ডলারের বিপরীতে টাকার মান কমাল কেন্দ্রীয় ব্যাংক। আজ সোমবার প্রতি ডলারের দাম ৫ পয়সা বাড়ানো হয়েছে। আন্তঃব্যাংক মুদ্রাবাজারে প্রতি ডলার কিনতে এখন খরচ করতে হবে ৮৪ টাকা ৮০ পয়সা, যা এক বছর আগের তুলনায় দশমিক ৯২ টাকা বেশি।
গত বছর একই সময়ে ডলারের দাম ছিল ৮৩ টাকা ৮৮ পয়সা। আমদানি দায় শোধ করতে এ হার বেঁধে দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এতে টাকার বিপরীতে আরও শক্তিশালী হলো ডলার।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ডলারের দাম বাড়ায় ক্ষতিগ্রস্ত হবেন আমদানিকারক ও সাধারণ ভোক্তারা। কারণ পণ্য আমদানির ব্যয় বেড়ে যাবে। বিশেষ করে আমদানিনির্ভর খাদ্যপণ্যের দাম বেড়ে যাবে। তবে লাভবান হবেন রফতানিকারক ও রেমিট্যান্স প্রেরণকারীরা।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য বলছে, আন্তঃব্যাংক মুদ্রাবাজারে গতকাল রোববার এক ডলার ৮৪ টাকা ৭৫ পয়সায় কিনতে পারলেও সোমবার খরচ করতে হয়েছে ৮৪ টাকা ৮০ পয়সা। তবে সাধারণ মানুষ, যারা ভ্রমণ করতে বিদেশ যাচ্ছেন তাদের ডলার কিনতে হচ্ছে ৮৭ টাকার কাছাকাছি দরে।
এ বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. সালেহ উদ্দিন আহমেদ বলেন, ডলারের দাম বাড়ালে ক্ষতিগ্রস্ত হন আমদানিকারকরা। অন্যদিকে লাভবান হন রফতানিকারক ও রেমিট্যান্স প্রেরণকরীরা। ডলারের দাম বাড়লে আমদানি করা পণ্যের দাম বেড়ে যায়। ফলে মূল্যস্ফীতির ওপর চাপ পড়ে। পণ্যের দাম বাড়লে সাধারণ মানুষের জীবনযাত্রার ব্যয় বেড়ে যায়। স্বল্প আয়ের মানুষ সমস্যায় পড়ে।
এখন কেন্দ্রীয় ব্যাংককে ডলারের দাম বাড়ানোর লাভ-ক্ষতি কী এটি পর্যবেক্ষণ করতে হবে বলে জানান প্রবীণ এ অর্থনীতিবিদ।
ডলারের দাম বাড়ার প্রসঙ্গে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের মুখপাত্র ও নির্বাহী পরিচালক মো. সিরাজুল ইসলাম বলেন, বাজারে ডলারের চাহিদার কারণে দাম বাড়ানো হয়েছে। এতে রেমিট্যান্স প্রেরণকারীরা লাভবান হবেন। রফতানিকারকরাও এর সুবিধা ভোগ করবেন। তবে আমদানিতে কিছুটা প্রভাব পড়বে। সমসাময়িক সবকিছু বিবেচনায় নিয়েই কেন্দ্রীয় ব্যাংক এ সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
কেন্দ্রীয় ব্যাংক সূত্রে জানা গেছে, চলতি অর্থবছরের প্রথম মাস জুলাইয়ে ব্যাংকগুলোর কাছে বাংলাদেশ ব্যাংক ৩ কোটি ৬০ লাখ ডলার বিক্রি করেছে, আগস্টে বিক্রি করে ২ কোটি ৩০ লাখ ডলার। সেপ্টেম্বরে কোনো ডলার বিক্রি করেনি। সব মিলিয়ে চলতি অর্থবছরের শুরু থেকে ১৮ নভেম্বর (সোমবার) পর্যন্ত ২৪ কোটি ডলার বিক্রি করে বাংলাদেশ ব্যাংক।
ব্যাংকসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, সাম্প্রতিক সময়ে ক্যাসিনো অভিযানসহ নানা কারণে একটি গোষ্ঠী ভ্রমণের নামে বিদেশে যাওয়ার প্রবণতা বেড়ে গেছে। এতে ডলারের ওপর চাপ পড়েছে। তবে এ চাপ ডলারের খোলাবাজারে বেশি পড়েছে। কারণ ব্যাংক থেকে ডলার কিনতে গেলে নানা প্রশ্নের মুখে পড়তে হয়। কিন্তু খোলাবাজার থেকে সহজে টাকা দিয়ে ডলার কেনা যায়।
এ প্রভাব ব্যাংকগুলোতেও পড়েছে। কারণ হিসেবে তারা বলেন, এখন আমদানি চাপ থাকায় হঠাৎ করে ডলারের চাহিদা বেড়ে গেছে। ব্যাংকগুলো তাৎক্ষণিক চাহিদা মেটাতে বাজার থেকে বেশি দামে ডলার কিনছে। পাশাপাশি আমদানি-রফতানির ভারসাম্য না থাকা, বিদেশে অর্থপাচারসহ নানা কারণে ডলারের বাজারে এ সংকট সৃষ্টি হয়েছে। ফলে দামও বাড়ছে।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের লেনদেনের ভারসাম্যের ওপর (ব্যালেন্স অব পেমেন্ট) প্রকাশিত পরিসংখ্যানের তথ্যানুযায়ী, চলতি (২০১৯-২০) অর্থবছরের প্রথম প্রান্তিকে (জুলাই-সেপ্টেম্বর) বাণিজ্যে ঘাটতি দাঁড়িয়েছে ৩৭১ কোটি ৭০ লাখ ডলার, যা বাংলাদেশি মুদ্রায় প্রায় ৩১ হাজার ৫০০ কোটি টাকা। একই সঙ্গে বহির্বিশ্বের সঙ্গে বাংলাদেশের চলতি হিসাবেও ঘাটতি দেখা দিয়েছে।
- লিবিয়ায় বিমান হামলায় ৫ বাংলাদেশি নিহত
- ইমার্জিং এশিয়া কাপ : গ্রুপ চ্যাম্পিয়ন হয়ে সেমিতে বাংলাদেশ
অর্থবছরের প্রথম দুই মাসে বহির্বিশ্বের সঙ্গে বাংলাদেশের চলতি হিসাবে উদ্বৃত্ত থাকলেও সেপ্টেম্বরে এসে তা ঋণাত্মক (-) হয়েছে। প্রথম প্রান্তিকে চলতি হিসাবে ঘাটতি দাঁড়িয়েছে ৬৭ কোটি ৮০ লাখ ডলার, যা আগের বছরের একই সময়ে ছিল ১৩১ কোটি ৬০ লাখ ডলার।
ব্যাংকগুলোর ঘোষিত মুদ্রা বিনিময় হার অনুযায়ী, ১৭ নভেম্বর বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংক, এবি ব্যাংক, বেসিক ব্যাংক ও পূবালী ব্যাংক নগদ ডলার বিক্রি করেছে সর্বোচ্চ ৮৬ টাকা ৯০ পয়সায়। এছাড়া ৮৬ টাকার ওপর নগদ ডলার বিক্রি করছে বেশিরভাগ ব্যাংক।