খোকাকে দেখে এসে যা বললেন যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগ সভাপতি

মত ও পথ রিপোর্ট

গুরুতর অসুস্থ বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান ও অবিভক্ত ঢাকার মেয়র সাদেক হোসেন খোকাকে দেখতে হাসপাতালে গেছেন যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের সভাপতি সিদ্দিকুর রহমান। খোকাকে দেখে এসে তার দ্রুত আরোগ্য কামনা ও তার প্রতি সহমর্মিতা প্রকাশ করেছেন এই আওয়ামী লীগ নেতা।

সিদ্দিকুর রহমান বলেন, ঢাকা থেকে খবর পেয়েছি মুক্তিযোদ্ধা সাদেক হোসেন খোকা ভাই খুব অসুস্থ। উনি নিউইয়র্কের স্লোয়ান ক্যাটারিংয়ে আছেন। আমি নিউইয়র্ক এয়ারপোর্ট থেকে সোজা এখানে এসেছি উনাকে একনজর দেখার জন্য। আল্লাহ উনাকে সুস্থতা দান করুক।

universel cardiac hospital

খোকার অসুস্থতার কথা জানিয়ে তিনি বলেন, উনি খুব মুমূর্ষু অবস্থায় হাসপাতালে। আল্লাহ উনার পরিবারকে ধৈর্য ধারণ করার ক্ষমতা দিক।

বাংলাদেশের জনগণ উনার দিকে তাকিয়ে আছে উল্লেখ করে সিদ্দিকুর রহমান বলেন, খোকা ভাই সুস্থ হবেন এই খবর শোনার জন্য দেশবাসী অপেক্ষায় আছে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীও খোঁজখবর নিয়েছেন। আইনিভাবে যদিও উনার দেশের যাওয়ার ক্ষেত্রে বাধা আছে কিন্তু মানবিক দিক বিবেচনায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নির্দেশ দিয়েছেন যেকোনো ভাবেই তাকে দেশে পাঠানোর ব্যবস্থা করা হোক। আমি এখন যা দেখলাম তাতে মনে হচ্ছে না উনি আর দেশে ফিরে যেতে পারবেন।

এই আওয়ামী লীগ নেতা আরও বলেন, আল্লাহ খোকা ভাইকে সুস্থতা দান করুন। আমি যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে, আওয়ামী পরিবারের পক্ষ থেকে উনার সুস্থতা কামনা করছি। দল মত নির্বিশেষে প্রবাসী যারা আছেন আসুন এই বীর মুক্তিযোদ্ধার জন্য আল্লাহর কাছে যাতে উনি সুস্থ হয়ে আবার আমাদের মাঝে ফিরে দেশের মানুষের কাছে যেতে পারেন।

সংকটাপন্ন অবস্থায় সাদেক হোসেন খোকাকে ম্যানহাটনের মেমোরিয়াল স্লোয়ান ক্যাটারিং ক্যান্সার সেন্টারে নিবিড় পরিচর্যাকেন্দ্রে (আইসিইউ) রাখা হয়েছে।

খোকাকে দেখতে ছুটে গেছেন তার ছেলে বিএনপির বৈদেশিকবিষয়ক কমিটির সদস্য ইঞ্জি. ইশরাক হোসেন। বাবার জন্য দোয়া কামনা করে তিনি বলেছেন, ‘বাবার শারীরিক অবস্থা ভালো নয়। আপনারা সবাই দোয়া করবেন।’

যুক্তরাষ্ট্র বিএনপি সূত্রে জানা গেছে, সাদেক হোসেন খোকার শারীরিক অবস্থা পরিবর্তনের আশা ছেড়ে দিয়েছেন সেখানকার চিকিৎসকরা। তারা খোকার সব চিকিৎসা বন্ধ করে দিয়েছেন।

খোকার জীবনের শেষ ইচ্ছানুযায়ী অন্তিম সময়ে তাকে দেশে নেয়াও পরিবারের পক্ষে সম্ভব হয়নি। পাসপোর্ট না থাকায় দেশে ফিরতে পারেননি তিনি। পরবর্তী সময়ে কী হবে, এ নিয়ে স্বজনরা বিভ্রান্তিতে আছেন।

ক্যান্সারের চিকিৎসার জন্য ২০১৪ সালের ১৪ মে সপরিবারে নিউইয়র্ক চলে যান সাদেক হোসেন খোকা। তার পর থেকে চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী নিউইয়র্ক সিটির কুইন্সে একটি বাসায় দীর্ঘদিন ধরে থাকছিলেন বিএনপির এ নেতা।

ভিজিট ভিসার নিয়ম অনুযায়ী, ছয় মাস পর পর যাওয়া-আসা করে যুক্তরাষ্ট্রের ভিসা বৈধ রাখার নিয়ম। ২০১৭ সালে খোকা ও তার স্ত্রী ইসমত হোসেনের পাসপোর্টের মেয়াদ শেষ হয়ে যায়। তারা নিউইয়র্ক কনস্যুলেটে নতুন পাসপোর্টের জন্য আবেদন করেন। পরিবারের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, নতুন পাসপোর্ট পাওয়ার ব্যাপারে কনস্যুলেট থেকে কোনো সদুত্তর দেয়া হয়নি।

হাসপাতালে খোকার পাশে আগে থেকেই আছেন তার স্ত্রী ইসমত হোসেন, মেয়ে সারিকা সাদেক, ছেলে ইশফাক হোসেন। বাবার সংকটাপন্ন অবস্থার খবর পেয়ে ঢাকা থেকে তার বড় ছেলে ইশরাক হোসেনও নিউইয়র্কে ছুটে গেছেন।

বাবার সবশেষ শারীরিক অবস্থা সম্পর্কে ইশরাক হোসেন জানান, পুরো ফুসফুসে ক্যান্সার ছড়িয়ে পড়েছে। অক্সিজেন দিয়ে তার বাবাকে বাঁচিয়ে রাখা হয়েছে। লোকজন এলে কাউকে কখনও কখনও তিনি চিনতে পারছেন বলে মনে হচ্ছে। গত কয়েক দিন থেকে তার চোখ দিয়ে অনবরত পানি ঝরছে।

ইশরাক হোসেন বলেন, বড় হতাশা আর বিভ্রান্তির মধ্যে আছি। আব্বু-আম্মু দুজনেরই পাসপোর্ট নেই। কী করব, তাও বুঝে উঠতে পারছি না।

২০০২ সালের ২৫ এপ্রিল অবিভক্ত ঢাকা সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে মেয়র নির্বাচিত হন খোকা। ২৯ নভেম্বর ২০১১ সাল পর্যন্ত টানা ১০ বছর বিএনপি ও আওয়ামী লীগের শাসনামলে ঢাকা মহানগরের মেয়র ছিলেন তিনি। ২০১৪ সালের ১৪ মে মাসে সাদেক হোসেন খোকা চিকিৎসার জন্য যুক্তরাষ্ট্র যান। সেখানেই চিকিৎসাধীন আছেন। এ সময়কালে দেশে তার বিরুদ্ধে কয়েকটি দুর্নীতি মামলা হয়। এর কয়েকটিতে তাকে সাজাও দেয়া হয়েছে।

শেয়ার করুন

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে