আগামীকাল বুধবার জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের হাতেগড়া আওয়ামী লীগের সহযোগী সংগঠন কৃষক লীগের ১০ম সম্মেলন।
সম্মেলনকে ঘিরে সংগঠনটির নেতাকর্মীদের মধ্যে সাজ সাজ রব দেখা গেছে। সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক পদে নিজ নিজ পক্ষে জোর লবিং-তদবিরে ব্যস্ত সময় পার করছেন সংগঠনটির নেতারা।
১৯৭২ সালের ১৯ এপ্রিল দেশের অর্থনৈতিক মুক্তির কার্যক্রমে কৃষি ও কৃষকের উন্নয়নে কাজ করতে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কৃষক লীগ প্রতিষ্ঠা করেন। এর প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি ছিলেন ১৫ আগস্টে শহীদ কৃষক নেতা আবদুর রব সেরনিয়াবাত। প্রতিষ্ঠাতার পর থেকে এখন পর্যন্ত ৯ বার সম্মেলন হয়েছে কৃষকলীগের।
বুধবার অনুষ্ঠিত হতে যাওয়া ১০ম সম্মেলনকে ঘিরে কৃষকলীগের পদপ্রত্যাশীদের মধ্যে ব্যাপক আগ্রহ ও উৎসাহ-উদ্দীপনা লক্ষ্য করা গেছে।
সম্মেলনকে কেন্দ্র করে গত কয়েকদিন ধরে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে সমাবেশমঞ্চ তৈরিসহ বিভিন্ন আয়োজনে ব্যস্ত সময় কাটছে কৃষক লীগের নেতাকর্মীদের। রাজধানীতে ব্যানার, ফেস্টুনসহ বিভিন্নভাবে প্রচার করছেন নেতাকর্মীরা।
বুধবার সকালে রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে কৃষক লীগের সম্মেলনের প্রথম অধিবেশনের উদ্বোধন করবেন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। পরে ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে কাউন্সিল অধিবেশনে নতুন কেন্দ্রীয় কমিটি নির্বাচন করা হবে।
সম্মেলনকে সফল করতে সংগঠনটির পক্ষ থেকে নানা উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। আর সম্মেলনের মূল মঞ্চ বানানো হয়েছে কৃষকের কাচারী ঘরের আদলে।
৯০ ফুট দীর্ঘ ও ৩০ ফুট প্রস্থ সেমিপাকা ঘরের পাশে রাখা হয়েছে ‘আমার বাড়ি-আমার খামার’র একটি মডেল।
আওয়ামী লীগের নেতারা বলছেন, কৃষকদের সঙ্গে নিবিড় সম্পর্ক, দক্ষ কৃষক সংগঠকদের কৃষক লীগের নেতৃত্বে রাখা হবে। যাদের সঙ্গে তৃণমূলের কৃষকদের সঙ্গে সম্পর্ক রয়েছে তাদেরই আগামীর নেতৃত্বে রাখা হবে। নতুন নেতৃত্বে আলোচনায় রয়েছেন প্রায় দেড় ডজন নেতা।
বর্তমান সভাপতি মোতাহার হোসেন মোল্লা আবারও একই পদে থাকতে চান। এছাড়াও এ পদে আসতে চান বর্তমান কমিটির সিনিয়র সহ-সভাপতি খান আলতাফ হোসেন ভুলু, শেখ মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর আলম, বদিউজ্জামান বাদশা, হারুনুর রশিদ হাওলাদার, বর্তমান সহ-সভাপতি শরীফ আশরাফ আলী, ওমর ফারুক। সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক সারোয়ার ওয়াদুদ চৌধুরীও আলোচনায় রয়েছেন।
আওয়ামী লীগ বেশ কয়েকজন নেতা বলছেন, কৃষক লীগের বর্তমান সভাপতি মোতাহার হোসেন মোল্লা ও সাধারণ সম্পাদক খন্দকার শামসুল হক রেজা ছাত্ররাজনীতি থেকে উঠে এসেছেন। দলীয় সভাপতি তাদের কৃষক লীগে যে কারণে দায়িত্ব দিয়েছেন সেই বিষয়টি তারা দক্ষতার সঙ্গে পালন করছেন। অন্য সহযোগী সংগঠনের নেতাদের বিরুদ্ধে চাঁদাবাজি, ক্যাসিনো ব্যবসার অভিযোগ থাকলেও কৃষক লীগের দুই শীর্ষ নেতার বিরুদ্ধে নাই। সাংগঠনিক দক্ষতা ও কোনো অনিয়মের অভিযোগে অভিযুক্ত না হওয়ায় শীর্ষ দুই পদে পরিবর্তন হওয়ার সম্ভাবনা কম বলে মনে করছেন দলটির নেতারা।
তবে সংগঠনটির বর্তমান সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্বে থাকা শামসুল হক রেজা সংগঠনের সভাপতির পদে আসতে চান বলে জানা গেছে।
অন্যদিকে সাধারণ সম্পাদক পদে আলোচনায় আছেন যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক কৃষিবিদ সমীর চন্দ চন্দ্র, সাংগঠনিক সম্পাদক সাখাওয়াত হোসেন সুইট, আবুল হোসেন, আতিকুল হক আতিক, বিশ্বনাথ সরকার বিটু। এ ছাড়া কৃষক লীগের বর্তমান কমিটির আরও কয়েকজন শীর্ষ দুই পদের জন্য ভেতরে ভেতরে লবিং করলেও প্রকাশ্যে প্রার্থিতার কথা বলছেন না।
তবে আওয়ামী লীগের নেতারা জানিয়েছেন, জাতীয় সম্মেলনে কাউন্সিলরদের মাধ্যমে কেন্দ্রীয় কমিটি গঠিত হওয়ার কথা থাকলেও নেতৃত্ব নির্বাচনের ক্ষেত্রে আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার ইচ্ছাই প্রাধান্য পাবে বলে মনে করা হচ্ছে। বিশেষ করে সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক পদ দুটিতে শেখ হাসিনার আস্থাভাজন ত্যাগী ও দক্ষ নেতাদের কারও নির্বাচিত হওয়ার সম্ভাবনাই বেশি।
কৃষক লীগের বর্তমান সভাপতি মোতাহার হোসেন মোল্লা গণমাধ্যমকে বলেন, কৃষক লীগ দরদীরাই আগামী সম্মেলনের মাধ্যমে কমিটিতে আসবে। আমি জানি আমাদের মহান নেত্রী সম্মেলন ঘিরে একটা সুন্দর কমিটি উপহার দেবেন।