প্রণোদনাও রফতানি আয় কমছেই

অর্থনৈতিক প্রতিবেদক

রফতানি
ফাইল ছবি

নানা প্রণোদনা ও সরকারের বিভিন্ন পদক্ষেপের পরও অব্যাহতভাবে কমছে রফতানি আয়। চলতি (২০১৯-২০) অর্থবছরের চতুর্থ মাস অক্টোবর শেষে লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে রফতানি আয় কমেছে ১১ দশমিক ২১ শতাংশ। অর্জিত আয় আগের বছরের একই সময়ের চেয়ে ৬ দশমকি ৮২ শতাংশ কম।

আজ মঙ্গলবার রফতানি উন্নয়ন ব্যুরো (ইপিবি) কর্তৃক প্রকাশিত হালনাগাদ এক প্রতিবেদনে এ তথ্য উঠে এসেছে।

খাত সংশ্লিষ্টরা বলছেন, রফতানির অর্ডার কমেছে। সঙ্গে সঙ্গে পণ্যের মূল্যও কমেছে। এছাড়া অবকাঠমোগত সমস্যা, ডলারের বিপরীতে টাকার অবমূল্যায়ন না করা, ব্যাংক ঋণের উচ্চ সুদহারসহ বিভিন্ন কারণে রফতানি বাণিজ্য কমে গেছে। রফতানি বাণিজ্য বাড়াতে হলে প্রতিযোগী দেশগুলোর সঙ্গে তালমিলিয়ে সরকারের সুযোগ-সুবিধা দিতে হবে। তা না হলে আগামীতে রফতানি আয় আরও কমে যাবে।

ইপিবির তথ্য অনুযায়ী, ২০১৯-২০ অর্থবছরে প্রথম চার মাসে (জুলাই-অক্টোবর) সব ধরনের পণ্য রফতানিতে বৈদেশিক মুদ্রার লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয় এক হাজার ৪৩২ কোটি ৮০ লাখ মার্কিন ডলার। কিন্তু এ সময়ে এ খাতে আয় হয়েছে এক হাজার ২৭২ কোটি ১২ লাখ ডলার।

যা লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ১১ দশমিক ২১ শতাংশ কম। একই সঙ্গে গত অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় অর্জিত এ হার ৬ দশমিক ৮২ শতাংশ কম।

প্রতিবেদনে দেখা যায়, একক মাস হিসেবে চলতি বছরের অক্টোবরে রফতানি আয় হয়েছে ৩০৭ কোটি ৩২ লাখ ডলার। যা লক্ষ্য ছিল ৩৪৮ কোটি ১০ লাখ ডলার। অর্থাৎ লক্ষ্যমাত্রার তুলনায় অক্টোবরে রফতানি আয় কমেছে ১১ দশমিক ৭১ শতাংশ।

এছাড়া একক মাস হিসাবে প্রবৃদ্ধি কম হয়েছে ১৭ দশমিক ১৯ শতাংশ। গত বছরের অক্টোবরে রফতানি আয় হয়েছিল ৩৭১ কোটি ১১ লাখ ডলার।

তথ্য বিশ্লেষণে দেখা গেছে, চলতি অর্থবছরের প্রথম চার মাসে রফতানি আয়ে পোশাকের অবদান ৮৩ শতাংশের বেশি। তবে হোমটেক্স, টেরিটাওয়েলসহ এ খাতের অন্যান্য রফতানির উপখাত হিসাব করলে তৈরি পোশাক খাতের অবদান ৮৫ শতাংশ। তাই তৈরি পোশাকের রফতানি কমলে তার প্রভাব পড়ে পুরো রফতানি খাতে।

আলোচিত সময়ে তৈরি পোশাক খাতের রফতানি আয়ও কমেছে। অর্থবছরের অক্টোবর শেষে পোশাক রফতানি করে বাংলাদেশ আয় করেছে এক হাজার ৫৭ কোটি ৭৩ লাখ ৮০ হাজার ডলার। যা লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ১২ দশমিক ০৭ শতাংশ কম। এসময় রফতানি প্রবৃদ্ধিও কমেছে দশমিক ৬ দশমিক ৬৭ শতাংশ।

