নিষেধাজ্ঞার মধ্যেই দেশ ছেড়েছেন হুইপ সামশুল

মত ও পথ প্রতিবেদক

দেশ ছেড়েছেন হুইপ সামশুল

দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) নিষেধাজ্ঞার মধ্যেই দেশ ছেড়েছেন সংসদে সরকারদলীয় হুইপ সামশুল হক চৌধুরী। ক্যাসিনোবিরোধী অভিযান নিয়ে বিতর্কিত মন্তব্য করে সমালোচিত চট্টগ্রাম-১২ (পটিয়া) আসনের এই সাংসদ গতকাল শুক্রবার বিদেশে গেছেন বলে বিশ্বস্ত সূত্রে জানা গেছে। তবে তিনি কোন দেশে গেছেন তা নিশ্চিত হওয়া যায়নি।

গত সেপ্টেম্বরে আলোচিত ক্যাসিনোবিরোধী অভিযান শুরু হওয়ার পর চট্টগ্রাম আবাহনীসহ বিভিন্ন ক্লাবে র‌্যাব অভিযান চালায়। এ নিয়ে ‘বিরূপ’ মন্তব্য করেন হুইপ সামশুল হক চৌধুরী।

universel cardiac hospital

অভিযানের সমালোচনা করে হুইপ বলেন, চট্টগ্রামে আবাহনীসহ অন্যান্য ক্লাবের কার্ডধারী মেম্বাররা চাঁদা দিয়ে নিজেরাই তাস খেলে। সেই টাকায় ক্লাবের পরিচালন খরচ বহন করা হয়। এভাবে অভিযান চালানো হলে ক্লাবগুলো বন্ধ হয়ে যাবে। ছেলেপেলেরা ছিনতাই-চাঁদাবাজিতে লিপ্ত হবে। খেলাধুলা বন্ধ হয়ে যাবে। এটা তো কাম্য নয়। তাছাড়া সরকার ক্লাবগুলোকে কোনো টাকা দেয় না।

তার এই বক্তব্যের সমালোচনা করেন খোদ সরকারি দলের নেতারাও। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বারবার ঘোষণা দিচ্ছেন, ক্যাসিনোসহ দুর্নীতি-অপকর্মে জড়িত যেই হোক তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে, তা তিনি দলের লোক হলেও।

এদিকে হুইপের বক্তব্যের পর সাইফ আমিন নামে আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়নে কর্মরত (যিনি একসময় চট্টগ্রামে কাজ করেছেন) এক পুলিশ পরিদর্শক ফেসবুক পোস্টে দাবি করেন, আবাহনী ক্লাবের জুয়া থেকে পাঁচ বছরে হুইপ সামশুল হক চৌধুরী ১৮০ কোটি আয় করেছেন। তিনি কোন ধরনের জুয়া থেকে কী পরিমাণ আয় হয় তার বিস্তারিত বিবরণও দেন। একইভাবে থানার ওসিরা জুয়ার আসর থেকে কী পরিমাণ টাকা আয় করেন তারও হিসাব তুলে ধরেন ওই পুলিসশ কর্মকর্তা। এ নিয়ে তোলপাড় সৃষ্টি হয় সর্বত্র।

এ সময়ে আরও অনেকের দুর্নীতি নিয়ে সংবাদমাধ্যমে খবর ফলাও হয়। গত ২৩ অক্টোবর হুইপ সামশুল হক, কয়েকজন সংসদ সদস্য ও কাউন্সিলর, প্রকৌশলীসহ ২২ জনের দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়। তাদের দেশত্যাগের বিষয়ে নজর রাখতে এসবির বিশেষ পুলিশ সুপার (ইমিগ্রেশন) বরাবর চিঠি দেয় দুদক। ক্যাসিনোকাণ্ড, মানি লন্ডারিং ও অবৈধভাবে সম্পদ অর্জনের বিষয়ে অনুসন্ধানের অংশ হিসেবে দুদক এ ব্যবস্থা নেয়।

চিঠিতে দুদক জানায়, সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে দেশে মানি লন্ডারিংসহ বিদেশে অর্থ পাচারের অভিযোগ আছে। এ বিষয়ে অনুসন্ধানে প্রাথমিক সত্যতা পাওয়া গেছে। তারা দেশ ছেড়ে যাওয়ার চেষ্টা করছেন বলে পাওয়া গেছে। তারা যাতে দেশ ছেড়ে যেতে না পারেন সে বিষয়ে কার্যকর ব্যবস্থা নিতে অনুরোধ করা হয় চিঠিতে।

এরপর গত ২৮ অক্টোবর হুইপ সামশুল হক চৌধুরীসহ ৫০ জনের ব্যাংক হিসাবের তথ্য চেয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকে চিঠি দেয় দুদক। দুদকের পরিচালক সৈয়দ ইকবাল হোসেন স্বাক্ষরিত চিঠিতে অভিযুক্তদের ব্যাংক অ্যাকাউন্ট, টাকার পরিমাণ, কবে কখন কার কার সঙ্গে লেনদেন হয়েছে- এসব তথ্য জানতে চাওয়া হয়।

এর ১৮ দিনের মাথায় গতকাল হুইপ দেশ ছাড়েন। নিষেধাজ্ঞার মধ্যে তার দেশত্যাগ নিয়ে নানা প্রশ্ন উঠেছে নানা মহলে।

শেয়ার করুন

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে