বিরোধী দলীয় চিফ হুইপ ও জাতীয় পার্টির মহাসচিব মসিউর রহমান রাঙ্গা নব্বইয়ের গণঅভ্যুত্থানে শহীদ নূর হোসেনকে নিয়ে কুরুচিপূর্ণ মন্তব্য করায় জাতীয় সংসদে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন সরকারি দল আওয়ামী লীগসহ বিরোধী দলের সংসদ সদস্যরা।
একজন সাবেক মন্ত্রী ও এমপি হিসেবে রাঙ্গার বক্তব্যের নিন্দা জানিয়ে তাকে সংসদে দাঁড়িয়ে ক্ষমা চাওয়ার দাবি জানিয়েছেন সরকারি দলের সদস্যরা। তবে বিরোধীদলীয় সদস্যরা রাঙ্গার বক্তব্যকে তার নিজস্ব মতামত হিসেবে উল্লেখ করে বলেন, রাঙ্গার বক্তব্যের দায় নেবে না জাতীয় পার্টি। তবে এজন্য পার্টি লজ্জিত।
আজ মঙ্গলবার স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে সংসদের এক অনির্ধারিত আলোচনায় অংশ নিয়ে তারা একথা বলেন।
আলোচনায় অংশ নেন আমির হোসেন আমু, তোফায়েল আহমেদ, শেখ ফজলুল করিম সেলিম, সুলতান মোহাম্মদ মনসুর আহমেদ, নজিবুল বশর মাইজ ভাণ্ডারী, জাতীয় পার্টির কাজী ফিরোজ রশিদ, মুজিবুল হক চুন্নু প্রমুখ।
এ সময় সংসদ নেতা ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান এবং বিরোধী দলের উপনেতা সংসদে উপস্থিত ছিলেন।
পয়েন্ট অব অর্ডারে দাঁড়িয়ে নূর হোসেনকে নিয়ে রাঙ্গার কুরুচিপূর্ণ মন্তব্য করার বিষয়টি সংসদে তুলেন আওয়ামী লীগের দলীয় সংসদ সদস্য তাহজীব আলম সিদ্দিকী। এ সময় রাঙ্গা অনুপস্থিত ছিলেন অধিবেশনে।
তোফায়েল আহমেদ বলেন, রাঙ্গার বক্তব্য বাংলার মানুষের হৃদয়ে ব্যথা দিয়েছে। তিনি তুচ্ছ তাচ্ছিল্য করে বক্তব্য দিয়েছেন। তার বক্তব্যের ঘৃণা প্রকাশ করছি। তার বক্তব্য জাতি ঘৃণা করেছে। রাঙ্গা খারাপ বক্তব্য দিয়েছেন। এটা কুৎসিত বক্তৃতা। একজন সুস্থ মানুষ হলে, স্বাভাবিক থাকলে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু ও প্রধানমন্ত্রীর সম্পর্কে এমন সমালোচনা করতো না। আজ রাঙ্গার বক্তব্যে সারাদেশে বিক্ষোভ চলছে। তার জাতির কাছে ক্ষমা চাওয়া উচিত।
তিনি বলেন, মত পথের ভিন্নতা থাকে। আমার স্বৈরাচারবিরোধী দিবস হিসেবে পালন করি, তারা অন্যভাবে করে। এলায়েন্স থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন রাঙ্গা। এলায়েন্স না থাকলে নির্বাচিত হতো কি না সন্দেহ।
আমির হোসেন আমু বলেন, রাঙ্গার এ বক্তব্য দিয়ে শাক দিয়ে মাছ ঢাকার চেষ্টা করছেন। এরশাদ সাহেবের কুকীর্তি ঢাকার জন্য একথা বলেছেন। এখন বিধি অনুযায়ী ব্যবস্থা নেয়া হোক। তাকেও ক্ষমা চাইতে হবে। রাঙ্গা অর্বাচীন চিফ হুইপ। নিঃশর্তভাবে তার বক্তব্য প্রত্যাহার করতে হবে, ক্ষমা চাইতে হবে।
