জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী উদযাপনে সরকার বছরব্যাপী নানা কর্মসূচি আয়োজনের যে পরিকল্পনা তৈরি করছে, তার মধ্যে অন্যতম আকর্ষণীয় হবে খেলাধুলা। হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ১০০তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২০২০ সালের ১৭ মার্চ থেকে ২০২১ সালের ১৭ মার্চ পর্যন্ত ‘মুজিববর্ষ’ হিসেবে পালনের ঘোষণা দিয়েছেন।
যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ও ৩০৬ কোটি ২৪ লাখ টাকা ব্যয়ে খেলাধুলার নানা কর্মসূচি পালনের পরিকল্পনা নিয়েছে। স্থানীয় ও আন্তর্জাতিক মিলিয়ে ৯০টির বেশি আয়োজন থাকছে বছরব্যাপী। এর মধ্যে প্রায় ৪০টির মতো আন্তর্জাতিক আয়োজন। সবচেয়ে বেশি তিনটি আন্তর্জাতিক আয়োজন থাকছে ফুটবলে। জাতির পিতার নামে তিনটি আন্তর্জাতিক টুর্নামেন্ট আয়োজন করবে বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশন।
ক্রিকেটে থাকছে দুটি আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টি ম্যাচ। দুটিই হবে এশিয়া বনাম বিশ্ব একাদশের মধ্যে। ক্রিকেটের মতো দুটি করে আন্তর্জাতিক আয়োজন থাকছে দাবা, বাস্কেটবল ও কুস্তিতে। দাবা দুটি গ্র্যান্ডমাস্টার টুর্নামেন্ট আয়োজন করবে বঙ্গবন্ধুর নামে। একটি ঢাকায়, আরেকটি চট্টগ্রামে।
সব আয়োজনই হবে আগামী বছর ১৭ মার্চ থেকে পরের বছর ১৭ মার্চ পর্যন্ত সময়ের মধ্যে। যে কারণে টুর্নামেন্টগুলোর বেশিরভাগেরই সময় চূড়ান্ত নয়। যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয় খেলাধুলা নিয়ে সর্বশেষ যে সভা করেছে, সেখানে টুর্নামেন্টগুলোর বেশিরভাগ দিন, তারিখ বা সূচির জায়গায় ‘সুবিধাজনক’ হিসেবে দেখানো আছে। সংশ্লিষ্ট ফেডারেশন বিদেশি দলগুলোর সঙ্গে সমন্বয় করে টুর্নামেন্টের দিন-তারিখ ঠিক করবে।
বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশন নিয়মিত বঙ্গবন্ধু গোল্ডকাপ আয়োজন করে। আগামী বছর সেই টুর্নামেন্ট ‘মুজিববর্ষ’ উপলক্ষে জাতির পিতার নামে আয়োজন করা হবে। পাশাপাশি সাউথ এশিয়ান (সাফ) চ্যাম্পিয়নশিপও বাফুফে বঙ্গবন্ধুর নামে আয়োজন করবে। অনূর্ধ্ব-১৫ যে সাফ চ্যাম্পিয়নশিপ আছে আগামী বছর, সেটিও হবে বঙ্গবন্ধুর নামে।
বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি) যে দুটি আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টি ম্যাচ আয়োজন করবে এশিয়া এবং বিশ্ব একাদশের মধ্যে তার প্রথমটি হবে আগামী বছর ১৯ মার্চ, পরেরটি ২১ মার্চ। বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা নিজাম উদ্দিন চৌধুরী সুজন জানিয়েছেন, ‘এশিয়া ও বিশ্ব একাদশে সেরা খেলোয়াড়রাই অংশ নেবেন এ দুটি টি-টোয়েন্টি ম্যাচে।’
বাংলাদেশ হকি ফেডারেশন প্রথমবারের মতো এশিয়া অনূর্ধ্ব-২১ চ্যাম্পিয়নশিপ আয়োজন করতে যাচ্ছে। আগামী বছর জুনে মওলানা ভাসানী স্টেডিয়ামে হবে ১২ জাতির এই টুর্নামেন্ট। এশিয়ার এই টুর্নামেন্ট জাতির জনকের নামে আয়োজন করতে এশিয়ান হকি ফেডারেশনের কাছ থেকে স্বত্ব কিনেছে বাংলাদেশ হকি ফেডারেশন।
