বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) শিক্ষার্থী আবরার ফাহাদ হত্যা মামলার বিচার দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে করার ইঙ্গিত দিয়েছেন আইনমন্ত্রী আনিসুল হক।
তিনি বলেন, সব আইনি বাধ্যবাধকতা শেষ করে আবরার হত্যা মামলার দ্রুত বিচার করা হবে। আগামী সোমবারের মধ্যে প্রসিকিউশন টিমকে এ মামলা গ্রহণ করতে বলব।
আজ বুধবার সচিবালয়ে আবরার হত্যা মামলার চার্জশিট প্রসঙ্গে প্রতিক্রিয়ায় সাংবাদিকদের এসব কথা বলেন আনিসুল হক।
তিনি বলেন, ‘এ মর্মান্তিক হত্যাকাণ্ড যখন ঘটে তখনই বলেছিলাম যে, তদন্ত শেষ হওয়ার পর অভিযোগপত্র যখন আদালতে সাবমিট করা হবে, তারপর দায়িত্ব পড়বে প্রসিকিউশন টিমের ওপর। এ মামলা বিচারিক আদালতে আসার পরই যেন কার্যক্রম শুরু করা যায় এজন্য একটা প্রসিকিউশন টিম ঠিক করে রাখা হয়েছে।’
আইনমন্ত্রী বলেন, ‘আপনারা বলেন এখন পর্যন্ত আমি খবর পাইনি, তবে আমি খবর নেব অভিযোগপত্র (চার্জশিট) চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট কোর্টে দাখিল করা হয়েছে কি না। দাখিল করার পর কিছু ফরমালিটিজ রয়েছে। যেমন- যদি পলাতক আসামি থাকে, তাহলে তাকে হাজির হওয়ার জন্য একটা আদেশ দিতে হবে। সে যদি আদেশে হাজির না হয়, তাহলে তার অনুপস্থিতিতে বিচার করা যায়। সে জন্যও একটা গেজেট নটিফিকেশন করতে হবে। এসব ফরমালিটিজগুলো যত শিগগির সম্ভব আমরা শেষ করব এবং এ দায়িত্ব আগামী সোমবারের মধ্যে প্রসিকিউশন টিমকে গ্রহণ করতে বলব। এসব ফরমালিটিজ শিগগিরই শেষ করতে বলব।’
তিনি আরও বলেন, ‘তারপরও একটা কথা বলে রাখতে চাই, আইনে কিন্তু বলা আছে- একটা সময় দিতে হবে। এই সময়ের ওপর দিয়ে কিন্তু আমরা যেতে পারব না। সেই আইনি বাধ্যবাধকতা মেনেই যত দ্রুত করা যায় সেটা করা হবে।’
আবরার হত্যা মামলার বিচার দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে করা প্রসঙ্গে আনিসুল হক বলেন, ‘বিচারিক আদালতে দ্রুত বিচার আইনে এ মামলাটার বিচার করার জন্য আমি স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে অনুরোধ করব। কারণ স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকেই এ আবেদন আসতে হয়। এক্ষেত্রে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় দ্রুত বিচার আইনে এ মামলা পরিচালনার জন্য আবেদন করলে রায় দ্রুত দেয়ার জন্য দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে বিচারকার্য দেয়া হবে।’
তিনি বলেন, ‘দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে বিচার করা হলে এর প্রথম সময়টা হচ্ছে ৯০ দিন, তারপর সময় দেয়া হয় ৩০ দিন। মোট ১২০ দিনের মধ্যে বিচারকাজ শেষ করতে না পারলে তৃতীয়বার ১৫ দিন সময় পাবে। অর্থৎ মোট ১৩৫ দিনে বিচারকাজ শেষ করতে হবে।’
অপর এক প্রশ্নের জবাবে আইনমন্ত্রী বলেন, ‘বিজ্ঞ ম্যাজিস্ট্রেট যে সময় বেঁধে দেবে পলাতক আসামিরা যদি আত্মসমর্পণ না করে, তাহলে তাদের পলাতক দেখিয়ে বিচার কাজ শেষ করা হবে। কিন্তু প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশক্রমে এবং জনগণের চাওয়া অনুযায়ী এ হত্যাকাণ্ডের বিচার যথাসময়ে করা হবে। জনগণ যখন চেয়েছে নুসরাত হত্যাকাণ্ডের বিচার দ্রুত সম্পন্ন করা হয়েছে।’
এদিকে আজ বুধবার বুয়েটছাত্র আবরার ফাহাদ হত্যা মামলায় ২৫ জনকে আসামি করে আদালতে অভিযোগপত্র দিয়েছে গোয়েন্দা পুলিশ।
ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) অতিরিক্ত কমিশনার মনিরুল ইসলাম বলেন, এই ২৫ জনের মধ্যে ১১ জন আবরারকে হত্যায় সরাসরি অংশ নেয়। সেখানে উপস্থিতি এবং অন্যভাবে সম্পৃক্ততার কারণে বাকি ১৪ জনকে অভিযোগপত্রে আসামি করা হয়েছে।
তিনি বলেন, শিবির হিসেবে সন্দেহের বিষয়টি ছিল আবরারের ওপর নির্যাতনের ‘একটি কারণ’। আসলে বুয়েট ছাত্রলীগের ওই নেতাকর্মীরা অন্যদের মধ্যে আতঙ্ক সৃষ্টির জন্য ‘উচ্ছৃঙ্খল আচরণে অভ্যস্ত’ হয়ে গিয়েছিল।
- আরও পড়ুন >> আবরার হত্যায় একক কোনো কারণ পাওয়া যায়নি
বুধবার দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে ঢাকার মুখ্য মহানগর হাকিম আদালতে এ অভিযোগপত্র জমা দেন মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা গোয়েন্দা পরিদর্শক ওয়াহিদুজ্জামান।