালক সাজ্জাদকেও গ্রেপ্তার করে তারা।
এর আগে গত বুধবার রাতে কাজী রনি নামে রাজধানী সুপারমার্কেটের একজন ব্যবসায়ী ওয়ারী থানায় মনজুর বিরুদ্ধে দুই লাখ টাকা চাঁদা দাবির অভিযোগে মামলা করেন। র্যাব কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, চাঁদাবাজির মামলায় প্রথমে গ্রেপ্তার করা হলেও মঞ্জুর বিরুদ্ধে অস্ত্র ও মাদক আইনে গতকাল দুটি মামলা হয়েছে। অর্থপাচারের প্রমাণ মিললে মানি লন্ডারিং আইনেও মামলা হবে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো বলছে, মঞ্জু ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের গত কমিটির সদস্য ছিলেন। বর্তমানে ওয়ারী থানা আওয়ামী লীগের সদস্য। প্রভাবশালী এই কাউন্সিলর সিটি করপোরেশনের সভায় নিয়মিত অনুপস্থিত থাকতেন। চলতি সপ্তাহের শুরুতে দক্ষিণ সিটির যে ২১ কাউন্সিলরকে কারণ দর্শাও নোটিশ পাঠানো হয়েছিল তার মধ্যে মঞ্জু একজন।
মুক্তিযোদ্ধা কল্যাণ ট্রাস্টের আওতাধীন রাজধানী সুপারমার্কেট ও নিউ রাজধানী সুপারমার্কেটের এক হাজার ৭৮৮টি দোকান থেকে প্রতি মাসে চাঁদা আদায় করতেন দোকানপ্রতি ৯৫০ টাকা। এর বাইরে ঈদে বা পূঁজায় দিতে হতো বাড়তি চাঁদা। জেনারেটর, বেয়ারসহ অন্যান্য খরচের নামেও দিতে হতো চাঁদা। তাঁর বেপরোয়া চাঁদাবাজি ও দখলবাজির বিরুদ্ধে ভুক্তভোগী ব্যবসায়ীরা স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, পুলিশ ও র্যাব সদর দপ্তরসহ বিভিন্ন স্থানে অভিযোগ, এমনকি মামলা করলেও পাননি প্রতিকার। টানা আট বছর মঞ্জু আর তাঁর ক্যাডার বাহিনীর কাছে জিম্মি ছিলেন সাধারণ ব্যবসায়ীরা।
তিনি দুই মার্কেট থেকে প্রতি মাসে প্রায় কোটি টাকার চাঁদা তুলে হুন্ডির মাধ্যমে পাঠাতেন যুক্তরাষ্ট্রে থাকা পরিবারের কাছে। মাদক সেবন ও কারবারে জড়িত মঞ্জু মাতাল অবস্থায় ব্যবসায়ীদের হুমকি দিতেন। তাঁর কথার অবাধ্য হলে ক্যাডার বাহিনী দিয়ে ধরে এনে টর্চার সেলে চালাতেন নির্যাতন। প্রতিবাদ করায় হুমকি পেয়ে ব্যবসায়ী আজমল হোসেন, হাফিজুর রহমান, ফজলুল হক, সেন্টু চৌধুরী, আবু বকর ও মতিউর রহমান ওয়ারী থানায় সাধারণ ডায়েরি করেন।
- আরও পড়ুন >> আজ থেকে কার্যকর হচ্ছে ‘সড়ক পরিবহন আইন, ২০১৮’
মঞ্জুকে গ্রেপ্তারের ব্যাপারে র্যাব-৩ অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল শাফিউল্লাহ বুলবুল বলেন, টিকাটুলীর রাজধানী সুপারমার্কেট ও নিউ রাজধানী সুপারমার্কেটে চাঁদাবাজি, অবৈধ দখলদারির পাশাপাশি মাদকের কারবারের অভিযোগ আছে তাঁর বিরুদ্ধে। মঞ্জুর বৈধ কোনো আয় নেই। সন্ত্রাস আর চাঁদাবাজিই তাঁর অর্থের উৎস। সেই টাকা তিনি হুন্ডির মাধ্যমে আমেরিকায় পাঠান বলেও অভিযোগ আছে। কী পরিমাণ অর্থ তিনি পাচার করেছেন এটি তদন্তের বিষয়।