ওসি মোয়াজ্জেমের হাইকোর্টে জামিন নামঞ্জুর

ওসি মোয়াজ্জেম-নিহত নুসরাত
ওসি মোয়াজ্জেম-নিহত নুসরাত। ফাইল ছবি

ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে করা মামলায় ফেনীর সোনাগাজী থানার সাবেক ওসি মোয়াজ্জেম হোসেনকে জামিন দেননি হাইকোর্ট। তবে তার বিরুদ্ধে বিচারাধীন মামলা ৪০ কার্যদিবসের মধ্যে নিষ্পত্তি করতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। রাষ্ট্রপক্ষের কারণে এই সময়ের মধ্যে যদি বিচার সম্পন্ন না হয় তবে তার জামিনের আবেদন বিবেচনা করতে বলা হয়েছে।

আজ রবিবার বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম ও বিচারপতি মো. মোস্তাফিজুর রহমানের হাইকোর্ট বেঞ্চ এ আদেশ দেন। ওসি মোয়াজ্জেমের করা জামিনের আবেদন নিষ্পত্তি করে এ আদেশ দেওয়া হয়।

universel cardiac hospital

মোয়াজ্জেম হোসেনের পক্ষে আইনজীবী ছিলেন অ্যাডভোকেট মো. আহসান উল্লাহ ও রানা কাওছার। অপরপক্ষে ছিলেন ওসির বিরুদ্ধে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলাকারী ব্যারিস্টার সৈয়দ সায়েদুল হক সুমন।

আদেশের আগে শুনানিতে ব্যারিস্টার সৈয়দ সায়েদুল হক সুমন বলেন, যারা থানা ম্যানেজ করার চেষ্টা করেছিল তাদের ফাঁসি হয়েছে। কিন্তু যিনি ম্যানেজ হয়েছেন তার কিছুই হয়নি। নুশরাতের শ্লীলতাহানীর মামলার পর তিনি (ওসি মোয়াজ্জেম) যদি যথাযথ ব্যবস্থা নিতেন, তবে নুশরাতকে মরতে হতো না। আর ওই ১৬ জনেরও ফাঁসির রায় শুনতে হতো না। তিনি বলেন, আমরা চাই ন্যায়বিচার। কাউকে ভেতরে বা বাইরে রাখা আমাদের উদ্দেশ্য না।

জবাবে ওসি মোয়াজ্জেম হোসেনের আইনজীবী বলেন, নুসরাতের মা মামলা করার সঙ্গে সঙ্গেই ওসি ব্যবস্থা নিয়েছে। মূল আসামি অধ্যক্ষ সিরাজকে গ্রেপ্তার করেছেন। তার জবানবন্দি নেওয়ার কারণেই আজকে এই মামলাটার বিচার হয়েছে। এ জন্যই ওসি মোয়াজ্জেম হোসেনকে পুরস্কৃত করা উচিত। তাই তার জামিন চাচ্ছি।

প্রসঙ্গত, ফেনীর সোনাগাজী ইসলামিয়া ফাজিল মাদ্রাসার অধ্যক্ষ সিরাজ-উদ-দৌলার বিরুদ্ধে ছাত্রী নুসরাত জাহান রাফীকে যৌন নির্যাতনের অভিযোগে তার মা ২৭ মার্চ থানায় অভিযোগ দাখিল করেন। এরপর ওসি মোয়াজ্জেম হোসেন নুসরাতকে থানায় ডেকে নিয়ে তার জবানবন্দী রেকর্ড করেন। পরে তা ইন্টারনেটে ছড়িয়ে পড়ে।

এ অবস্থায় সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ব্যারিস্টার সৈয়দ সায়েদুল হক সুমন ঢাকার সাইবার ক্রাইম ট্রাইব্যুনালে ওসি মোয়াজ্জেম হোসেনের বিরুদ্ধে গত ১৫ এপ্রিল মামলা করেন। ট্রাইব্যুনাল বিষয়টি তদন্ত করে প্রতিবেদন দাখিল করার জন্য পিবিআইকে নির্দেশ দেয়। এই নির্দেশে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের ২৬, ২৯ ও ৩১ নম্বর ধারা লংঘনের অভিযোগ আনা হয় ওসি মোয়াজ্জেমের বিরুদ্ধে।

এই প্রতিবেদন পাবার পর গত ২৭ মে সাইবার ক্রাইম ট্রাইব্যুনাল ওসি মোয়াজ্জেমের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করে। গ্রেপ্তারি পরোয়ানা মাথায় নিয়ে গত ১৬ জুন হাইকোর্টে হাজির হন মোয়াজ্জেম হোসেন। ওইদিন তার আগাম জামিনের আবেদন করা হয়। আদালত পরদিন শুনানির জন্য রাখার আদেশ দেন।

এরপর ওইদিনই তাকে হাইকোর্ট এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করা হয়। পরদিন ১৭ জুন তাকে সাইবার ট্রাইব্যুনালে হাজির করা হলে আদালত তার জামিনের আবেদন খারিজ করে কারাগারে পাঠিয়ে দেন। সেই থেকে তিনি কারাবন্দি। সাইবার ট্রাইব্যুনালে মামলাটিতে সাক্ষ্যগ্রহণ চলছে। এ অবস্থায় হাইকোর্টে নতুন করে জামিনের আবেদন করা হয়। গত ১৬ অক্টোবর শুনানি শেষে ৩ নভেম্বর আদেশের জন্য দিন ধার্য করা হয়। এ অবস্থায় নির্ধারিত দিনে আজ আদেশ দেওয়া হলো।

গত ৬ এপ্রিল নুসরাতের গায়ে কেরোসিন ঢেলে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়। এরপর ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় গত ১০ এপ্রিল মারা যান নুসরাত। এ ঘটনায় করা মামলায় তদন্ত শেষে ১৬ জনের বিরুদ্ধে ২৯ মে ফেনীর আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)। এই মামলায় গত ২৪ অক্টোবর ফেনীর আদালতে ১৬ জনের ফাঁসির আদেশ হয়েছে। এ সংক্রান্ত ডেথ রেফারেন্স গত ২৯ অক্টোবর পাঠানো হয়েছে হাইকোর্টে।

শেয়ার করুন

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে