নোবিপ্রবিতে ছাত্রলীগের দু’গ্রুপের সংঘর্ষের ঘটনায় ১৬ শিক্ষার্থী বহিষ্কার

নোবিপ্রবি প্রতিনিধি

নোবিপ্রবিতে ১৬ শিক্ষার্থী বহিষ্কার
ছাত্রলীগের সংঘর্ষের পর হল থেকে উদ্ধার করা অস্ত্র। ফাইল ছবি

নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে (নোবিপ্রবি) ছাত্রলীগের দু’গ্রুপের  সংঘর্ষের সময় শিক্ষকের ওপর হামলা ও হল ভাঙচুর লুটপাটের ঘটনায় ১৬ শিক্ষার্থীকে ছয় মাসের জন্য বহিষ্কার করেছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। এছাড়া সাতজনকে ২০ হাজার টাকা, ১২ জনকে পাঁচ হাজার টাকা করে সর্বমোট দুই লাখ টাকা জরিমানা এবং দুজনকে সতর্ক করে দেয়া হয়েছে।

শনিবার বিশ্ববিদ্যালয়ের রিজেন্ট বোর্ডের বিশেষ সভায় এসব সিদ্ধান্ত হয় বলে আজ সোমবার জানানো হয়েছে।

universel cardiac hospital

এর আগে হামলা-ভাঙচুরের ঘটনায় গঠিত তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনের ভিত্তিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের শৃঙ্খলা বোর্ডের সদস্যরা এই শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণের সুপারিশ করেন। শৃঙ্খলা বোর্ডের সুপারিশের ভিত্তিতে  রিজেন্ট বোর্ড অনুমোদন করেছে বলে জানিয়েছে সংশ্লিষ্ট সূত্র।

বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি সূত্র গণমাধ্যমকে জানিয়েছে, শাস্তি পাওয়া বেশির ভাগ শিক্ষার্থীই ক্যাম্পাসে ছাত্রলীগের নেতাকর্মী হিসেবে পরিচিত। সংঘর্ষে জড়ানো নেতাকর্মীরা বিশ্ববিদ্যালয়ের শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের অনুসারী।

সোমবার সন্ধ্যায় বিশ্ববিদ্যালয়ের এক বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, গত ৩১ আগস্ট ও ১ সেপ্টেম্বর ভাষা শহীদ আব্দুস সালাম হলে বিবাদমান শিক্ষার্থীদের মধ্যে অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে প্রাথমিক তদন্তে শৃঙ্খলা ভঙ্গের  অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় বিভিন্ন মেয়াদী শাস্তি প্রদান এবং বিশ্ববিদ্যাল থেকে বহিষ্কার করা হয়।

সালাম হলে মারামারি ও ভাঙচুরের ঘটনায় ১২ শিক্ষার্থীকে ছয় মাসের জন্য বহিষ্কার করা হয়। বহিষ্কৃতরা হলেন- রবিউল হক চৌধুরী (কৃষি), মো. জহিরুল ইসলাম (ব্যবসায় প্রশাসন) , মো. আবদুর রহিম সিয়াম (কৃষি), জাহিদ হাসান শুভ (ইএসডিএম), কাজী আশরাফুল হক লিসান (ইএসডিএম), ইয়াসিন আরাফাত তারেক (ইএসডিএম), মো. শফিউর রহমান অন্তর (বিজিই), মো. সাইফুল্লাহ সনি (সিএসটিই), অর্নব সরকার (সমাজ কর্ম), মো. তৌহিদুল ইসলাম (কৃষি), মো. আল ইমরান (আইসিই), আবদুল্লাহ আল মাসুদ (ফলিত গণিত), ওমর ফারুক (কৃষি), মো. মিরাজ মাহতাব (ইংরেজি), আবদুল্লাহ আল নোমান (অর্থনীতি), কে এস এম সায়েম (মাইক্রোবায়োলজি)।

সংঘর্ষে নেতৃত্বদান, সংগঠক ও হুকুমদাতা হিসেবে সাত শিক্ষার্থীর ২০ হাজার টাকা করে জরিমানা করা হয়েছে। তারা হলেন- মো. মুহাইমিনুল ইসলাম নুহাশ (ফার্মেসি), মাহবুবুর রহমান চৌধুরী (ব্যবসায় প্রশাসন), জাহিদ হাসান শুভ (ইএসডিএম), হাসানুজ্জামান বিপ্লব (ইএসডিএম), আতাউল করিম রনি (কৃষি), শাফকাত আবির (ইংরেজি), আব্দুল্লাহ আল নোমান (অর্থনীতি)।

সংঘর্ষের ঘটনায় উপস্থিত ও বিভিন্নভাবে ব্যবহৃত ১২ শিক্ষার্থীকে পাঁচ হাজার টাকা করে জরিমানা করা হয়। তারা হলেন, মো. আবদুল রহমান শিহাব (মাইক্রোবায়োলজি), কাজী মাহমুদুর রহমান রাহিম (মাইক্রোবায়োলজি), আবদুল্লাহ আল মাহদি (কৃষি), মো. আল আমিন (কৃষি), মো. শাকিল মোস্তফা মানিক (অর্থনীতি), ইয়াছিন আরাফাত (বিএলডব্লিউএস), আক্তারুজ্জামান জিসান (বিএলডব্লিউএস), মো. আলি (ইংরেজি), মো. জুবায়ের আহমেদ জনি (বিজিই), কামরুল হাসান (এফটিএনএস), আরফানুল হক (সিএসটিই), মো. এহতেশামুল হক শুভ (টিএইচএম)।

সংঘর্ষ সংঘটিত হওয়ার ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয়ের শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি সফিকুল ইসলাম রবিন ও সাধারণ সম্পাদক এস এম ধ্রুবকে সতর্কীকরণ নোটিশ দেয়া হয়।

গত ৩১ আগস্ট  হলের সিনিয়র ছাত্রের সামনে এক জুনিয়র ছাত্রের ধূমপান করাকে কেন্দ্র করে  বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাষা শহীদ আব্দুস সালাম হলে ছাত্রলীগের দুই পক্ষের মধ্যে দফায় দফায় পাল্টাপাল্টি হামলার ঘটনা ঘটে।

এর জেরে  ফের ১ সেপ্টেম্বর রাত ৯টায় দু’গ্রুপের রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ হয়। তারা হলের ২২টি কক্ষসহ সিলিং ফ্যান, আলমারি, খাট, বাথরুমের ফিটিংস, ওয়াশরুমের বেসিন ভাঙচুর করে। রাত ১২টায় পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। সংঘর্ষের আহত বিশ্ববিদ্যালয়ের অণুজীব বিজ্ঞান বিভাগের মালেক উকিল হলের প্রভোস্ট  অধ্যাপক ড. ফিরোজ আহমেদসহ ১৫ জন শিক্ষার্থী আহত হন।

পরদিন দুজন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের নেতৃত্বে পুলিশ ভাষা শহীদ আব্দুস সালাম হলে অভিযান চালায়। এ সময় সেখান থেকে ২২টি চাপাতি, পাঁচটি দা, পাঁচটি হাতুড়ি, ৩০টি স্টিলের পাইপ, ১৫টি প্লাস্টিকের পাইপ, ১৫০টি লোহার রড, ১৬টি টেঁটা, ১৬ বোতল বিদেশি মদ, গাঁজা, ইয়াবা, চারটি চাকু ও বিপুলসংখ্যক দেশীয় অস্ত্র উদ্ধার করা হয়।

শেয়ার করুন

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে