সোনাগাজী থানার সাবেক ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোয়াজ্জেম হোসেনের বিরুদ্ধে নুসরাত জাহান রাফির দুই বান্ধবী নাসরিন সুলতানা ফুর্তি ও নিসাত সুলতানা সাক্ষ্য দিয়েছেন।
যৌন হয়রানিসংক্রান্ত জিজ্ঞাসাবাদের ভিডিও ছড়িয়ে দেওয়ার মামলায় আজ সোমবার তারা সাইবার ক্রাইম ট্রাইব্যুনালে সাক্ষ্য দেন। এদিন একই সঙ্গে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) এর প্রধান ফরেন্সিক কর্মকর্তা মোহাম্মাদ আব্দুল বাদীও সাক্ষ্য দেন।
বিচারক মোহাম্মদ আসসামছ জগলুল হোসেন তাদের সাক্ষ্য গ্রহণ শেষে আগামী ১১ নভেম্বর পরবর্তী সাক্ষ্য গ্রহণের দিন ধার্য করেছেন।
সাক্ষী আব্দুল বাদী মামলায় জব্দকৃত ওসি মোয়াজ্জেমের মোবাইল এবং সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে যাওয়া নুসরাতের যৌন হয়রানিসংক্রান্ত জিজ্ঞাসাবাদের সেই ভিডিও পরীক্ষা করে মতামত দেন। ওই সম্পর্কেই তিনি এদিন সাক্ষ্য দেন।
অন্যদিকে, সাক্ষ্যে নুসরাতের বান্ধবী নিসাত সুলতানা বলেন, প্রিন্সিপাল সিরাজ উদ-দৌলা কর্তৃক নুসরাতের যৌন হয়রানির ঘটনার পর চলতি বছর ২৭ মার্চ পুলিশ মাদ্রাসায় এসে প্রিন্সিপাল সিরাজ, নুসরাত ও বান্ধবী ফুর্তিসহ তাকে থানায় নিয়ে যায়। সেখানে নুসরাতসহ তাদের তিনজনকেই ওসি মোয়াজ্জেম তার রুমে জিজ্ঞাসাবাদ করেন এবং তা ভিডিও করেন। পরবর্তী সময়ে নুসরাতের জিজ্ঞাসাবাদের সেই ভিডিও তারা সামাজিক যোগযোগ মাধ্যমে দেখতে পান। একই ধরনের বক্তব্য ফুর্তিও সাক্ষ্যে বলেন। পরে তিন সাক্ষীকেই ওসি মোয়াজ্জেমের পক্ষে আইনজীবী ফারুক আহমেদ জেরা করেন।
রাষ্ট্রপক্ষে বিশেষ পাবলিক প্রসিকিউটর নজরুল ইসলাম শামীম সাক্ষীদের সাক্ষ্য গ্রহণের সহায়তা করেন। এছাড়া সাক্ষ্য গ্রহণকালে মামলার বাদী ব্যারিস্টার সৈয়দ সায়েদুল হক সুমন ট্রাইব্যুনালে উপস্থিত ছিলেন। এর আগে মামলায় বাদীনসহ আটজনের সাক্ষ্য গ্রহণ শেষ হয়েছে।
মামলাটিতে গত ১৭ জুলাই ট্রাইব্যুনাল আসামি মোয়াজ্জেমের অব্যাহতির আবেদন নাকচ করে চার্জগঠন করেন।
মামলায় চলতি বছর ২৭ মে পিবিআইয় দাখিলকতৃ তদন্ত প্রতিবেদন গ্রহণ করে এ আসামির বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেন। গত ১৬ জুন ওসি মোয়াজ্জেম হোসেন গ্রেপ্তার হন এবং ১৭ জুন তাকে একই ট্রাইব্যুনালে হাজির করা হলে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন একই বিচারক।
এরপর গত ২৪ জুন এক আবেদনে ট্রাইব্যুনাল তাকে কারাবিধি অনুযায়ী তাকে ডিভিশন প্রদানের আদেশ দেন। প্রথম শ্রেণির কর্মকর্তা হিসেবে কারাবিধি অনুযায়ী প্রথম শ্রেণির মর্যাদা ভোগ করছেন।
প্রসঙ্গত, অধ্যক্ষ সিরাজ উদদ্দৌলার বিরুদ্ধে যৌন হয়রানির মামলা তুলে নেয়ার জন্য গত ৬ এপ্রিল রাফিকে মুখোশ পরা ৪/৫ জন চাপ প্রয়োগ করলে তিনি অস্বীকৃতি জানান। এতে তার গায়ে আগুন দিয়ে পালিয়ে যায় দুর্বৃত্তরা। টানা পাঁচ দিন মৃত্যুর মুখোমুখি থাকার পর ১০ এপ্রিল রাত সাড়ে ৯টায় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে নুসরাত মারা যান। ওই ঘটনার হত্যা মামলায় গত ২৪ অক্টোবর আদালত ১৬ জনের মৃত্যুদণ্ডের রায় দিয়েছে।