প্রলয়ংকরী ঘূর্ণিঝড় সিডরের এক যুগ

মত ও পথ প্রতিবেদক

সিডর
ফাইল ছবি

এক যুগ (১২ বছর) আগে ২০০৭ সালের ১৫ নভেম্বর রাতে দেশের উপকূলীয় ১১টি জেলায় আঘাত হানে প্রলয়ংকরী ঘূর্ণিঝড় সিডর। ঘণ্টায় ২৬০ কিলোমিটার বেগে বাতাসের সঙ্গে স্বাভাবিক জোয়ারের চেয়ে ১০ থেকে ১২ ফুট উচ্চতার পানি আঘাত হেনেছিল দক্ষিণাঞ্চলের কয়েকটি জেলায়। মুহূর্তের মধ্যে লণ্ডভণ্ড হয়ে যায় দেশের দক্ষিণাঞ্চলের বিস্তীর্ণ এলাকা।

মাত্র আধা ঘণ্টার তাণ্ডবেই লণ্ডভণ্ড হয়ে যায় উপকূল। প্রবল তোড়ে বেড়িবাঁধ উপচে এবং ভেঙে পানি ঢুকে চেনা জনপদ মুহূর্তে পরিণত হয় অচেনা এক ধ্বংসস্তূপে। তীব্র ঝড় আর জলোচ্ছ্বাসে কেড়ে নেয় উপকূলের হাজারও মানুষের প্রাণ। ওই দিনের ভয়াবহতা মনে পড়লে এখনো অনেকে আঁতকে ওঠেন।

universel cardiac hospital

ভয়াবহ এই ঝড়ের পর গত ১২ বছরে অনেকটা ঘুরে দাঁড়িয়েছেন উপকূলীয় জেলা বরগুনার মানুষ। পরিবর্তন হয়েছে তাদের চিন্তা ভাবনার। এ কারণে এখন ঝড়ে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ কমেছে বলে মনে করেন সংশ্লিষ্টরা।

১২ বছর আগের এই দিনে সিডরের তাণ্ডবে মৃত উপত্যকায় পরিণত হয় দক্ষিণাঞ্চলের ৩০ জেলার দুই শতাধিক উপজেলা। প্রধানত দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের উপকূলীয় জেলাগুলোতে আঘাত হানে সিডর। সরকারিভাবে মৃতের সংখ্যা বলা হয় সাড়ে তিন হাজারের মতো।

বিধ্বস্ত হয় ছয় লাখ মানুষের বসতবাড়ি, ফসলের ক্ষেত। ভয়াবহ বিপর্যয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয় সড়ক, নৌ, বিদ্যুৎ এবং টেলিযোগাযোগসহ আধুনিক সভ্যতার সার্বিক অবকাঠামো। সংবাদপত্র ও টেলিভিশনে প্রকৃতির এ ধ্বংসযজ্ঞের চিত্র দেখে শিউরে ওঠে গোটা বিশ্ব। সাহায্যের হাত বাড়ায় দেশি-বিদেশিরা।

সময়ের আবর্তনে বছর ঘুরে এসেছে সেই দিনটি। স্মৃতিচারণে চাপা কান্না আর দীর্ঘশ্বাস নিয়ে হারিয়ে যাওয়া স্বজনদের উদ্দেশে বহু জায়গায় আয়োজন করা হয় দোয়া ও মোনাজাতের। প্রলয়ংকারী সিডরের এক যুগ পার হলেও সেদিনের ভয়াল দৃশ্য আজও তাড়িয়ে বেড়ায় উপকূলবাসীকে।

ভয়াল সিডরের এক যুগ অতিবাহিত হলেও অনেকে হারানো স্বজনদের এখনো ফিরে পায়নি। অনেকে স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসতে পারেনি। প্রতিবছর উপকূলের মানুষ এ দিনটিকে সিডর দিবস হিসেবে পালন করে।

বাগেরহাটের শরণখোলা উপজেলার বলেশ্বর নদের বগীবন্দর এলাকার বাসিন্দা মুজিবুর রহমান সেদিনের কথা মনে করে বলেন, ‘এক যুগ আগের হওয়া প্রলয়ংকরী ঘূর্ণিঝড় সিডরের জলোচ্ছ্বাসের কথা মনে পড়লে এখনো আঁতকে উঠি। জলোচ্ছ্বাসে সাউথখালী ইউনিয়নের বগী, গাবতলা ও সাউথখালী গ্রামেই আট শতাধিক মানুষের প্রাণহানি হয়। তারপর থেকে আমাদের দাবি ছিল এই এলাকায় একটি টেকসই বেড়িবাঁধ নির্মাণের। সরকার আমাদেরকে জলোচ্ছ্বাস থেকে রক্ষা করতে বাঁধ নির্মাণের উদ্যোগ নেওয়ায় আমরা দারুণ খুশি। কিন্তু বাঁধ নির্মাণকাজের মেয়াদ ইতিমধ্যে শেষ হয়ে গেছে, তবে কাজ এখনো চলছে। আমরা আর ত্রাণ চাই না, আমরা চাই এই বাঁধটি যেন নদী শাসন করে টেকসই করা হয়।’

এদিকে সিডরের এক যুগ অতিবাহিত হলেও ঝালকাঠির সুগন্ধা ও বিষখালী নদী তীরবর্তী এলাকায় বেড়িবাঁধ নির্মাণ না হওয়ায় এখনো দুর্যোগ ঝুঁকিতে দিন পার করছে জেলার অনেক পরিবার। ২০০৭ সালের ১৫ নভেম্বরের ওই ঝড়ে অন্যান্য জেলার মতো জেলার উপকূলীয় চার উপজেলাকে লণ্ডভণ্ড করে দেয়। সিডরে জেলায় ঘর ও গাছের নিচে চাপা পড়ে মারা যায় অর্ধশতাধিক মানুষ। আহত হয় কয়েক হাজার। হতদরিদ্র পরিবারগুলো সিডরের ধকল কাটিয়ে উঠতে পারেনি বারো বছরেও। জেলার ৩২টি ইউনিয়নের ঘরবাড়ি, গাছপালা, ক্ষেতের ফসল, গবাদিপশু, হাঁস-মুরগি, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, সড়ক, বাঁধ সবকিছুই লণ্ডভণ্ড হয়ে যায়। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয় বিষখালী নদী তীরবর্তী এলাকার রাজাপুর ও কাঁঠালিয়া উপজেলার বেড়িবাঁধ সংলগ্ন পরিবারগুলো। বিধ্বস্ত হয় কয়েক শতাধিক সেতু, কালভার্ট ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান।

সদর উপজেলার পাড়েরহাট এলাকার বিষখালী নদীর বেড়িবাঁধ সংলগ্ন বাসিন্দা হাবিব বলেন, বেড়িবাঁধ থাকলে হয়তো বুলবুলের তাণ্ডব থেকে আমরা রক্ষা পেতাম। বেড়িবাঁধ না থাকার কারণে আমারসহ এই এলাকার কয়েকশ বিঘা জমির ফসল নষ্ট হয়েছে।

শেয়ার করুন

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে