বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী আহমেদ বলেছেন, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় (জাবি) ইস্যুতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দুর্নীতিবাজদের পক্ষে সুস্পষ্ট অবস্থান নিয়েছেন।
আজ শুক্রবার সকালে নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ কথা বলেন।
প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যের সমালোচনা করে রিজভী বলেন, ‘এটা স্পষ্টত যে, প্রধানমন্ত্রীর এই হুমকির কণ্ঠ আইয়ুব-ইয়াহিয়া-হিটলার-মুসোলিনির কণ্ঠের প্রতিধ্বনি। ভিসির বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ করেছে স্বয়ং ছাত্রলীগ। ভিসি কীভাবে এক কোটি ৬০ লাখ টাকা বিতরণ করেছিলেন তা গণমাধ্যমে বিশদভাবে প্রকাশিত হয়েছে। ছাত্রলীগের পদচ্যুত সাধারণ সম্পাদক ও ছাত্রলীগ নেতারা ভিসি এবং ভিসির পরিবারের বিরুদ্ধে টাকা লেনদেনের যে অভিযোগ উত্থাপন করেছেন সেটিও গণমাধ্যমে এসেছে। কিন্তু প্রধানমন্ত্রীর প্রীতিধন্য জাবির ভিসির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা না নিয়ে বরং গতকাল প্রধানমন্ত্রী ভিসিকে রক্ষা করতে বক্তব্য দিয়ে দুর্নীতির পক্ষে সুষ্পষ্ট সাফাই গাইলেন।’
তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ প্রধান শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন মিডনাইট সরকার দুর্নীতির বহু দৈত্যাকার কেলেঙ্কারিতে নিমজ্জিত। এখন কেউ যাতে তার সরকার ও প্রশাসনের দুর্নীতির বিরুদ্ধে মুখ খুলতে না পারে সেজন্য তার এই হুমকি ধামকি। যিনি বা যারা অভিযোগ উত্থাপন করবেন, তাদেরকেই যদি দুর্নীতির প্রমাণ হাতে নিয়ে আন্দোলন করতে হয় তাহলে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও প্রশাসনের কাজ কী, প্রশ্ন রাখেন বিএনপির এই যুগ্ম মহাসচিব।
বিএনপির এ নেতা বলেন, আইনশৃঙ্খলা ও প্রশাসনের কাজ কি শুধু বিরোধী দলকে নিশ্চিহ্ন করে অবৈধ সরকারকে টিকিয়ে রাখা? তিনি বলেন, শেখ হাসিনার আমলে মৃত্যু জীবনের ছায়াসঙ্গী হয়ে আছে।
সদ্যপ্রয়াত বিএনপির নেতা ও অবিভক্ত ঢাকা সিটি কর্পোরেশনের শেষ মেয়র সাদেক হোসেন খোকার পাসপোর্ট নবায়নের সুযোগ না দেয়ায় সরকারের কঠোর সমালোচনা করেন রিজভী আহমেদ।
তিনি বলেন, ‘লাখো মানুষের শ্রদ্ধা ভালোবাসায় এই দুনিয়া থেকে চিরবিদায় নিয়েছেন বীর মুক্তিযোদ্ধা সাদেক হোসেন খোকা। তবে বিশ্ববাসী বেদনার্ত যে, এদেশের বীর সন্তান সাদেক হোসেন খোকা জীবন বাজি রেখে যে দেশটা স্বাধীন করতে বীরোচিত ভূমিকা রেখেছিলেন, চিকিৎসাধীন অবস্থায় বিদেশে মারা যাওয়ার পর তিনি নিজ দেশে ফিরলেন রিফিউজি কিংবা রাষ্ট্রহীন নাগরিকের মতো ট্রাভেল ডকুমেন্ট নিয়ে। কারণ মুক্তিযুদ্ধের চেতনার দোহাই দিয়ে যারা এখন রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা দখল করে আছেন তারা সাদেক হোসেন খোকাকে পাসপোর্ট নবায়নের সুযোগ দিতে অস্বীকার করেছে।’
রিজভী বলেন, ‘দেশের জনগণ বিশ্বাস করে এই দেশে এখন শেখ হাসিনার কথা ছাড়া কিছু হয় না। তাই শেখ হাসিনা চাননি বলেই ২০১৭ সালের থেকে চেষ্টা করেও মৃত্যুর আগ পর্যন্ত সাদেক হোসেন খোকা তার বাংলাদেশি পাসপোর্টের মেয়াদ নবায়নের সুযোগ পেতে ব্যর্থ হয়েছেন।’
তিনি বলেন, ‘১৯৯১ সালের নির্বাচনে শেখ হাসিনাকে পরাজিত করে জাতীয় রাজনীতিতে প্রবলভাবে জায়গা করে নিয়েছিলেন সাদেক হোসেন খোকা। আর এবার তার অন্তিম যাত্রায় অসংখ্য মানুষের শোকাহত উপস্থিতি প্রমাণ করে শেখ হাসিনা তার কাছে আরও একবার পরাজিত হয়েছেন। এই সরকার ক্ষমতাসীন হওয়ার পর থেকে মুক্তিযুদ্ধের চেতনার কথা বলে দেশের বীর মুক্তিযোদ্ধাদের অপমান করে স্বাধীনতার স্পিরিটকে ক্রমশ ফিকে করেছে। কিন্তু দেশের মৃত্তিকার সন্তান মরহুম সাদেক হোসেন খোকার জানাজায় লাখো মানুষের উপস্থিতি প্রমাণ হয়েছে সরকার চক্রান্ত করলেও জনগণের হৃদয়স্পর্শী আবেগকে স্তব্ধ করে রাখা যায় না।’
দেশের চলমান শুদ্ধি অভিযানের সমালোচনা করে তিনি বলেন, শুদ্ধি অভিযানে উল্লেখ করার মতো গডফাদাররা কেউ গ্রেফতার হয়নি। জনগণের দৃষ্টি আড়াল করতে লোকদেখানো অভিযান চালানো হয়। দেশের স্বার্থবিরোধী চুক্তি অবিলম্বে বাতিলের দাবি জানান তিনি।
সংবাদ সম্মেলনে অন্যদের মধ্যে বিএনপির ভাইস-চেয়ারম্যান ডা. এ জেড এম জাহিদ হোসেন, অ্যাডভোকেট আহমেদ আযম খান, স্বেচ্ছাসেবক বিষয়ক সম্পাদক মীর সরফত আলী সপু প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।