এ বিষয়ে তৈরি পোশাক প্রস্তুত ও রফতানিকারকদের সংগঠন বিজিএমইএর ’র সভাপতি রুবানা হক মত ও পথকে বলেন, পোশাক রফতানি কমছে। আগামীতে আরও কমবে। এখন বিশ্ববাজারে প্রতিযোগিতায় টিকে থাকা কঠিন হয়ে দাঁড়িয়েছে। আমাদের ব্যয় বেড়েছে। কিন্তু আগের চেয়ে অর্ডার কমেছে পাশাপাশি মূল্যও কম দিচ্ছি।

তিনি বলেন, প্রতিযোগী দেশ যেমন- ভারত, ভিয়েতনামের সরকার পোশাকে নগদ সহায়তা দিচ্ছে কিন্তু আমরা কোনো সহায়তা পাচ্ছি না। তাই আমরা রফতানিতে পিছিয়ে যাচ্ছি। আগামীতে আরও কঠিন সময় আসছে। এ বিষয়গুলো বিবেচনা নিয়ে সরকারকে এ খাতে নগদ সহায়তা দেয়ার দাবি জানান পোশাক মালিকদের এ নেতা।

ইপিবির প্রতিবেদন অনুযায়ী, চলতি অর্থবছরের বড় খাতগুলোতেও রফতানি আয় কমেছে। চলতি বছরের অক্টোবর শেষে কৃষিপণ্য রফতানিতে আয় আগের বছরের একই সময়ের চেয়ে কমেছে ২ দশমিক ৪৬ শতাংশ কমে ৩৫ কোটি ২৬ লাখ ডলার।

প্লাস্টিক পণ্য রফতানির প্রবৃদ্ধি বাড়লেও লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে আয় কমেছে ১৩ দশমিক ১৭ শতাংশ। চার মাসে এ খাতে আয় হয়েছে ৪ কোটি ১০ লাখ ডলার।

আলোচিত সময়ে চামড়া ও চামড়াজাত পণ্য রফতানি আয়ে প্রবৃদ্ধি কমেছে। একই সঙ্গে অর্জন হয়নি লক্ষ্যমাত্রাও। চার মাসে চামড়াজাত খাত থেকে রফতানি আয় এসেছে ৩১ কোটি ৬৯ লাখ ডলার। যা লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ৭ দশমিক ৯৩ শতাংশ কম।

প্রবৃদ্ধিও কমেছে ৮ দশমিক ২ শতাংশ। তবে আলোচিত সময়ে পাট ও পাটজাত পণ্য রফতানি বেড়েছে। অক্টোবর শেষে পাট ও পাটজাত পণ্য রফতানি করে বাংলাদেশ আয় করেছে ৩১ কোটি ৪৫ লাখ ডলার। যা লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ২১ দশমিক ২ শতাংশ বেশি। প্রবৃদ্ধিও গত বছরের একই সময়ের চেয়ে ৮ দশমিক ৮৮ শতাংশ বেড়েছে।

ইপিবির তথ্য অনুযায়ী, ২০১৮-১৯ অর্থবছরে (জুলাই-জুন) পণ্য রফতানি করে ৪ হাজার ৫৩ কোটি ডলার আয় করেছে বাংলাদেশ। রফতানি এ আয় গত অর্থবছরের একই সময়ের চেয়ে ১০ দশমিক ৫৫ শতাংশ বেশি। যা নির্ধারিত লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ৩ দশমিক ৯৪ শতাংশ বেশি রফতানি আয় করে বাংলাদেশ।

চলতি অর্থবছরে (২০১৯-২০) রফতানির লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ৫৪ বিলিয়ন বা ৫ হাজার ৪০০ কোটি ডলার। পণ্য খাতে রফতানির টার্গেট সাড়ে ৪৫ বিলিয়ন এবং সার্ভিস সেক্টরে সাড়ে ৮ বিলিয়ন ডলার। যা গত অর্থবছরের রফতানি আয়ের চেয়ে ১৫ দশমিক ২০ শতাংশ বেশি।

শেয়ার করুন

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে