চট্টগ্রামে কর্ণফুলী নদীর কালুরঘাট পয়েন্টে নতুন সেতু না হলে আগামী ডিসেম্বরে সংসদ থেকে অব্যাহতি নেয়ার ঘোষণা দিয়েছিলেন সংসদ সদস্য ও মুক্তিযোদ্ধা মঈন উদ্দীন খান বাদল।
তিনি বলেছিলেন, ‘ডিসেম্বরের মধ্যে কিছু ন গইল্ল্যে আই যাইয়ুম গুই’ (অর্থাৎ ডিসেম্বরের মধ্যে যদি কিছু না হয়, তাহলে আমি চলে যাব)।
এই মুক্তিযোদ্ধা তার কথা রেখেছেন! কালুরঘাট সেতু নিয়ে সরকারি ঘোষণা আসার আগেই চলে গেছেন, তবে শুধু সংসদ থেকেই নয়, একেবারে না ফেরার দেশে।
গত ৯ আগস্ট চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবে কালুরঘাট সড়ক কাম রেল সেতু নির্মাণের দাবিতে সিনিয়র সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময়কালে ওই ঘোষণা দিয়েছিলেন তিনি।
তিনি বলেছিলেন, ‘এই শেষ জীবনে আমার আর কোনো চাওয়া পাওয়া নেই। প্রেমের টানে মানুষ জাত-কূল-মান বিসর্জন দেয়। আমি এবার জনগণের প্রেম রক্ষায় নিজের জাত ছেড়ে প্রয়োজনে আওয়ামী লীগে যাব। সেতু ছাড়া আমার আর কিছুই চাই না।’
বাদল বলেছিলেন, ‘আমার জীবদ্দশায় কালুরঘাট সড়ক কাম রেল সেতুটির বাস্তবায়ন দেখে যেতে চাই। এ সেতুর জন্য আমি আমার ‘সবেধন নীলমণি’ রাজনৈতিক জীবনের সর্বোচ্চ স্বীকৃতি এমপি পদ থেকে অব্যাহতি নেয়ার কথা পর্যন্ত বলেছি। আমার দক্ষিণ চট্টগ্রামবাসীর জন্য আমি তো আর কিছু চাইনি।’
তিনি আরও বলেন, ‘কালুরঘাটে নতুন সেতু নিয়ে চারবার সমীক্ষা হয়েছে। অস্ট্রেলিয়া, তাইওয়ান, বাংলাদেশ ও কোরিয়ান পরামর্শক প্রতিষ্ঠান সমীক্ষাগুলো চালিয়েছে। কোরিয়ান কোম্পানি চূড়ান্ত সমীক্ষা করেছে। রেলওয়ের ধারণা, ৮০০ কোটি টাকা লাগবে। কোরিয়ানরা বলেছিল, ১২০০ কোটি টাকা লাগবে। তারা ৮০০ কোটি টাকা দিতে রাজি। জলাবদ্ধতার সাড়ে ৫ হাজার কোটি টাকা অনির্বাচিতদের হাতে দিলেন। অথচ মাত্র ৩৯০ কোটি টাকা অর্থ বরাদ্দ পেলেই কালুরঘাট সেতুর কাজ শুরু করা যায়।’
প্রধানমন্ত্রীর উদ্দেশে এমপি বাদল বলেছিলেন, আপনি চট্টগ্রামের দায়িত্ব হাতে নিয়েছেন। এ চট্টগ্রামের উন্নয়নে আপনি হাজার হাজার কোটি টাকার প্রকল্প বাস্তবায়ন করে চলেছেন। সর্বশেষ দক্ষিণ এশিয়ার সর্বপ্রথম উদ্যোগ কর্ণফুলী টানেল নির্মাণ করছেন। চট্টগ্রাম কক্সবাজার রেল লাইন করতে কালুরঘাট রেল সেতু নির্মাণ করা হবে। আমার দক্ষিণ চট্টগ্রামবাসীর একমাত্র দাবি শুধু রেল সেতুর সঙ্গে সড়ক সংযুক্ত করা। এ সড়ক কাম রেল সেতুটি বাস্তবায়িত হলে চট্টগ্রামের সংশ্লিষ্ট অঞ্চলের সঙ্গে সমগ্র দেশের উন্নয়ন কর্মযজ্ঞে নতুন দিগন্ত উন্মোচিত হবে।
এর আগেও ২০১৯-২০ অর্থবছরের বাজেটের ওপর সাধারণ আলোচনায় অংশ নিয়ে তিনি ডিসেম্বরের মধ্যে চট্টগ্রামে কালুরঘাট ব্রিজের সদগতি (কাজের সুরাহা) না হলে সংসদ থেকে বের হয়ে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছিলেন।
- আরও পড়ুন >> না ফেরার দেশে চলে গেলেন এমপি মঈন উদ্দীন খান বাদল
শেষ পর্যন্ত না পাওয়া সেই বেদনা নিয়েই সবার মাঝ থেকে চলে গেলেন সংসদ সদস্য ও মুক্তিযোদ্ধা মঈন উদ্দীন খান বাদল।