মিয়ানমারের রাখাইন প্রদেশে রোহিঙ্গাদের ওপর দেশটির সেনাবাহিনীর অভিযানে গণহত্যাসহ মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটিত হয়েছে কিনা, তা তদন্তের জন্য অনুমোদন দিয়েছে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত (আইসিসি)।
প্রসিকিউশনের আবেদনে আইসিসির তিন বিচারক এই অনুমোদন দিয়েছেন বলে বৃহস্পতিবার আইসিসির এক বিবৃতিতে জানানো হয়েছে। খবর এএফপি, রয়টার্স ও দ্য গার্ডিয়ানের।
চেম্বারে রয়েছেন- বিচারপতি ওলগা কারবুসিয়া, চেম্বারের প্রধান বিচারপতি রবার্ট ফ্রেম এবং বিচারপতি জেফ্রে হেন্ডারসন।
বিবৃতিতে বলা হয়, এটা বিশ্বাস করার যৌক্তিক ভিত্তি রয়েছে যে, ব্যাপকভাবে এবং/অথবা সিস্টেমেটিক সহিংস কর্মকাণ্ড ঘটানো হয়ে থাকতে পারে, যা মিয়ানমার ও বাংলাদেশ সীমান্ত পাড়ির পেছনে মানবতাবিরোধী অপরাধ হিসেবে গণ্য হয়ে থাকতে পারে। এজন্য বাংলাদেশ/মিয়ানমারের পরিস্থিতি তদন্তের অনুমোদন দিয়েছে চেম্বার।
এখন প্রসিকিউটরের কার্যালয় বিভিন্ন সূত্র থেকে মিয়ানমার কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় তথ্যপ্রমাণ সংগ্রহ করবে। তথ্যপ্রমাণ সংগ্রহ শেষে সংশ্নিষ্ট অপরাধীদের বিরুদ্ধে সমন বা গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারির আবেদন জানানো হবে। মিয়ানমারের জেনারেলদের বিরুদ্ধে সমন বা গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি হতে পারে। তবে তথ্য সংগ্রহ কতদিন চলবে তা আইনে নির্দিষ্ট করা নেই।
২০১৭ সালের ২৫ আগস্ট মিয়ানমারের রাখাইনে নিরাপত্তা বাহিনীর বেশ কিছু স্থাপনায় ‘বিদ্রোহীদের’ হামলার পর রোহিঙ্গাদের গ্রামে গ্রামে শুরু হয় সেনাবাহিনীর অভিযান। অভিযানের নামে ধর্ষণ, গণহত্যা ও বাড়িঘর আগুনে পুড়িয়ে দেয় মিয়ানমার সেনাবাহিনী। প্রাণ বাঁচাতে বাংলাদেশের অভিমুখে ঢল নামে রোহিঙ্গাদের।
গত দুই বছরে সাত লাখের বেশি রোহিঙ্গা বাংলাদেশে এসে আশ্রয় নিয়েছে। সবমিলিয়ে বাংলাদেশের ১১ লাখের মতো রোহিঙ্গা অবস্থান করছে।
পালিয়ে আসার পর রোহিঙ্গাদের কথায় উঠে আসে নির্বিচারে হত্যা, ধর্ষণ, জ্বালাও-পোড়াওয়ের ভয়াবহ বিবরণ, যাকে জাতিগত নির্মূল অভিযান বলে জাতিসংঘ।
২০১৮ সালের সেপ্টেম্বরে রোহিঙ্গাদের বিতাড়নে মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটনের জন্য মিয়ানমারের বিচারের এখতিয়ার আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের রয়েছে বলে সিদ্ধান্ত আসে। যারপরেই শুরু হয় প্রাথমিক তদন্ত।
আইসিসির কৌঁসুলি ফাতু বেনসুদা গত বছর মিয়ানমার থেকে রোহিঙ্গাদের বাংলাদেশে যাওয়ার কারণ খুঁজতে পূর্ণ তদন্ত করতে চেয়ে আবেদন করলে আইসিসি তা গ্রহণ করেন। তবে মিয়ানমার আইসিসির সদস্য না হওয়ায় তাদের বিচারের আওতায় আনা যাবে কি-না, সে বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে গত বছরের এপ্রিলে আইসিসির কাছে একটি শুনানি আয়োজনের আবেদন করেছিলেন তিনি। গত বছরের ৬ সেপ্টেম্বর এ ব্যাপারে ইতিবাচক সিদ্ধান্ত জানান আইসিসি।
বিচারকদের অনুমোদন দেওয়ায় রোহিঙ্গাদের ওপর নৃশংতার অভিযোগের তদন্তে এটাই হচ্ছে প্রথম কোনো আন্তর্জাতিক আদালতের উদ্যোগ।
তারও দুই সপ্তাহ পর ১৮ সেপ্টেম্বর প্রাথমিক তদন্ত শুরুর ঘোষণা দেন বেনসুদা। সে সময় তিনি জানান, মিয়ানমার সেনাবাহিনীর যেসব কর্মকাণ্ডের কারণে রোহিঙ্গারা দেশ ছাড়তে বাধ্য হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে- যেমন মৌলিক অধিকার থেকে বঞ্চিত করা, হত্যা, যৌন সহিংসতা, গুম, ধ্বংস ও লুণ্ঠনের বিষয়ে তদন্ত করবেন তিনি।