বাংলাদেশ অ্যাথলেটিকস ফেডারেশন জাতির পিতার নামে আয়োজন করবে সাফ অ্যাথলেটিকস চ্যাম্পিয়নশিপ, বাংলাদেশ কাবাডি ফেডারেশন আগামী বছরের বিশ্বকাপের আয়োজক হওয়ার চেষ্টা করছে বলে জানিয়েছেন ফেডারেশনের যুগ্ম সম্পাদক গাজী মোজাম্মেল হক।
বাংলাদেশ ভলিবল ফেডারেশন আগামী বছর মার্চে বঙ্গবন্ধুর নামে আয়োজন করবে আন্তর্জাতিক ভলিবল টুর্নামেন্ট, রোলার স্কেটিং ফেডারেশন আয়োজন করবে বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক রোলবল গোল্ডকাপ, আগামী বছর ডিসেম্বরে বঙ্গবন্ধু ওপেন আন্তর্জাতিক ব্যাডমিন্টন আয়োজন করবে বাংলাদেশ ব্যাডমিন্টন ফেডারেশন, হ্যান্ডবল ফেডারেশন জুলাইয়ে আয়োজন করবে বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক হ্যান্ডবল টুর্নামেন্ট।
শুটিং ফেডারেশন আগামী বছর জুনে আয়োজন করবে বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক এয়ারগান চ্যাম্পিয়নশিপ, সাঁতার ফেডারেশন আয়োজন করবে বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক জুনিয়র সাঁতার প্রতিযোগিতা, আরচারি ফেডারেশনের সূচিতে আছে ২০২১ সালের ফেব্রুয়ারিতে আন্তর্জাতিক আরচারি চ্যাম্পিয়নশিপ।
বাংলাদেশ বাস্কেটবল ফেডারেশন দুটি আন্তর্জাতিক টুর্নামেন্ট আয়োজন করবে মুজিববর্ষে। আগামী বছর সেপ্টেম্বরে হবে আন্তর্জাতিক মহিলা প্রতিযোগিতা, ডিসেম্বরে বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক থ্রি অন থ্রি (বিচ) বাস্কেটবল চ্যাম্পিয়নশিপ। দাবা ফেডারেশন আগামী বছর মার্চে ঢাকায় আয়োজন করবে বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক গ্র্যান্ডমাস্টার প্রতিযোগিতা এবং আরেকটি করবে জুন-জুলাইয়ে চট্টগ্রামে।
এপ্রিলে টেবিল টেনিস ফেডারেশন আয়োজন করবে আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতা, টেনিস ফেডারেশনও সুবিধাজনক সময়ে বঙ্গবন্ধুর নামে একটি আন্তর্জাতিক টুর্নামেন্ট আয়োজন করবে।
জিমন্যাস্টিকস ফেডারেশন, রোইং ফেডারেশন, বক্সিং ফেডারেশন, ইয়োগা অ্যাসোসিয়েশন, তায়কোয়ানদো ফেডারেশন, খো খো ফেডারেশন, কারাতে ফেডারেশন, জুডো ফেডারেশন, মার্শাল আর্ট কনফেডারেশন, ভারোত্তোলন ফেডারেশন, কিক বক্সিং অ্যাসোসিয়েশন, প্যারালিম্পিক, জুজুৎসু এসোসিয়েশন, শরীর গঠন ফেডারেশনও একটি করে আন্তর্জাতিক টুর্নামেন্ট আয়োজন করবে বঙ্গবন্ধুর নামে। কুস্তি ফেডারেশনের সূচিতে আছে দুটি আন্তর্জাতিক টুর্নামেন্ট।
- আরও পড়ুন >> ঢাকায় পৌঁছেছে খোকার মৃতদেহ
যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব ওমর ফারুক বলেছেন, ‘আমরা আগে স্থানীয় ও আন্তর্জাতিক মিলিয়ে ৮৯টি কর্মপরিকল্পনা তৈরি করেছিলাম। এখন তিন-চারটা যোগ হয়েছে। আমাদের পরিকল্পনা এখন চূড়ান্ত।’