গণফোরাম থেকে বহিষ্কৃত সংসদ সদস্য সুলতান মনসুর বলেন, রাঙ্গা সাহেব সংসদকে অবমাননা করেছেন। স্বৈরাচারের পতন না হলে রাঙ্গা সংসদ সদস্য হতে পারতেন না। এ বক্তব্যের মাধ্যমে প্রমাণ হয়েছে- স্বৈরাচারের পতন হলে তাদের চরিত্র, স্বৈরাচারের প্রেতাত্মা যে পরিবর্তন হয়নি। রাঙ্গার গণবিরোধী, সুবিধাবাদী চরিত্রও স্পষ্ট হয়েছে। রাঙ্গার অবশ্যই সংসদে ক্ষমা চাইতে হবে।
তরিকত ফেডারেশনের চেয়ারম্যান নজিবুল বশর মাইজভাণ্ডারী বলেন, রাঙ্গা শুধু নূর হোসেনের বিরুদ্ধে নয়; স্বাধীনতা, সংসদ ও গণতন্ত্রের বিরুদ্ধে কথা বলেছেন, সবাইকে অপমান করেছেন। তাকে সংসদে এসে ক্ষমা চাইতে হবে। জাতীয় পার্টির মহাসচিব থেকে রাঙ্গাকে বহিষ্কারের দাবিও তোলেন তিনি।
শেখ ফজলুল করিম সেলিম বলেন, কোনো সুস্থ লোক এ ধরনের কথা বলতে পারে না। কোনো বিবেকবান লোক এটা বলতে পারে না। জাতীয় পার্টির পক্ষ থেকেও ব্যাখ্যা দাবি করেন তিনি।
তিনি বলেন, রাঙ্গাকে শুধু ক্ষমা চাইলে হবে না। এসব কথা সুস্থ লোক বলতে পারে না। এতো বিপ্লবী যদি হতেন তবে মন্ত্রী থেকে চলে যেতেন। আশা করি, জাতীয় পার্টি এ নিয়ে একটা ব্যাখ্যা দেবে। রাঙ্গার এ ধরনের বক্তব্য রাজনীতি, গণতন্ত্রের জন্য দুঃখজনক; তাকে ক্ষমা চাইতে হবে।
তাহজীব আলম সিদ্দিকী বলেন, রাঙ্গা অর্বাচীন চিফ হুইপ। …নিঃশর্তভাবে তার বক্তব্য প্রত্যাহার করতে হবে, ক্ষমা চাইতে হবে।
শহীদ নূর হোসেন ও গণতন্ত্র নিয়ে মসিউর রহমান রাঙ্গার সাম্প্রতিক বক্তব্যের প্রসঙ্গ টেনে কাজী ফিরোজ রশীদ বলেন, বিরোধীদলীয় চিফ হুইপের বক্তব্য দিয়ে চাঞ্চল্য সৃষ্টি হয়েছে। তার বক্তব্য ভাইরাল হয়ে গেছে। তবে এই বক্তব্য জাতীয় পার্টির বক্তব্য নয়। এটা কোনো রাজনৈতিক বক্তব্য হতে পারে না। এটা রাঙ্গার নিজস্ব বক্তব্য হতে পারে। ওই বক্তব্যের জন্য জাতীয় পার্টি লজ্জিত, আমরা দুঃখিত এবং আমরা এর জন্য অপমাণিত বোধ করছি। এই বক্তব্য আমরা ঘৃণাভরে প্রত্যাখ্যান করছি। এটা তার ব্যক্তিগত, দল তার দায়িত্ব নেবে না।
জাতীয় পার্টির মুজিবুল হক চুন্নু বলেন, আমাদের পার্টির চেয়ারম্যান এখানে আছেন। বিরোধী দলীয় নেতার সঙ্গে গতরাতে আমার কথা হয়েছে। রাঙ্গা যে দিয়ে বক্তব্য দিয়েছেন- এই বক্তব্যটি জাতীয় পার্টি দলীয়ভাবে ওন করে না। এটা একান্তই ব্যক্তিগত। এই বক্তব্যটা তিনি কেন দিয়েছেন- এই সংসদের সদস্য হিসেবে তিনিই সংসদে ব্যাখ্যা দেবেন