দেশে ফিরলেন গৃহকর্মী সুমিসহ ৯১ নির্যাতিত নারী

মত ও পথ রিপোর্ট

অবশেষে দেশে ফিরলেন সুমি

অবশেষে দেশে ফিরলেন সৌদি আরবে নির্যাতনের শিকার গৃহকর্মী সুমি আক্তার। আজ শুক্রবার সকাল সাড়ে ৭টায় এয়ার অ্যারাবিয়ার জি৯-৫১৭ ফ্লাইটে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে এসে পৌঁছান সুমি। একই সঙ্গে সৌদি থেকে দেশে ফিরেছেন নির্যাতনের শিকার আরও ৯১ নারী গৃহকর্মী।

বিমানবন্দরে সুমিকে গ্রহণ করেন ওয়েজ আর্নার্স কল্যাণ বোর্ডের পরিচালক জহিরুল ইসলাম। তিনি বলেন, বিমানবন্দরে আনুষ্ঠানিকতা শেষে তাকে পঞ্চগড়ের গ্রামের বাড়ির উদ্দেশ্যে পাঠানো হয়েছে। স্থানীয় প্রশাসন ও ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানের মাধ্যমে সুমিকে মা-বাবার কাছে হস্তান্তর করা হবে বলে জানান তিনি।

universel cardiac hospital

এদিকে সুমির দেশে ফেরার খবরে বিমানবন্দরে অপেক্ষা করছিলেন গণমাধ্যমকর্মীরা। সেখানে উপস্থিত ছিলেন তাঁর স্বামী নুরুল ইসলাম ও তাঁদের দুই সন্তানও। তাঁদের সবাইকে এড়িয়ে টার্মিনাল-১ দিয়ে সুমিকে বের করে নিয়ে যাওয়া হয় বিমানবন্দর থেকে। পরে নুরুল ইসলামও সন্তানদের নিয়ে পঞ্চগড়ের উদ্দেশে রওনা হন।

গত ৩০ মে আশুলিয়ার চারাবাগ এলাকার নূরুল ইসলামের স্ত্রী সুমি ‘রূপসী বাংলা ওভারসিজ’র মাধ্যমে সৌদি আরব যান। সেখানে যাওয়ার পর থেকেই স্বজনদের কাছে তার ওপর নির্যাতনের ঘটনা বলতেন সুমি। দালালরা বিদেশে পাঠানোর কথা বলে তাকে যে বিক্রি করে দিয়েছে সে কথা জানতেন না সুমি। সৌদি যাওয়ার সপ্তাহখানেক পর থেকে শুরু হয় তাঁর ওপর মারধর, যৌন হয়রানিসহ নানা নির্যাতন।

গত অক্টোবর মাসের মাঝামাঝি ফেসবুকে কান্নাজড়িত কণ্ঠে নিজের ওপর পাশবিক নির্যাতনের কথা বলে সুমি তাকে দেশে ফিরিয়ে আনার জন্য প্রধানমন্ত্রীর কাছে অনুরোধ জানান।

পরে ভিডিওটি ভাইরাল হয়। এ নিয়ে গত দুই দিনে কয়েকটি গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশ হলে সুমি আক্তারকে ফেরাতে পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী মো. শাহরিয়ার আলম সংশ্লিষ্টদের নির্দেশনা দেন। পরে সৌদি আরবে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূতের কার্যালয় থেকে কর্মকর্তারা সুমির সঙ্গে যোগাযোগ করেন। এরপরই তাঁকে পুলিশের সহায়তায় উদ্ধার করা হয়।

সুমির পরিবার সূত্রে জানা যায়, গত সোমবার রাতে তাঁকে তাঁর কর্মস্থল জেদ্দার দক্ষিণ-দক্ষিণে নাজরান এলাকার কর্মস্থল থেকে উদ্ধার করে থানা হেফাজতে নিয়ে যাওয়া হয়। পরদিন মঙ্গলবার সন্ধ্যা ৭টার দিকে এসব তথ্য গণমাধ্যমকে জানান সুমির স্বামী নূরুল ইসলাম।

নূরুল ইসলাম ওইদিন বলেছিলেন, ‘ঘণ্টাখানেক আগে (মঙ্গলবার বাংলাদেশ সময় সন্ধ্যা ৬টার দিকে) সুমির সঙ্গে আমার কথা হয়েছে। সে ভালো আছে। সুমি বলেছে, তাকে সৌদি পুলিশ উদ্ধার করে সৌদিতে নিযুক্ত বাংলাদেশ সরকারের কর্মকর্তাদের কাছে হস্তান্তর করেছে। সে আগামী দুই তিন দিনের মধ্যে দেশে চলে আসতে পারবে। তার পাওনাদিও পরিশোধ করে দিয়েছে সুমিকে কাজে নিযুক্ত করা ব্যক্তি। তবে সুমি তার মালামাল আনতে পারেনি।’

জানা যায়, রাতে সুমিকে থানায় নিয়ে আসা হলেও তার ওখানকার নিয়োগকর্তা (কফিল) তাঁকে ছাড়তে চাইছিলেন না। তিনি সুমিকে আরও রাখতে চাচ্ছিলেন। কারণ ওখানে সুমিকে নিতে তাঁর অনেক টাকা খরচ হয়েছে। ওই টাকার কী হবে। সুমিকে ছাড়তে হলে যারা বাংলাদেশ থেকে মধ্যস্থতা করে (রাজধানী ঢাকার রূপসী বাংলা ওভারসিজ) তাঁকে সেখানে পাঠিয়েছে, তাদের কাছ থেকে অর্থ আদায় করে দিতে চাপ দিচ্ছিলেন তিনি।

শেয়ার করুন

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে