ধানমন্ডিতে জোড়া খুনের নেপথ্যে গৃহকর্মীকে বের হতে বাধা দেয়া!

মহানগর প্রতিবেদক

ধানমন্ডিতে জোড়া খুন
পুলিশের হাতে আটক সুরভী আক্তার নাহিদা

রাজধানীর ধানমন্ডিতে দুই নারীকে খুনের ঘটনায় গ্রেপ্তার করা হয়েছে সন্দেহভাজন গৃহকর্মীকে। সুরভী আক্তার নাহিদা নামের ওই গৃহকর্মী প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে হত্যার কথা স্বীকার করেছেন বলে দাবি করেছে পুলিশ।

পুলিশের দাবি, বাসা থেকে বের হতে বাধা দেয়ায় গৃহকর্মী দুজনকে হত্যা করেন। তবে সামান্য বিষয়ে দুজনকে হত্যার বিষয়টি অস্বাভাবিক দেখছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। তারা বিষয়টি আরও খতিয়ে দেখা হচ্ছে বলে জানিয়েছে পুলিশ।

রোববার সন্ধ্যায় আগারগাঁও বস্তি থেকে ২৩ বছর বয়সী সুরভী আক্তার নাহিদাকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। হত্যাকাণ্ডের সময়কালের সিসি ক্যামেরার ফুটেজ দেখে তাকেই সন্দেহ করা হয়েছিল।

গত শুক্রবার রাতে ধানমন্ডির ২৮ নম্বর (নতুন ১৫) সড়কের এক ভবনের পঞ্চম তলা থেকে টিমটেক্স গ্রুপের এমডি ও ক্রিয়েটিভ গ্রুপের ডিএমডি কাজী মনির উদ্দিন তারিমের শাশুড়ি আফরোজা বেগম (৬৫) এবং তার গৃহকর্মী দিতির (১৮) রক্তাক্ত লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। তাদের দুজনকেই গলা কেটে হত্যা করা হয়।

এ ঘটনার তদন্তে নেমে সিসিটিভির চিত্র দেখে একজনকে সন্দেহ করে পুলিশ। সন্দেহভাজন ওই নারীকে গ্রেপ্তারের পর প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে তিনি হত্যার দায় স্বীকার করেন।

নিহত আফরোজা ও গৃহকর্মী দিতি যে ফ্ল্যাটে থাকতেন এর বিপরীতে থাকেন আফরোজার মেয়ে দিলরুবা সুলতানা রুবা।

রুবার স্বামী মনির উদ্দিন তারিমের ভাষ্যমতে, স্থানীয় এক পান দোকানদারের মাধ্যমে নাহিদাকে গৃহকর্মী হিসেবে নিয়ে আসেন তাদের কর্মচারী আতিকুল হক বাচ্চু।

ঘটনার দিনই তারিম নাহিদা ও নিরাপত্তাকর্মীদের সন্দেহ করেন। মামলায় নাহিদাকে প্রধান আসামি করে কর্মচারী বাচ্চু ও নিরাপত্তাকর্মী নুরুজ্জামান, কেয়ারটেকার বেলায়েত এবং প্রিন্স নামে এক বৈদ্যুতিক মিস্ত্রিকে সন্দেহভাজন হিসেবে উল্লেখ করা হয়।

দায় স্বীকার করলেও ওই নারীর মানসিক ভারসাম্য নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে পুলিশ। মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার আব্দুল্লাহেল কাফি বলেন, নাহিদার বক্তব্য শুনে তার মানসিক ভারসাম্য নিয়ে সন্দেহ তৈরি হয়েছে। মামলাটি গোয়েন্দা পুলিশের কাছে স্থানান্তর করা হয়েছে। তারা সবগুলো দিকই খতিয়ে দেখবে।

আটকের পর রবিবার রাতভর নাহিদাকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয় জানিয়ে আব্দুল্লাহেল কাফি বলেন, বাচ্চুই যে ওই বাসায় কাজে নিয়ে গিয়েছিল, সে কথা নাহিদা বলেছে। তবে বাচ্চুর আচরণ তার ভালো লাগেনি।

নাহিদার বক্তব্যের বরাত দিয়ে পুলিশ জানায়, বাচ্চু বাসা থেকে বের হয়ে যাওয়ার পর নাহিদা চলে যেতে চায়। তখন ওই বাসার পুরনো গৃহকর্মী নিহত দিতি তাকে বাধা দেয়। এক পর্যায়ে তাদের মধ্যে ঝগড়া হয়, এ সময় নাহিদা রান্নাঘর থেকে নেওয়া ছুরি দিয়ে দিতির গলা, পিঠ আর বুকে আঘাত করেন।

এরপর নাহিদা আরেক ঘরে গিয়ে আফরোজাকে বলেন, তিনি বাসা থেকে চলে যাচ্ছেন। আফরোজা তখন দিতির কথা জানতে চান। এ সময় আফরোজাও তাকে বাসা থেকে যেতে বাধা দিলে একই কায়দায় আফরোজার উপর হামলা করেন নাহিদা।

বাচ্চুর থেকে পাওয়া নাহিদার মোবাইল নম্বরের সূত্র ধরে তার পরিবারের সন্ধান পায় পুলিশ। এরপর নাহিদার গ্রামের বাড়ি ভোলায় পুলিশ গিয়ে পরিবারের সদস্যদের মাধ্যমে নাহিদার সঙ্গে যোগাযোগ করায়। এরইমধ্যে ঢাকার আগারগাঁও বস্তিতে তার অবস্থান শনাক্ত করে পুলিশ।

এদিকে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে নাহিদাকে চেনেন না বলে জানান বাচ্চু। যদিও পুলিশের হাতে থাকা তাদের মোবাইলে কথোপকথনের বিবরণ বলছে, ঘটনার আগে ও পরে তাদের মধ্যে প্রায় অর্ধশতবার কথা হয়েছে।

শেয়ার করুন

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে