শহরে কিংবা গ্রামে দ্রুত টাকা পাঠানোর সুবিধার কারণে দেশে মোবাইল ব্যাংকিং সেবায় এসেছে বৈপ্লবিক পরিবর্তন। এ সেবাটি গ্রাহকের কাছে আরও জনপ্রিয় করতে এবার ইন্টার-অপারেবিলিটি (আন্তঃব্যবহারযোগ্যতা) সিস্টেম চালু করতে যাচ্ছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।
আগামী বছরের শুরুতে এ সেবা চালু হবে। এর ফলে মোবাইল ব্যাংকিংয়ের একটি প্রতিষ্ঠানে হিসাব (অ্যাকাউন্ট) খুলে অন্য সব প্রতিষ্ঠানে তাৎক্ষণিক সহজে লেনদেন করা যাবে।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান, মোবাইল ফিন্যান্সিয়াল সার্ভিসেস (এমএফএস) বা মোবাইল ব্যাংকিংয়ে এখন একটি প্রতিষ্ঠানের হিসাব খুলে গ্রহক শুধুমাত্র ওই প্রতিষ্ঠানের অন্য গ্রাহকের সঙ্গে লেনদেন করতে পারেন। ইন্টার-অপারেবিলিটি সিস্টেমে গ্রাহক একটি হিসাব খুলে সবগুলো এমএফএস-এর গ্রাহকের সঙ্গে লেনদেন করতে পারবেন।
অর্থাৎ একটি হিসাব থেকে বর্তমানে এমএফএস সেবা দেয়া ১৬টি প্রতিষ্ঠানেই অর্থ আদান-প্রদান করা যাবে। বিকাশের হিসাবধারীরা ইউক্যাশ, রকেট, এমক্যাশের গ্রাহকের সঙ্গে লেনদেন করতে পারবেন। আবার ইউক্যাশের গ্রাহক বিকাশ, শিওর ক্যাশসহ সব প্রতিষ্ঠানের গ্রাহকের সঙ্গে লেনদেন করতে পারবেন। এছাড়া এমএফএস হিসাবধারীরা যেকোনো ব্যাংক হিসাবেও লেনদেন করতে পারবেন।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, বাংলাদেশ ব্যাংকের ন্যাশনাল পেমেন্ট স্যুইচ-এর সহযোগিতায় এ সেবা দেবে এমএফএস প্রতিষ্ঠানগুলো। ইতোমধ্যে এ সেবা চালুর জন্য পরীক্ষামূলক কাজ চলছে। ২০২০ সালের জানুয়ারিতে এটি চালু হবে। এতে করে মোবাইল ব্যাংকিং সেবাদানকারী যেসব প্রতিষ্ঠানের গ্রাহকসংখ্যা কম তারা বেশি উপকৃত হবেন। কারণ তাদের লেনদেনের পরিধি বাড়বে।
এ বিষয়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের মুখপাত্র ও নির্বাহী পরিচালক মো. সিরাজুল ইসলাম বলেন, মোবাইল ব্যাংকিং সেবা আরও জনপ্রিয় করতে আন্তঃঅপারেটিং লেনদেন চালুর উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। এর কাজ চলছে। সবকিছু ঠিক থাকলে আগামী বছরের শুরুতে এ সেবা চালু করা সম্ভব হবে। এটি চালু হলে একটি হিসাব খুলে সব ব্যাংকে এমএফএস অর্থ লেনদেন করা যাবে। একাধিক হিসাব খোলোর প্রয়োজন হবে না।
এ সেবা চালু হলে মোবাইল ব্যাংকিংয়ের প্রতি গ্রাহকের আগ্রহ আরও বেশি হবে বলে প্রত্যাশা করেন কেন্দ্রীয় ব্যাংকের এ নির্বাহী পরিচালক।
তবে ইন্টার-অপারেবিলিটি সিস্টেমের সুবিধা থেকে বঞ্চিত হবে রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠান ডাক বিভাগের ‘নগদ’। কারণ তারা এমএফএস-এর সেবা দিলেও কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পেমেন্ট সিস্টেমের আওতায় নেই। তাই ‘নগদ’- এর গ্রাহকরা এ সুবিধা পাবেন না।
এদিকে এমএফএস হালনাগাদ পরিসংখ্যানের তথ্য বলছে, বর্তমানে মোট ১৬টি ব্যাংক মোবাইল ব্যাংকিংয়ের সঙ্গে জড়িত। চলতি বছরের সেপ্টেম্বর শেষে এসব প্রতিষ্ঠানের নিবন্ধিত গ্রাহক সংখ্যা দাঁড়িয়েছে সাত কোটি ৫৯ লাখ ৭৮ হাজার। যা আগের মাস আগস্টে ছিল সাত কোটি ৩৫ লাখ ৮৫ হাজার।
প্রতিবেদনের তথ্য বলছে, এমএফএস-এর মাধ্যমে গত সেপ্টেম্বর মাসে প্রতিদিন গড়ে ৭০ লাখ ৭৮ হাজার লেনদেন হয়েছে। এর মাধ্যমে প্রতিদিন গড়ে এক হাজার ১৮১ কোটি ১১ লাখ টাকা আদান-প্রদান হয়েছে। সেপ্টেম্বর মাসে মোট লেনদেন হয়েছে ৩৫ হাজার ৪৩৩ কোটি টাকা।
আলোচিত সময়ে মোবাইল ব্যাংকিং এজেন্টের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে নয় লাখ ৫১ হাজার ৭৭৮ জন। এর মাধ্যমে শুধু লেনদেন নয়, যুক্ত হচ্ছে অনেক নতুন নতুন সেবাও। বিদ্যুৎ, গ্যাস, পানির বিল অর্থাৎ সেবার মূল্য পরিশোধ, কেনাকাটার বিল পরিশোধ, বেতন-ভাতা প্রদান, বিদেশ থেকে টাকা পাঠানো অর্থাৎ রেমিট্যান্স প্রেরণসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে মোবাইল ব্যাংকিংয়ের সেবা দেয়া হচ্ছে।
২০১০ সালে মোবাইল ব্যাংকিং কার্যক্রম চালু করে বাংলাদেশ ব্যাংক। ২০১১ সালের ৩১ মার্চ বেসরকারি খাতের ডাচ্-বাংলা ব্যাংকের মোবাইল ব্যাংকিং সেবা চালুর মধ্য দিয়ে দেশে মোবাইল ফিন্যান্সিয়াল সার্ভিসের যাত্রা শুরু হয়। এর পরপরই ব্র্যাক ব্যাংকের সহযোগী প্রতিষ্ঠান হিসেবে মোবাইল ব্যাংকিং সেবা চালু করে ‘বিকাশ’। বর্তমানে মোবাইল ব্যাংকিং সেবার সিংহভাগই বিকাশের দখলে।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের এমএফএস লেনদেনের সর্বশেষ ১৯ মে’র নির্দেশনা অনুযায়ী, একজন গ্রাহক তার অ্যাকাউন্টে দিনে পাঁচবার ৩০ হাজার টাকা ক্যাশ-ইন বা জমা করতে পারেন। মাসে ২৫ বার সর্বোচ্চ দুই লাখ টাকা ক্যাশ-ইন করা যায়। আগে প্রতিদিন দুবার সর্বোচ্চ ১৫ হাজার টাকা জমা করতে পারতেন একজন গ্রাহক। মাসে ২০ বার এক লাখ টাকা ক্যাশ-ইন করা যেত।