আজ দেশে আসছে চট্টগ্রাম-৮ আসনের সংসদ সদস্য ও জাসদের কার্যকরী সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা মঈন উদ্দিন খান বাদলের নিথর দেহ। শনিবার চট্টগ্রামের বোয়ালখালীতে মা-বাবার পাশে পারিবারিক কবরস্থানে সমাহিত করা হবে তাকে।
বাদলের ছোট ভাই মনির উদ্দিন আহমদ খান বিষয়টি গণমাধ্যমকে নিশ্চিত করেছেন।
তিনি বলেন, ‘বাড়ির পাশে পারিবারিক কবরস্থানে পিতা-মাতার পাশেই বাদল ভাইকে দাফনের প্রস্তুতি নেয়া হচ্ছে।
বাদলের ব্যক্তিগত সহকারী এসএম হাবিব বাবু জানান, বেঙ্গালুরু থেকে আজ সকালে বাদলের মরদেহ ঢাকায় আনা হবে। এদিন দুপুরে সংসদ ভবনের দক্ষিণ প্লাজায় তার প্রথম জানাজা অনুষ্ঠিত হবে। পরদিন তার লাশ চট্টগ্রাম নেয়া হবে।
নগরীর জমিয়তুল ফালাহ মসজিদ মাঠে জানাজা এবং সেদিনই বোয়ালখালীর সারওয়াতলীর গ্রামের বাড়িতে সর্বশেষ জানাজার পর পারিবারিক কবরস্থানে তার লাশ দাফন করা হবে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বাদলের গ্রামের বাড়ি সারোয়াতলীর খান মহলে বিরাজ করছে সুনসান নীরবতা। বাড়ির সামনে চলছে শেষ বারের মতো বাদলকে শ্রদ্ধার সঙ্গে বিদায় জানানোর প্রস্তুতি। মাঝে মাঝেই মহলের অন্দর থেকে ভেসে আসছে ভাই-বোন আর স্বজনদের কান্নার আওয়াজ। পাঁচ ভাই ও তিন বোনের মধ্যে বাদল তৃতীয়।
বৃহস্পতিবার বাংলাদেশ সময় সকাল ৭টা ৪৫ মিনিটে ভারতের বেঙ্গালুরুর নারায়ণ হৃদরোগ রিসার্চ ইনস্টিটিউট অ্যান্ড হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান মঈন উদ্দিন খান বাদল।
দুই বছর আগে স্ট্রোকে আক্রান্ত হন বাদল। হার্টেও সমস্যা ছিল তার। রুটিন চেকআপের অংশ হিসেবে ১৮ অক্টোবর ভারতে যান বাদল। সেখানে আবারও মাইল্ড স্ট্রোকে আক্রান্ত হলে তাকে বেঙ্গালুরুর ওই হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
প্রখ্যাত হৃদরোগ বিশেষজ্ঞ ডা. দেবী শেঠি ও নিউরো সার্জন ড. বিক্রম সিংয়ের তত্ত্বাবধানে চিকিৎসায় মাঝে তার শারীরিক অবস্থার কিছুটা উন্নতি হয়। হাসপাতালে মৃত্যুর সময় উপস্থিত ছিলেন বাদলের সহধর্মিণী সেলিনা বাদল।
তিনি জানান, প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে একটি বিশেষ দল বাদলের মরদেহ দেশে আনার প্রক্রিয়া তত্ত্বাবধান করছে। সকালে এই রাজনীতিকের মৃত্যুর খবরে এলাকায় শোকের ছায়া নেমে আসে।
সংসদ সদস্য বাদলের মৃত্যুতে চট্টগ্রামের বিভিন্ন রাজনৈতিক নেতা ও সংগঠনের পক্ষ থেকে শোক প্রকাশ করে বিবৃতি দেয়া হয়েছে। আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য ও সাবেক মন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন এক বিবৃতিতে বলেন, বাদলের ইন্তেকালে জাতি একজন কৃতী রাজনীতিবিদকে হারাল।
অনলাইন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে আবেগঘন স্ট্যাটাস দিয়েছেন আওয়ামী লীগ সাংগঠনিক সম্পাদক ও শিক্ষা উপমন্ত্রী ব্যারিস্টার মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল। তিনি লেখেন- বীর মুক্তিযোদ্ধা, জাতীয় নেতা, অনলবর্ষী বক্তা, সংসদ সদস্য, বীর চট্টলার গৌরব আজ না ফেরার দেশে। মনে হচ্ছে যেন আবারও পিতৃহারা হলাম। চীন সফরে থাকা চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীন এক শোকবার্তায় বলেন, বাদল ভাইয়ের মৃত্যুতে চট্টগ্রামবাসী একজন সাহসী সন্তানকে হারাল।
১৯৫২ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি জন্ম নেয়া বাদল বোয়ালখালী উপজেলা জাসদের সভাপতি ছিলেন। তিনি চট্টগ্রাম-৮ আসনের তিন বার নির্বাচিত সংসদ সদস্য ছিলেন। তার তিন ছেলে ও এক মেয়ে রয়েছে।
ছাত্রলীগের রাজনীতি থেকে উঠে আসা বাদল ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধে সক্রিয়ভাবে অংশ নেন। বাঙালিদের ওপর আক্রমণের জন্য পাকিস্তান থেকে আনা অস্ত্র চট্টগ্রাম বন্দরে সোয়াত জাহাজ থেকে খালাসের সময় প্রতিরোধের অন্যতম নেতৃত্বদাতা ছিলেন বাদল।
- আরও পড়ুন >> রাজকোটে ৮ উইকেটের জয়ে সিরিজে টিকে থাকল ভারত
মুক্তিযুদ্ধ পরবর্তী সময়ে বাদল সমাজতান্ত্রিক রাজনীতির প্রতি আকৃষ্ট হন। জাসদ, বাসদ হয়ে পুনরায় জাসদে আসেন। আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে ১৪ দল গঠনেও বাদলের উল্লেখযোগ্য ভূমিকা ছিল।