সংকটে ব্যাংক খাত : এমডিদের সঙ্গে বৈঠকে বসছেন গভর্নর

নিজস্ব প্রতিবেদক

বাংলাদেশ ব্যাংক
ফাইল ছবি

বিভিন্ন আর্থিক অনিয়ম ও ঋণ কেলেঙ্কারিতে জড়িয়ে পড়ে নড়বড়ে অবস্থায় দেশের ব্যাংকিং খাত। প্রধানমন্ত্রীর বারবার হুঁশিয়ারির পরও সুদহার কমছে না। লাগামহীন খেলাপি ঋণে কোণঠাসা হয়ে পড়েছে ব্যাংকগুলো। উচ্চ সুদহার আর তারল্য সংকটে ভাটা পড়েছে বেসরকারি ঋণে।

এছাড়া নিরাপত্তা সঞ্চিতি সংরক্ষণে ব্যর্থ ব্যাংকগুলো মূলধন ঘাটতিতে পড়েছে। বাড়ছে ঋণ অবলোপনের পরিমাণও। এ নিয়ে দুশ্চিন্তায় পড়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।

সংকট সমাধানে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর প্রধান নির্বাহীদের সংগঠন অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকার্স বাংলাদেশের (এবিবি) সঙ্গে বৈঠকে বসছে বাংলাদেশ ব্যাংক।

আজ বৃহস্পতিবার বিকেল সাড়ে ৩টায় কেন্দ্রীয় ব্যাংকের এ বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে। গভর্নর ফজলে কবিরের সভাপতিত্বে বৈঠকে ডেপুটি গভর্নরসহ কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট বিভাগের কর্মকর্তাও থাকবেন।

বৈঠকে দেশের ব্যাংকিং খাতের সামগ্রিক পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনার পাশাপাশি বিভিন্ন বিষয়ে দিকনির্দেশনা দেবেন গভর্নর।

বৈঠকে সিকিউরিটি সার্ভিসেস, অফশোর ব্যাংকিং নীতিমালা সংশোধন, স্ট্যাম্প ডিউটি, ব্যাংকে শ্রম আইন প্রয়োগ, ইন্টারন্যাল ক্রেটিড রিস্ক রেটিং (আইসিআরআর) গাইড লাইন সংশোধন এবং পরিবর্তনের জন্য তাদের দাবি তুলে ধরবেন।

এছাড়া গৃহঋণের সীমা বাড়ানো এবং ঋণখেলাপি ও প্রভিশনিং নীতিমালা পরিবর্তনের দাবিও জানানো হবে এবিবির পক্ষ থেকে।

সেই সঙ্গে ঋণ অবলোপন নীতিমালা শিথিলের ও রফতানি বিলের ওপর শূন্য দশমিক ২ শতাংশ হারে স্ট্যাম্প শুল্ক কর্তন বিষয়টি প্রত্যাহারের দাবি জানাবেন ব্যাংক নির্বাহীরা। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পক্ষ সিঙ্গেল ডিজিট সুদহার কমানো এবং খেলাপি ঋণ আদায় বৃদ্ধির নির্দেশনা দেয়া হবে বলে জানা গেছে।

এদিকে ঋণের সুদহার সিঙ্গেল ডিজিটে নামিয়ে আনতে প্রধানমন্ত্রী বারবার হুঁশিয়ারি দেয়ার পরও তা বাস্তাবায়ন হয়নি। উল্টো সুদহার বাড়ছে। এ বিষয়ে মঙ্গলবার একনেক সভায় ক্ষুব্ধ হন প্রধানমন্ত্রী। এছাড়া বর্তমান অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল দায়িত্ব নেয়ার পরই ঘোষণা দেন খেলাপি ঋণ এক টাকাও বাড়বে না। কিন্তু খেলাপি ঋণ না কমে উল্টো বেড়েছে।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, ২০১৯ সালের জুন শেষে ব্যাংক খাতে ঋণ বিতরণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে নয় লাখ ৬২ হাজার ৭৭ কোটি টাকা। এর মধ্যে খেলাপি ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে এক লাখ ১২ হাজার ৪২৫ কোটি টাকা। রাইট অব বা অবলোপন করা ঋণের পরিমাণ যোগ করা হলে খেলাপি ঋণ দেড় লাখ কোটি টাকা ছাড়াবে।

বিভিন্ন সূত্র বলছে, ব্যাংকিং খাতে উদ্বেগজনকভাবে ঋণ অবলোপন বেড়ে গেছে। ব্যাংকগুলো মূলত সাময়িকভাবে আর্থিক সূচক ভালো দেখাতে ঋণ অবলোপন করে থাকে। তবে অবলোপনকৃত ঋণ থেকে অর্থ আদায় সন্তোষজনক নয়।

এছাড়া, চলতি বছরই অফশোর ব্যাংকিং নীতিমালা দিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এর মাধ্যমে বৈদেশিক মুদ্রায় ব্যাংকগুলো অর্থায়ন করছে। এর মাধ্যমে অর্থ পাচার হচ্ছে বলে বিভিন্ন সময় তথ্য এসেছে। আজকের বৈঠকে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হওয়ার কথা রয়েছে।

এদিকে সম্প্রতি বেসরকারি গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর পলিসি ডায়লগের (সিপিডি) এক প্রতিবেদনে বলেছে, দেশের ব্যাংক খাতের খেলাপি ঋণ দেশের মোট জিডিপির সাড়ে ৪ শতাংশ খেয়ে ফেলেছে।

সংস্থাটি বলছে, খেলাপি ঋণ আদায় হলে তার মাধ্যমে আলাদাভাবে বাংলাদেশের চলমান অনেকগুলো প্রকল্প বাস্তবায়ন করা সম্ভব ছিল। যেমন তিনটি পদ্মা সেতু অথবা তিনটি পদ্মা রেলওয়ে ব্রিজ, তিনটি মাতারবাড়ি পাওয়ার প্লান্ট, পাঁচটি মেট্রোরেল অথবা সাতটি রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্র।

ব্যাংকিং খাতের মূলধন সম্পর্কে বলা হয়, বর্তমানে ব্যাংকিং খাতে মূলধনের অপর্যাপ্ততা একটি বড় সমস্যা। ঋণ বিতরণের তুলনায় পর্যাপ্ত বিনিয়োগ পাচ্ছে না ব্যাংকগুলো। এ কারণে দিন দিন বেড়ে চলেছে কল মানি (আন্তঃব্যাংক স্বল্পমেয়াদী ঋণ প্রদান ও গ্রহণ) থেকে দৈনিক ভিত্তিতে টাকা ধার করার প্রবণতা।

এছাড়া সম্প্রতি দেখা গেছে, কিছু বিশেষ ব্যাংকে সরকারি প্রণোদনার মাধ্যমে আমানত বৃদ্ধি করা হচ্ছে, যা আর্থিক খাতের জন্য মোটেও সুখকর নয়।

ব্যাংক খাতকে শৃঙ্খলায় আনতে বাংলাদেশ ব্যাংক, অর্থমন্ত্রণালয়, বাণিজ্যিক ব্যাংক এবং বিচার ব্যবস্থাকে আরও স্বচ্ছ এবং সক্রিয় করার পরামর্শ দিয়েছে সিপিডি।

শেয়ার করুন

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে