বিদায় সংবর্ধনায় অঝর কাঁদলেন এসপি হারুন

নিজস্ব প্রতিবেদক

এসপি হারুন অর রশীদ

‘আমার সামনে আমার সহকর্মীর মাথায় কেউ পিস্তল তাক করবে আর সেটা আমি সহ্য করবো, তা কিছুতেই হতে পারে না। তাই সেদিন আমার সহকর্মীর মাথায় পিস্তল ধরেছিল পারটেক্স গ্রুপের চেয়ারম্যানের ছেলে রাসেল। আমি তখন ভেবে দেখিনি সে সম্পদশালী নাকি শক্তিশালী। আমি আইন মোতাবেক কাজ করেছি। বিধি মোতাবেক তাকে চ্যালেঞ্জ করে তার গাড়ি আটকে মাদক ও গুলি পেয়েছি। সে অস্ত্রসহ পালিয়েছে। অথচ এখন সে বলছে আমি নাকি টাকা চেয়েছি।’-বলেছেন নারায়ণগঞ্জের সদ্য বদলি হওয়া পুলিশ সুপার (এসপি) হারুন অর রশিদ।

আজ বৃহস্পতিবার বিকেলে নারায়ণগঞ্জ পুলিশ লাইন্সে জেলা পুলিশের আয়োজনে এসপি হারুনের বিদায় সংবর্ধনাকালে এসব কথা বলেন তিনি।

universel cardiac hospital

হারুন বলেন, আমরা (পারটেক্স গ্রুপের মালিক) তার বাড়িতে অভিযান চালিয়েছি। গুলশান ডিসিকেও এ ব্যাপারে অবগত করা হয়েছিল। রাসেলের ছেলে বলেছিল অস্ত্র সম্পর্কে তথ্য দিয়ে সাহায্য করবে। তাই তাকে আনা হয়েছিল। কিন্তু তার মা তখন বলল, তার ছেলে বিদেশ থেকে লেখাপড়া করে এসেছে তাকে একা ছাড়বে না। তাই ছেলের সঙ্গে তিনি নিজেও আসতে চান। আমরা তাকেও সঙ্গে করে নিয়ে এসেছি। সম্মানের সঙ্গে নিয়ে আসছি। আনার পর তাদের অফিসের ওয়েটিং রুমে বসতে দেয়া হয়েছিল। ঘটনার পরের দিন পারটেক্স গ্রুপের কর্ণধার আসলেন। তিনি নিজেও স্বীকার করলেন এ অস্ত্র রাসেলের কাছে থাকা নিরাপদ নয়। তিনিও এ ব্যাপারে সাহায্য করবেন বলে জানালেন।

এ সংক্রান্ত একটি মুচলেকা দিলেন। আমি তার হেফাজতে রাসেলের স্ত্রী-পুত্রকে ছেড়ে দিলাম। এমনকি তাদের আমার বাসায় নিয়ে সম্মানের সঙ্গে বিশ্রাম নিতে দিলাম এবং আপ্যায়ন করলাম। অথচ একটা গ্রুপ বিষয়টিকে ভিন্নভাবে নিয়ে অভিযোগ দিয়েছে।

বিদায়ী এসপি হারুন বলেন, এর আগে আনিছুর রহমান সিনহাকে আটক করেছিলাম। তার বিরুদ্ধে ওয়ারেন্ট রয়েছে। পরদিন তাকে আদালতে প্রেরণ করবো। কিন্তু তিনি একজন ব্যবসায়ী। ভিআইপি মানুষ। তিনি এক সপ্তাহের সময় নিয়ে বললেন, এর মধ্যে ওয়ারেন্ট সব কাটাবেন। তার সম্মানটা যাতে নষ্ট না করি। ভিআইপি। সম্মানিত ব্যক্তি বলে সেদিন তাকে ছাড়া হয়। তিনিও মুচলেকা দিয়েছিলেন এক সপ্তাহের মধ্যে তিনি সব মামলায় আদালতে হাজির হবেন। আনিছুর রহমান সিনহা কিংবা পারটেক্স গ্রুপের হাশেম সাহেব আমার বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ দেয়নি। অভিযোগ তুলেছেন ওই পক্ষটি। যে পক্ষটি আমার দ্বারা ক্ষতিগ্রস্ত। যারা সন্ত্রাস করতে পারেনি। চাঁদাবাজি করতে পারেনি। মাদক ব্যবসা, ভূমিদস্যুতা করতে পারেনি আমার জন্য। সেই তারাই অভিযোগ দিয়েছে। এসব তদন্ত হলে বের হয়ে আসবে। আইনের ঊর্ধ্বে কেউ নয়।

তিনি বলেন, আমি আসার পূর্বে নারায়ণগঞ্জ কেমন ছিল আর এখন কেমন আছে তা আপনারা অবগত আছেন। আমি কাউকে ছাড় দিইনি। জেলার প্রতিটি সংসদ সদস্য, মেয়র আমাকে সাহায্য করেছেন। তারা কখনও কেউ কোনো রকম বাধা দেননি। তদবির করেননি। তাই আমি অপরাধীদের বিরুদ্ধে অ্যাকশন নিতে পেরেছি। নারায়ণগঞ্জের সাংবাদিকদের প্রতি আমি কৃতজ্ঞ। তারা আমাকে যথেষ্ট সাপোর্ট করেছেন। আমার পুলিশের প্রতিটি সদস্য আমাকে সহযোগিতা করেছেন। তাই অপরাধীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে পেরেছি।

তিনি আরও বলেন, জেলায় ২ হাজার পুলিশ সদস্য আছেন। সবাই একটি পরিবার। পরিবারে যেমন পাঁচজন সন্তান থাকলে রাস্তায় চললে কারও না কারও ভুলত্রুটি হবে। পুলিশেরও তেমন আছে। তাই আমার পরিবারের কোনো সদস্য যদি ভুলত্রুটি করে থাকেন তাহলে তাদের পক্ষে আমি ক্ষমা চাচ্ছি। আপনারা তাদের ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন। তবে অপরাধ করার ক্ষেত্রে যদি কোনো পুলিশ সদস্য জড়িত থাকলে আমরা তার বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নিয়েছি। তা ইতোমধ্যে আপনারা দেখেছেন।

এসপি বলেন, পুলিশের মধ্যে একটা চেইঞ্জ আনতে চেয়েছিলাম। আমি মনে করি সেটা পেরেছি। পুলিশ এখন আগের থেকেও অনেক বেশি সাহসী। তারা এখন বুঝতে শিখেছি কীভাবে মোকাবিলা করতে হয়। অপরাধ ও অপরাধী দমনে কীভাবে কাজ করতে হয়। কতটা সাহস বুকে রাখতে হয় তা পুলিশ জানে। আমি সন্ত্রাস, মাদক ব্যবসায়ীদের ছাড় দেব না আগেই বলেছিলাম। আমি যেখানেই যাই, যেখানেই থাকি এদের বিরুদ্ধে লড়াই চলবেই।

এদিকে নিজের সঙ্গে যা হয়েছে তা ষড়যন্ত্র দাবি করে সদ্য বিদায়ী পুলিশ সুপার বলেন, অপরাধী যখন ফেঁসে যায়, মামলা হয়, গ্রেফতার হয় অথবা তদবির করে ব্যর্থ হয় তখন তারা একটা কথাই বলে ‘পুলিশ আমার কাছ থেকে টাকা চেয়েছে’। সম্ভবত পুলিশের ওপর দোষ চাপানোর জন্য এটাই সহজ কাজ। আমি অপরাধীর বিরুদ্ধে কাজ করেছি। আইনের স্বার্থে কাজ করেছি। এ নিয়ে সমালোচিত হয়েছি। এটা একটা ষড়যন্ত্র। তদন্ত হলেই আসল সত্য বের হয়ে আসবে।

অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মনিরুল ইসলামের সভাপতিত্বে বিদায় সংবর্ধনায় উপস্থিত ছিলেন জেলা প্রশাসক জসিম উদ্দীন, র‌্যাব-১১ এর সিইও লে. কর্নেল কাজী শমসের উদ্দিন, নারায়ণগঞ্জ মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি ও জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান আনোয়ার হোসেন, নারায়ণগঞ্জ প্রেসক্লাবের সভাপতি অ্যাড. মাহবুবুর রহমান মাসুম, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আব্দুল্লাহ আল মামুন, নূরে আলম, সুবাস সাহা, চেম্বার অব কমার্সের সভাপতি খালেদ হায়দার খান কাজল, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ক সার্কেল) প্রমুখ।

শেয়ার করুন

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে